শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ছাতকের বিভিন্ন কোয়ারি থেকে লিজ ছাড়াই বালু উত্তোলন ও বিক্রির অভিযোগ নড়াইলের কালিয়ার কৃষক কায়কোবাদ সিকদার শীতকালীন উচ্চ ফলনশীল টমেটো চাষে লাভের আশাবাদী কুনিয়া বড়বাড়ির হাজী আবুল হাসেম সরকার একাডেমীর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা তারাকান্দায় তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ ধনবাড়ীতে জনপ্রিয় হচ্ছে রঙিন ফুলকপি চাষ মৃৎশিল্পীদের জীবনসংগ্রাম: গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে গঙ্গাচড়ায় ধামুর পূর্বপাড়া বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ বিনা চাষে সরিষা আবাদ রিলে পদ্ধতিতে নতুন সম্ভাবনা, আগামীতে বাড়বে আরো উৎপাদন রায়গঞ্জে দেড়াগাঁতী রুদ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৪তম বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা দৌলতখান সরকারি আবু আব্দুল্লাহ কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ

পাঁচ পাপে আচ্ছন্ন গোটা যুবসমাজ

মো: নাঈম:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২

মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে তাঁর বান্দার যুবক বয়স অনেক বেশি পছন্দের ও মাকবুলের। যুবক বয়সের গুরুত্ব নিয়ে একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- ‘কিয়ামতের দিন মাত্র সাত শ্রেণীর মানুষ মহান আল্লাহ তায়ালার পবিত্র আরশে আজিমের নিচে ছায়া পাবে। সেই সাত শ্রেণীর মধ্যে এক শ্রেণী হবে সেই সব যুবক যারা তাদের যুবককালীন সময় ইবাদতে কাটিয়েছেন।’ অর্থাৎ, যুবক বয়সের মাহাত্ম্য অকল্পনীয়। কিন্তু, পরিতাপের বিষয় এই যে, এই দুর্দান্ত বয়সে আমরা সঠিক পথের ওপর অটল থাকতে পারি না, ধৈর্য ধারণ করতে পারি না। ফলে, অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যায় পরকালের সুখময় বৃহৎ জীবনের সম্ভাবনা। যুবক বয়সে যুবকরা নানা ধরনের পাপ ও অপকর্মে ডুবে থাকে। এই লেখায় সেরকমই বড় পাঁচটি গুনাহের স্বরূপ আলোচনা করা হলো।
প্রতি দৃষ্টি : ইসলাম চারিত্র্যিক উৎকর্ষতার ধর্ম। মানুষের চরিত্র ফুটে ওঠে তার আচার-আচরণ এমনকি তার চাহনির মধ্যেও। একজন পুরুষ বা স্ত্রীর জন্য কোনো নন-মাহরাম বা রক্তের সম্পর্কিত আত্মীয় ছাড়া অন্য কোনো স্ত্রী বা পুরুষদের সাথে যাবতীয় মেলামেশা (কথাবার্তা, দেখা করা…) হারাম। কারণ, তাতে বিপদের সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়। যে বিপদের বাস্তব চিত্র আজকাল সমাজে অহরহ দেখা যাচ্ছে।
হজরত আলী রা: বর্ণনা করেন, নবী করিম তাকে বলেছেন, ‘…একবার দৃষ্টি নিক্ষেপের পর দ্বিতীয়বার দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে না (বেগানা নারীর প্রতি)। কেননা, প্রথম দৃষ্টি তোমার সপক্ষে কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি তোমার বিপক্ষে।’ অর্থাৎ, রাস্তায় চলতে চলতে যদি কোনো বেগানা নারীর প্রতি নজর চলে যায় তাহলে তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয়বার দৃষ্টি দেয়া তো দূরের কথা, প্রথম দৃষ্টিও দীর্ঘস্থায়ী করা যাবে না। প্রথম দৃষ্টি হতে পারে অসাবধানতাবশত অথবা চলার রাস্তা দেখার জন্য। অন্যত্র, মানুষের দৃষ্টিকে শয়তানের বিষাক্ত তীরের সাথে তুলনা করা হয়েছে। মানে, তীর যেমন মানুষের প্রাণনাশ করে তেমনি কুদৃষ্টি মানুষের ঈমান নাশ করে। অতএব, ঈমানের স্বার্থে, আল্লাহর ভয়ে ও জান্নাতের চিরস্থায়ী সুখের আশায় আমাদেরকে আমাদের দৃষ্টির হিফাজত করতে হবে।
বিজাতীয়দের অনুকরণ : পৃথিবীতে এমন কোনো সমস্যা নেই যেটি ইসলামে আলোচনা করা হয়নি বা যার সমাধান ইসলামে নেই। একজন মানুষ তার ভালোর জন্য যা তালাশ করে বা যা কিছুর দরকার পড়ে তার সব কিছুই ইসলামের মধ্যে রয়েছে।
