সুখসাগর পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে মেহেরপুরের চাষি সুখী। মেহেরপুরে ২ হাজার সালের দিকে প্রথম বীজের জন্য সুখসাগর পেঁয়াজচাষ শুরু করেছিলো সীমান্ত গ্রাম মুজিবনগর উপজেলার এক শিক্ষক। সেই থেকে সুখসাগর পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। এবারও মেহেরপুর জেলায় ১২৫ কোটি টাকার পেঁয়াজবীজ উৎপাদন হবে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা সুখসাগর পেঁয়াজ চাষকে ‘ব্লাক ডায়মন্ড চাষ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে সুখসাগর পেঁয়াজ চাষের জন্য সহনীয় তাপমাত্রা প্রয়োজন ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি। তবে অতিবৃষ্টি, ঘণ কুয়াশা ও শীলাবৃষ্টি হলে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে মানসম্পন্ন এবং চাহিদার মতো ফলন হয়না বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান।
মেহেরপুরের মুজিবনগরে এবার সুখসাগর পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে বীজ উৎপাদনের জন্য চাষ হয়েছে ৩৭ হেক্টর জমিতে। সুখসাগর পেঁয়াজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রতিহেক্টরে ৫০ টন হিসেবে ৭৮ হাজার মেট্রিক টন। বীজের জন্য ৩৭ হেক্টরে সুখসাগর পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন হবে ২৫ হাজার কেজি। এ চাষে জমির লিজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক মিলে পেঁয়াজ ও বীজ উৎপাদন খরচ হয় প্রতিবিঘায় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা হিসেবে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৫৩ লাখ টাকা। এবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে চাষিদের মাঝে উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। যদিও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন বর্তমান বাজারদর স্থিতিশীল থাকলে লোকসান হবেনা ।
কৃষি বিভাগের মতে ২ হাজার সালে বাংলাদেশে প্রথম মেহেরপুরের মুজিবনগরে সুখসাগর পেঁয়াজচাষ করেন আবদুল হামিদ নামে এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। সেই চাষ সম্প্রারিত হয়ে মুজিবনগর ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় এখন চাষ হচ্ছে। চাষিরা বলছেন- বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশার কারণে পেঁয়াজে গুটি এসেছে কম। ফলে বিগত বছরের তুলনায় এবছর পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন কম হবে।
সরেজমিনে মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান, মহাজনপুর, আমদহ ও মোনাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে চাষিদের সাথে কথা বলে জানাগেছে- শুরুতে পেঁয়াজের কদম দেখে খুশিতে মন ভরে উঠেছিল। কিন্তু অতিবৃষ্টি, তীব্র শৈতপ্রবাহ, ঘণকুয়াশা কারণে পেঁয়াজ দানার কদমগুলো ছোট হয়েছে। শৈতপ্রবাহ, ঘণকুয়াশা ও অতিরিক্ত বৃষ্টির সাথে শীলাবৃষ্টিতে পেঁয়াজে ফলন কমে গেছে। এবছর পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন লক্ষমাত্রার চেয়ে কম উৎপাদন হবে। তবে বর্তমান বাজারদর অব্যাহত থাকলে পেঁয়াজ বীজ চাষিদের লোকানের কবলে পড়তে হবেনা।
মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের পেঁয়াজ বীজ চাষি নুরুল হক জানান, প্রকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ বছর পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন কমে গেছে। বিগত বছরের চেয়ে এবছর বীজ উৎপাদন কম হলেও লোকসান হবেনা।
মুজিবনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিসুজ্জামান খান বলেন- সুখসাগর পেঁয়াজ চৈত্রমাসের দিকে সংগ্রহ শুরু হবে। ততদিন পর্যন্ত আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চাষিরা লাভবান হবে। তিনি আরও জানান- বাংলাদেশে মুজিবনগরে প্রথম ২ হাজার সালে আবদুল হামিদ মাস্টার সুখসাগর পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে চাষ করেন। এ চাষ বাংলাদেশে সম্প্রসারিত হয়েছে। মুজিবনগরেই এবার ২৫ টন বীজ উৎপান হবে। প্রতিকেজি ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি করলেও ১২৫ কোটি টাকার বীজ বিক্রি হবে বলে কৃষি বিভাগ আশা করছে।