প্রায় প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে আটা-ময়দার দাম। সেইসঙ্গে পামওয়েল ও ডালডার দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা বেকারি পণ্য তৈরির অন্যতম কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এভাবে কয়েকদিন পরপরই দাম বৃদ্ধির কারণে দিশাহীন হয়ে পড়েছেন বেকারি মালিকরা। এর আগে গত দুই বছর তাদেরকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। নিয়মিত বেকারি পণ্য বেচাকেনা করতে পারেননি। অনেক বেকারি মালিক তাদের কারখানা বন্ধ রেখেও কর্মচারিদের বেতন দিয়েছেন। সবেমাত্র সেই করোনা পরিস্থিতি সামলে উঠতে শুরু করেছিল। এরইমধ্যে অস্বাভাবিকভাবে বেকারি পণ্যের কাঁচামালের দাম ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে তাদের বেকারি ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না বলে মনে করছেন তারা। শহরের আদি ফুডল্যান্ডের ম্যানেজার মো. রকি বলেন, দিন দিন ময়দা, পামঅয়েল ও ডালডাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদেরও পণ্যের দাম বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। যথাসম্ভব চেষ্টা করে থাকি দাম না বাড়ানোর। কিন্তু পারা যাচ্ছে না। যার কারণে আমাদের ক্রেতা সংখ্যাও প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ব্যবসা ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
ফুডল্যান্ডের ম্যানেজার উসমান গনি বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের প্রতিটি বেকারি পণ্যের ৫ থেকে ১০ টাকা করে দাম বাড়ানো হয়েছে। যার কারণে ক্রেতার সংখ্যা আগের চেয়ে কমে গেছে। ফলে মালিকপক্ষের জন্য ব্যবসা টিকিয়ে রাখাটা কষ্টকর হচ্ছে। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে আমাদের প্রায় ৫টি বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এখানে প্রায় ৫০ জন লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। তাদের কর্মসংস্থানও অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে।
সুগন্ধা বেকারির একটি বিক্রয়কেন্দ্রের ম্যানেজার মো. মামুন বলেন, করোনার সময় আমাদেরকে বসিয়ে রেখে মালিকপক্ষ বেতন দিয়েছে। তারপরও মালিকপক্ষের চলে যাচ্ছিল। কিন্তু এখন বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের বেচাকেনা বন্ধ। শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার জন্য চলছে কোনোরকম। এভাবে প্রতিদিনই পণ্যের দাম বৃদ্ধি হলে প্রতিষ্ঠান ধরে রাখাটা অসম্ভব হয়ে যাবে। আমাদের প্রতিদিনই কাস্টমারদের সঙ্গে বাগবিত-া করতে হয়। এদিকে শহরের প্রধান পাইকারি বাজার নিতাইগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে গম সংকট থাকায় গমের দাম বাড়ছে। ৯০০ টাকার গমের দাম বেড়ে এখন হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ। গম থেকেই আটা-ময়দা হয়, সেজন্য আটা-ময়দার দামও বাড়ছে। মানভেদে প্রতি ৫০ কেজি আটার বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ১৫০ টাকায়। সেইসঙ্গে ময়দা মানভেদে ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সুগন্ধা বেকারির মালিক মো. নুরুল হক আফসারী বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বেকারি তৈরির পণ্যের দাম বছরের মধ্যে কয়েক দফায় বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৯ মাসে ময়দার দাম বস্তাপ্রতি ১৮০০ টাকা থেকে ৩২০০ টাকা হয়েছে। পামওয়েল তেলের দাম মণ প্রতি ৪ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ৬ হাজার ৮৩০ টাকা হয়েছে। ডালডার দাম কার্টুন প্রতি ১ হাজার ৯২৫ টাকা থেকে ২ হাজার ৯৪৫ টাকা হয়েছে। এভাবে প্রতিটি পণ্যে দাম বেড়েই চলছে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো আগে দাম বাড়লেও সেটার নিশ্চয়তা ছিল যে এতদিন চলবে। কিন্তু এখন ব্যবসায়ীরা কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। মাল দিয়ে বলছেন কালকে এটার দাম বাড়তে পারে। যার কারণে আমাদেরকে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। চেষ্টা করি কোনো পণ্যের দাম দাম না বাড়িয়ে সাধ্যের মধ্যে ব্যবসা করার। কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। পণ্যের বিভিন্ন দামের স্টিকার করতে গিয়ে আমার খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এভাবে কয়েকদিন পর পর দাম বাড়লে আমরা কোথায় যাবো? তিনি বলেন, আশা করছি সরকার এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে। এমনিতেই সরকার অনেক চেষ্টা করছে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। এখনও বিশ্বের অন্যান্য দেশের থেকে আমাদের অবস্থা ভালো রয়েছে। এই দেশ আমাদের। আমাদেরকেও দেশ ও দেশের মানুষের কথা ভাবতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা রেস্তেরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা বলেন, বলতে গেলে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেই সারাবিশ্বে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আমরা সে অনুযায়ী দাম বাড়াতে পারি না। লাভ কম হলেও আমরা জনগণের সেবার কথা চিন্তা করে দাম বাড়াই না। তবে এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আমাদেরকে হয়তো চিন্তা করতে হবে। সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এ বিষয়ে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এমনিতেই সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। আমাদের জনসাধারণকেও এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।-জাগোনিউজ২৪.কম