শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২৮ পূর্বাহ্ন

জাকাত না দেয়ার ভয়ঙ্কর পরিণতি

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম ইব্রাহীম:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২

জাকাত ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। শুধু ধনীরা স্বাচ্ছন্দ্যভাবে জীবন-যাপন করবে এটা ইসলাম চায় না, বরং ধনীদের সাথে গরিবও সুখে শান্তিতে জীবন-যাপন করবে এটাই ইসলাম। এটাই ইসলামের শিক্ষা। জাকাত দেয়া মানে গরিবের প্রতি এহসান বা অনুগ্রহ নয়, বরং তা গরিবের হক ধনীর ওপর।
শরিয়ত নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ কারো মালিকানায় নির্দিষ্ট সময় থাকলে শরিয়ত নির্ধারিত হারে তার ওপর জাকাত দিতে হয়। আর এই জাকাতের অর্থ গরিব মিসকিনসহ আট শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বণ্টনের নির্দেশনা এসেছে পবিত্র কুরআনে। জাকাতের মাধ্যমেই সমাজে ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য লাঘবের পথ প্রশস্ত হয়। ইসলাম জাকাত আদায়ের ব্যাপারে অত্যধিক জোর দিয়েছে। জাকাত যার ওপর বর্তায় তা আদায় করা তার জন্য ফরজ। আদায় না করলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। পবিত্র কুরআন-হাদিসে জাকাত আদায় করার ব্যাপারে পরিষ্কার নির্দেশনা রয়েছে। জাকাত না দেয়ার ভয়ঙ্কর পরিণতি বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনুল কারিমে জাকাত না দেয়ার ভয়ঙ্কর পরিণতির ব্যাপারে এসেছে- সূরা আত তাওবার ৩৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা স্বর্ণ ও রুপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের কঠোর আজাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্ব ও পিঠে সেঁক দেয়া হবে। (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা রেখেছিলে, সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো।’
সূরা আলে ইমরানের ১৮০নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন, ‘তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কৃপণতা তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, সে সমস্ত ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আসমান ও জমিনের পরম স্বত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা করো; আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন।’
সহিহ হাদিসে জাকাত না দেয়ার ভয়ঙ্কর পরিণতির এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘কোনো স্বর্ণ ও রৌপ্যের মালিক যদি এগুলোর হক (জাকাত) আদায় না করে তবে কিয়ামতের দিনে তার জন্য আগুনের শয্যা বিছানো হবে। তারপর জাহান্নামের অগ্নিতে ওইসব (স্বর্ণ-রৌপ্য) উত্তপ্ত করে তা দিয়ে তার পার্শ্বে ও ললাটে, পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। এরপর যখন উত্তপ্ততা কমে যাবে তখন পুনরায় তা উত্তপ্ত করা হরে। এভাবে চলতে থাকবে, দিনভর যার পরিমাণ হবে ৫০ হাজার বছর, যে পর্যন্ত না বান্দাদের মধ্যে ফায়সালা হবে।’
হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছ থেকে ধন-সম্পদ পেয়েছে কিন্তু সে তার জাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন ওই ধন-সম্পদ এমন বিষধর সাপে পরিণত হবে যার মাথার ওপর থাকবে দু’টি কালো দাগ। এ সাপ সে ব্যক্তির গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর সাপ ওই ব্যক্তির গলায় ঝুলে তার দু’গালে কামড়াতে থাকবে এবং বলবে, আমি তোমার মাল, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ।’ (সহিহ বুখারি-১৪০৩) হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করে। তাদের একজন বলে, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন। আর অপরজন বলে, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।’ (সহিহ বুখারি-১৪৪২, সহিহ মুসলিম- ১০১০)। লেখক : খতিব, বড় চাঁদপুর পূর্বপাড়া জামে মসজিদ, সরসপুর, মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com