বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১২ সালের পর সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হয়নি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২২

পদোন্নতি ও নিয়োগ সংকট
বিদ্যালয়ের পাঠদানসহ শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার নেতৃত্ব দেন প্রধান শিক্ষক। যদিও বছরের পর বছর প্রধান শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ পদটি শূন্য রেখেই চলছে দেশের কয়েক হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক কার্যক্রমের নেতৃত্ব ও তদারকিতে বেশ স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১২ সালের পর আর সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। বিলম্বিত হয়েছে সহকারী শিক্ষকের পদোন্নতিও। কয়েক বছর আগে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া শুরু হয়েছে প্রধান শিক্ষক। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে শূন্য পদ দিয়ে অনলাইনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালানো গেলেও, নিয়মিত স্কুল শুরু হওয়ায় পর দেখা দিতে শুরু করেছে নানা সমস্যা। একদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক না থাকায় প্রশাসনিক কাজে তৈরি হচ্ছে স্থবিরতা, অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারী শিক্ষক না থাকায় পাঠদান কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব দেখা দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্কুলগুলো। ফেনী, সাতক্ষীরা, বগুড়া ও বরিশালের তথ্য বলছে, দীর্ঘদিন ধরে জনবল নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ থাকায় এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে।
ফেনীর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য বলছে, ফেনীর ছয় উপজেলায় ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫৩ জন প্রধান শিক্ষক ও ২২১ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। একই ধরনের পরিস্থিতি দেখা গেছে সাতক্ষীরায়ও। সাতক্ষীরা জেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় ১ হাজার ৯৫টি সরকারি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে ১১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে, যা মোট স্কুলের ১০ শতাংশেরও বেশি। বগুড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১ হাজার ৬০১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। জেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তহমিনা খাতুন জানান, এর মধ্যে ৩০০টি পদ শূন্য রয়েছে। অন্যদিকে বরিশাল জেলার ১০ উপজেলার ১ হাজার ৫৯২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৪২টিতেই নেই প্রধান শিক্ষক। জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার পাতারহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ হাজার ১৫৬ জন শিক্ষার্থীর অনুকূলে ২১ জন শিক্ষকের পদে রয়েছেন ২০ জন। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে গত তিন বছর। একইভাবে আরো ২৪১টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন। ২০১৯ সালের এপিএসসি অনুযায়ী, ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মোট শূন্য পদ ৭ হাজার ১৮টি। সহকারী শিক্ষকের মোট শূন্য পদ ২১ হাজার ৮১৪টি। তথ্যমতে, প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদের মধ্যে পদোন্নতিযোগ্য ৪ হাজার ১৬৬ জন (৬৫ শতাংশ) ও সরাসরি নিয়োগযোগ্য ২ হাজার ৮৫২ জন (৩৫ শতাংশ)।
বিভিন্ন স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাকালে শ্রেণী কার্যক্রম নিয়মিত না থাকায় শিক্ষক কর্মচারী সংকট থাকলেও তেমন কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। গত ১৪ মার্চ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি চালুর ঘোষণা করা হলে পরিপূর্ণ জনবল কাঠামো জরুরি হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদে জনবল কম থাকায় প্রশাসনিক ও শ্রেণী কার্যক্রমে প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রধান শিক্ষক না থাকায় সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে জোড়াতালির মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করায় তাতে গতি আসছে না। শিক্ষকশূন্যতাসহ নানাবিধ সংকটের কারণে জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের ভর্তি করাতে আগ্রহ হারাচ্ছে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা। আর নিম্নবিত্ত শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সরকারি প্রাথমিকে ভর্তি হলেও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও তত্ত্বাবধান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় দ্রুত শূন্য পদে প্রধান ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের প্রতি নিবিড় তত্ত্বাবধান বাড়াতে না পারলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংকট চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।
অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের শূন্যতায় অনেকটা দায়সারাভাবে সহকারী শিক্ষকরা পাঠদানের নামে সময় পার করছেন। শিক্ষক সংকটে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পাচ্ছে না। পাঠ্যসূচি অনুযায়ী পড়ালেখা নিয়েও হতাশায় রয়েছেন তারা। এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনেও পিছিয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মো. আনিসুর রহিম জানান, প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে শিক্ষিত নাগরিক গড়ে উঠবে না। তিনি দ্রুত শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। এছাড়া শিক্ষা খাতে আরো বেশি বাজেট রাখার আহ্বান জানান।
সাতক্ষীরা জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু হেনা মোস্তফা কামাল মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি স্কুল পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, উচ্চ আদালতে এ-সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন থাকায় নতুন করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। তবে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বরিশাল প্রাথমিক জেলা শিক্ষা অফিসার লতিফুর রহমান জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার পদমর্যাদায় উন্নীত হওয়ায় এখন পিএসসির মাধ্যমে সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। যে কারণে নতুন নিয়োগ এলেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শূন্য পদ পূরণ হয়ে যাবে।
ফেনী সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদোন্নতি ও নিয়োগ দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু প্রতি বছরই অনেক শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন। এতে দিন দিন শিক্ষক সংকট বাড়ছে। তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো কষ্টসাধ্য। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকায় তারা দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজ তেমন বোঝেন না। অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা ও জেলা কার্যালয় থেকে তাদের বারবার তাগাদা দেয়ার পরও সঠিকভাবে কাজ আদায় করা যায় না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম জানান, সরকারি বিধি মোতাবেক ৬৫ ভাগ সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পেয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। ৩৫ ভাগ নতুন নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে পদোন্নতি বন্ধ থাকায় দিন দিন প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর করোনা মহামারী শুরু হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রমের বাকি ধাপগুলো শুরু হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিয়োগ সম্পন্ন হলে শিক্ষক সংকট কেটে যাবে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।-বণিকবার্তা অন লাইন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com