শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৪:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বিশ্বমানের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে : রাষ্ট্রপতি রাসূল (সা.)-এর সীরাত থেকে শিক্ষা নিয়ে দৃঢ় শপথবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে—ড. রেজাউল করিম চৌদ্দগ্রামে বাস খাদে পড়ে নিহত ৫, আহত ১৫ চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ কোরবানির পশু বেশি আছে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী রাজনীতিবিদেরা অর্থনীতিবিদদের হুকুমের আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখতে চান: ফরাসউদ্দিন নতজানু বলেই জনগণের স্বার্থে যে স্ট্যান্ড নেয়া দরকার সেটিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার মালয়েশিয়ার হুমকি : হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক হামাসের অভিযানে ১২ ইসরাইলি সেনা নিহত আটকে গেলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্থ ছাড় গাজানীতির প্রতিবাদে বাইডেন প্রশাসনের ইহুদি কর্মকর্তার লিলির পদত্যাগ

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভুট্টা মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষকেরা, দ্বিগুণ লাভের আশা

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪

কুড়িগ্রমের উলিপুরে ভুট্টা কর্তন ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এবারে ভুট্টা চাষে দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন চাষিরা। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারো রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। এবার ভুট্টার ফলনও ভালো হওয়ায় ভুট্টা চাষিদের মুখে আনন্দের উল্লাস বইছে। কম খরচে অধিক মুনাফা অর্জনের স্বপ্ন নিয়ে এলাকার কৃষকেরা ভুট্টাচাষ করে থাকেন। এক সময় ভুট্টার চাহিদা না থাকায় এলাকায় ভুট্টা চাষ চোখে পড়তো না। কিন্তু উপজেলা একটি পৌরসভা ও তেরোটি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ও চরাঞ্চল গুলোতে কৃষকেরা ভুট্টা চাষে ব্যাপক আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। জানা যায়, এ উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়ন নদী বিধ্বস্ত। এই ৮টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে লোকজন তাদের জমা-জমিতে বিভিন্ন প্রকার রবি ফসলের চাষাবাদ করেছেন। ফলনও মোটামুটি ভালো হয়েছে। রবি ফসলকে ঘিরে নদী গর্ভে নিঃস্ব হওয়া হাজার হাজার মানুষের মুখে এখন সুখের হাসি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারে উপজেলায় ১টি পৌরসভা সহ ১৩টি ইউনিয়নের ভুট্টা চাষের লক্ষ্য মাত্রা ৭৮০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ৯৭৩ হেক্টর। যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়েও ১৯৩ হেক্টর বেশি অর্জিত হয়েছে। ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার ৬ শত ৬ মেঃ টন নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করছেন উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হবে। উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে উন্নত জাতের বীজ এবং সার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ভুট্টা চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ফলে এবছর ভুট্টার ফলন অনেকটাই ভালো হয়েছে। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও চরাঞ্চল গুলোতে ঘুরে দেখা যায়, ভূট্টা কাটাই মাড়াই ও ঘরে তোলার ধুম পড়েছে। বিস্তৃত ফসলের মাঠে ছেয়ে আছে ভুট্টায়। প্রায় সব ইউনিয়নে কমবেশি এখন ভূট্টার সমারোহ। এছাড়া চরাঞ্চল জুড়ে ভুট্টার সমারোহ চোখে পড়ার মতো। ক্ষেত থেকে ভুট্টা তুলতে চলছে নারী পুরুষ শ্রমিকের কর্মযজ্ঞ। বিশেষ করে চরাঞ্চলে নারী ও পুরুষ শ্রমিকেদের ভুট্টা তুলতে মনের আনন্দে বিভিন্ন ধরনের গান গাইতে দেখা যায়। কিষাণ কিষাণীরা ভুট্টা তুলতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। ভুট্টা চাষিরা জানান, অন্যান্য ফসলের চাষের চেয়ে ভুট্টা চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম হওয়ায় এই উপজেলায় অনেক কৃষক ভুট্টা চাষ করছেন। কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে ভুট্টা চাষে। ইরি ও বোরো ধানের পাশাপাশি ভুট্টা চাষে অধিক ফলন ও দাম ভালো পাওয়া সহ স্থানীয় বাজারে সহজেই ভুট্টা বিক্রির সুবিধা থাকায় খুশি কৃষক। এদিকে উপজেলায় ব্রাহ্মপুত্র ও তিস্তা নদ-নদীর করাল গ্রাসে হাজার হাজার পরিবার আবাদি জমি, বসতবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। এই নিঃস্ব পরিবার গুলো বাঁচার তাগিদে তাদের বংশীয় ঐতিহ্য ত্যাগ করে রিকশা, ভ্যান চলা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শ্রম বিক্রি করছিল। কিন্তু নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় জেগে উঠে ছোট ছোট অসংখ্য বালু চর। এই চরে রবি ফসল চাষ করা যায় নির্ভয়ে। তাই রবি মৌসুমে কৃষকরা ব্যাপক চাষাবাদে মাঠে নেমেছে কোমর বেঁধে। নদীর ধু-ধু বালু চরে যেখানে যে ফসল প্রযোজ্য তাই চাষাবাদ করেছে কৃষকরা। আবাদের ফলন খুব ভাল হওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এবারে বিভিন্ন চরাঞ্চলে বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভুট্টার চাষের মাধ্যমে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। বন্যার পানিতে পলি জমে জমি আরো উর্বর হয়েছে। তাই ভুট্টা চাষে বাম্পার ফলনে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। তিস্তার চরাঞ্চলের চর গোড়াইপিয়ার এলাকার ভুট্টা চাষি শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় পলি জমে জমি উর্বর হয়েছে। এছাড়াও এখানকার মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী হওয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর আমি ৬০ শতক জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। ৭০ মণ ভুট্টার আশা করছি। ভুট্টা ঘরে উঠা পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে ভুট্টা ১ হাজার টাকা মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে। সকল খরচ বাদ দিয়ে ৩৫ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন এ চাষি। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভুট্টা চাষিদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম, জাহাঙ্গির আলম, রফিকুল ইসলাম, বাচ্ছু মিয়া, আব্দুল মতিন ও মিজানুর রহমান সহ আরও অনেকে জানান, ভুট্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। ভুট্টার ফলনে তাদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যায়। এবারে ভুট্টার ফলনে ও দামে খুশি তারা। তবে তারা বলেন, জমিতে পানি সেচের জন্য ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন ও বিদ্যুৎ না থাকায় চড়ামূল্যে সোলার প্যানেলের মটরচালিত পাম্প দিয়ে সেচ দেয়া হয়েছে। এতে করে তাদের খরচের হার একটু বেশি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মো. মোশারফ হোসেন জানান, রবি ফসলের ৭০ ভাগই চরাঞ্চলে চাষাবাদ হয়। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভুট্টার চাষ হয়েছে। তাছাড়া চরাঞ্চলে বন্যার কারণে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভুট্টা চাষের মাধ্যমে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। চরাঞ্চল গুলোতে বন্যার পানিতে পলি জমে জমি আরো উর্বর হয়েছে। তাই ভুট্টা চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের হাতে উপযুক্ত সময়ে কৃষি উপকরণ ও পরামর্শ পাওয়ার কারণে লাভজনক আবাদ ভুট্টার চাষ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এবারে ভুট্টার ফলন ও দাম ভালো থাকায় ভুট্টা চাষিরা অনেক লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com