প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অসহায় গোটা বিশ্ব। সেইসাথে বাংলাদেশও এর বাহিরে নয়। দেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। সীমিতাকারে খোলা রয়েছে দোকানপাট। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলছে সকল কার্যক্রম। করোনার আতঙ্কে মানুষ বাহিরে বের হচ্ছে কম। শহরের রাস্তা-ঘাট লোক শুন্য। একারণে বুটপালিশ আর পুরনো জুতা সেলাইয়ের কাজ পাচ্ছে না দিনাজপুরের হিলি শহরের মুচিরা।
হিলি স্থলবন্দরের বাজার-ঘাট রাস্তা ঘুরে দেখাগেছে বিভিন্ন স্থানে ছোট একটা বাক্স, চট বিছিয়ে বুটপালিশ আর জুতা সেলাইয়ের সরঞ্জাম সাজিয়ে বসে আছে মুচিরা। শহরে প্রায় ১৮ থেকে ২০ জন মুচির এই কর্ম করে চলায় তাদের সংসার।
কথা হয় হিলি চারমাথা মোড়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা এই পেশার শ্রী লিটন রবিদাসের সাথে। সে বলেন, কি করে চলব দাদা কোন কাজ-কাম নাই, খালি (শুধু) বসে বসে সময় পার করছি। লোকজন তো হারাইছে। মানুষের এখন আর জুতা পুরাতনও হচ্ছে না, ছিড়েও যায় না। সকাল থেকে বসে আছি কেউ জুতা ঠিকঠাক করতে আসে না। বর্তমান সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন দিন ৫০ আবার কোন দিন ১০০ টাকা উপার্জন হচ্ছে। এই স্বল্প আয় দিয়ে কি আর সংসার চলে? বাড়িতে বাবা-মা ছোট ভাই-বোন আর আমার স্ত্রীসহ দুই সন্তান নিয়ে বড় কষ্টে দিনাপাত করছি।
হিলি বাজারের ফলহাটিতে বসে থাকা একজন মুচি শ্রী রুবেল রবিদাস বলেন, করোনার কারণে মানুষ এখন বাজারেই আসা প্রায় বাদ দিছে। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে লোকজন বাজারে কেনাকাটা করতে আসছিল, একটু কাজ-কাম হয়েছিলো। ঈদ শেষ, বাজার ফাঁকা। আমাদের তো আর বাড়তি কোন আয় নাই, এই জুতা সেলাই করে বউ বাচ্চাদের নিয়ে চলি।
হিলি বোয়ালদাড় ইউনিয়নের বিশাপাড়া (বটতলী) গ্রামের শ্রী দ¦ীলিপ রবিদাসের সাথে কথা হয় তিনি জানান, কাজ না করলে ছেলে-মেয়েদের কি খাওয়াবো। পেটের দায়ে এই দোকানে বসা। করোনা আসার আগে প্রতিদিন ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা কামায় করতাম। এখন আর সেই কামায় নাই। দিনে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। বোয়ালদাড় ইউনিয়ন থেকে কোন ত্রাণ পায়নি। ২৫০০ টাকা দেওয়ার কথা বলে নাম ঠিকানা নিয়ে গেছে। এযাবৎ কোন টাকাও পায়নি।
এবিষয়ে উপজেলার ২ নং বোয়ালদাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেফতাউ জান্নাত মেফতার নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকারী ২৫০০ টাকা ইউনিয়নে এখনও দেওয়া শুরু হয়নি। যাদের নাম তালিকায় করা হয়েছে তাদের মোবাইল নাম্বারে টাকা যাবে। যদি দ্বীলিপ রবিদাসের নাম তালিকায় উঠে থাকে তাহলে অবশ্যই সে এই টাকা পাবে।
এএমএস/প্রিন্স/স্বদেশ