দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ দূষিত বাতাস গ্রহণ করছে। এ কারণে হাঁপানি, ফুসফুসের রোগ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে। তাই প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও পরিবেশে ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি প্লাস্টিক ব্যবহার বর্জন, পরিবেশের সুরক্ষা ও নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে স্বাস্থ্যের সুরক্ষা করা সম্ভব হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে দুপুরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
‘সুরক্ষিত বিশ্ব, নিশ্চিত স্বাস্থ্য’ এই প্রতিপাদ্যে সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ
মালেক এমপি বলেন, ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল, কিন্তু আমরা সেটার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি না। পৃথিবীর স্বাস্ব্য, প্রকৃতির স্বাস্থ্য ভালো না। সারা বিশ্বে উন্নতি হচ্ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবেশ, পানি, আবহাওয়া, মাটি সব নষ্ট হচ্ছে। এদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে, সচেতন হতে হবে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। জলবায়ূ দূষিত হওয়ার কারণে আমরা প্রতিনিয়ত অসুস্থ হচ্ছি। বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে, প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। এসব কিছুর প্রভাব পড়ছে মানবদেহে। এ থেকে আমাদের সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গত দুই বছরে করোনাকালে সকল মন্ত্রণালয়কে ছাড়িয়ে গেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। করোনা ব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম এবং সারাবিশ্বে অস্টম হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শারীরীক, মানসিক, সামাজিকভাবে যিনি সুস্থ, তিনি সেভৈাগ্যবান। আমরা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছি, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে গেছে। এখন স্বাস্থ্যবীমা করা খুব দরকার। বর্জ্য ব্যবস্থা আরও আধুনিক করতে হবে। প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করে চটের ব্যবহার বাড়াতে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘জলবায়ুর পরিবর্তনে সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়া, খরা, শব্দদূষণসহ বিভিন্ন কারণে সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। নগরায়নের কারণে শব্দদূষণ বেড়েছে। শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের হার বেড়েছে।’ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ‘উন্নয়ণের জন্য বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অনেকের ঈর্ষার কারণ। পরিবেশের ক্ষেত্রে আমাদের আরও অনেক সচেতন হতে হবে। পরিবেশকে বাসযোগ্য করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে হবে।’
উন্নত দেশগুলোর পরিবেশদূষণে বাংলাদেশকেও ভুগতে হবে: নিজেদের দূষণে নয়, বরং আমেরিকা, ব্রাজিল, চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোর অতিমাত্রিক দূষণের ফলে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে দেশের ২০ শতাংশ জমি পানির নিচে তলিয়ে যাবে। দেশে হঠাৎ ডায়রিয়া ও কলেরার প্রাদুর্ভাব বাড়ার পেছনে পানিদূষণকে দায়ী করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পানিদূষণের কারণে ডায়বিয়া ও কলেরা বেশি হচ্ছে। এজন্য পরিবেশদূষণও দায়ী। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দেশের মাটি, পানি ও বায়ু ভালো রাখতে হবে উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, পৃথিবীর স্বাস্থ্য ভালো থাকলে প্রাণীজগৎ ভালো থাকবে। আমাদের পৃথিবীতে উন্নয়ন হচ্ছে ঠিক, কিন্তু সবকিছুই আমরাই নষ্ট করছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরে অনেক বেশি বায়ুদূষণ হচ্ছে। অন্যান্য জায়গায় কম থাকলেও ঢাকার দূষণ সবচেয়ে বেশি। গাছপালা কেটে আমরা পরিবেশের ক্ষতি করছি। ঢাকায় দেড় কোটি লোক বসবাস করে। কিন্তু এত শব্দদূষণ, ধোয়া আর ধুলোবালির কারণে এ শহরে সংক্রামক, অসংক্রামক সব রোগই বাড়ছে। জলবায়ু সমস্যার কারণে মানসিক স্ট্রেসও বাড়ছে। মাদক ও ধূমপান স্বাস্থ্য সমস্যার অনেক বড় কারণ। আমাদের পানিদূষণ রোধ করতে হবে। কৃষকদের বেশি কীটনাশক ব্যবহার কমাতে হবে। জমিতে বেশি কীটনাশক ব্যবহারের কারণে উৎপাদিত খাদ্যে মানুষের অসুস্থ হওয়ার হার বাড়ছে।
তিনি বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো। করোনা ব্যবস্থাপনাতেও বাংলাদেশ রোল মডেল। করোনাকে আমরা শূন্যের কোটাতে নামাতে চাই।
জাহিদ মালেক আরও বলেন, দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচি অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো ছিল। যে কারণে বিশ্বের ২০০টি দেশের মধ্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে অষ্টম অবস্থানে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্যাভিসহ বেশকিছু বিদেশি সংস্থা করোনা মোকাবিলা ও টিকা কর্মসূচি ভালোভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব করায় বাংলাদেশের প্রসংসা করছে। আফ্রিকার অনেক দেশ এখনো ২০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে পারেনি। অথচ করোনা নিয়ন্ত্রণে সামনের সারিতে থাকা বাংলাদেশ ৯৫ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে সক্ষম হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সেবার মানসিকতার কারণে। মন্ত্রী বলেন, নদীদূষণ, বায়ুদূষণ ও পরিবেশদূষণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। কিন্তু আমরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। আমরা উন্নত যন্ত্রপাতি ও স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম, বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাচিপ সভাপতি এম ইকবাল আর্সলানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।