অথচ, আফসোসের বিষয় হলো- আমাদের মুসলিম উম্মাহর অনেকে আজ ইসলাম ছেড়ে বিজাতি ইহুদি, মুশরিক, খ্রিষ্টানদেরকে নিজেদের আদর্শ বলে মেনে নিচ্ছে। তাদের লাইফস্টাইল চর্চা করছে। এমনকি, তাদের সাথে মিলে পালন করছে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানও। এভাবে মুসলিম সমাজে প্রমোট করছে থার্টি ফার্স্ট নাইট, ভ্যালেন্টাইন ডে কিংবা এপ্রিল ফুলের মতো মুসলিমবিদ্বেষী, বেহায়া আর নির্লজ্জ দিবসগুলোকে। এগুলো ছাড়াও কেউ কেউ বিজাতীদের মতো পোশাক-পরিচ্ছদ, খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা, উঠা-বসা, চাল-চলন ইত্যাদিতে তাদের অনুসরণ করছে। অথচ, পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘তোমরা (মুসলমানগণ) কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ-অনুকরণ করো না।’ (সূরা আহজাব) অন্যদিকে, হাদিসে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি যে স¤প্রদায়ের সাথে মিল বা সম্পর্ক রাখবে, তাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করবে, সে তাদের দলভুক্ত হয়ে যাবে। অর্থাৎ, তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।’ (আবু দাউদ) অতএব, মুসলিম হয়ে যারা কাফের, মুশরিকদের বা অন্যদের অনুসরণ করবে ওই হাদিস মোতাবেক তাদের হাশরও হবে সেই অমুসলিম ও কাফেরদের সাথে। আর যাদের হাশর মুশরিকদের সাথে তাদের পরকালের অবস্থা সহজেই অনুমেয়।
হারাম বিনোদন : ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এতে মানুষের সব ধরনের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে। মানবজীবনে যে বিনোদনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেটিও ইসলামে বর্ণনা করা আছে। পবিত্র কুরআনে বিনোদনের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যেমন- সূরা আনআমে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের সফরের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। বিনোদনের আরো অনেক মাধ্যম রয়েছে, যেমন- কবিতা আবৃত্তি, খেলাধুলা, সঙ্গীত, প্রতিযোগিতা ইত্যাদি, যেগুলোর ভিত্তি নবী সা:-এর বিভিন্ন হাদিসে প্রমাণিত। অথচ, বর্তমানকালের যুবকরা বিনোদনের নামে এক বিশাল পাপসাগরে ডুবে আছে, তাদের বিনোদন অর্থহীন গান ও কুরুচিপূর্ণ নাচে। এমন অসুস্থ বিনোদন মনকে প্রভাবিত করে, ভুলিয়ে রাখে আল্লাহর ইবাদত। এ ধরনের বিনোদন ইসলামী বিধান অনুযায়ী সম্পূর্ণ হারাম। আমরা মুসলিম। আমাদের উচিত আমাদের নিজস্ব ধর্মীয় সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরে সে মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা।
নেশায় আসক্তি : হজরত আয়েশা রা: বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সব ধরনের নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য হারাম।’ শুধু দ্রব্যাদিই নয়, নেশাযুক্ত যেকোনো কাজই হারাম। কেননা, নেশা মানুষের স্বাভাবিক জ্ঞানকে কমিয়ে দেয়, সময়জ্ঞান হ্রাস করে। একজন নেশাগ্রস্ত মানুষ বিপজ্জনক, তাকে দিয়ে যেকোনো পাপকাজই সম্ভব। আধুনিক এ কালে নেশাদায়ক বস্তু আজ মানুষের হাতের নাগালে। গভীরভাবে ভাবলে দেখা যাবে, আমাদের হাতের মোবাইল, পাশের ল্যাপটপ বা ডেস্কটপই আমাদের নেশার সাতপ্যাঁচে ফেলে দিতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে এ নেশা মাদকের চেয়েও ভয়ঙ্কর। এগুলো ছাড়াও আরো অনেক ধরনের নেশাজাতীয় জিনিস রয়েছে। কিছু নেশা হতে পারে স্বভাবগত যেমন- নারীনেশা, অর্থনেশা, খ্যাতিনেশা ইত্যাদি। সমস্ত রকম জাগতিক নেশার পাশ কাটিয়ে আমরা আমাদের স্বাভাবিক জীবনের সুন্দর অভ্যাসগুলো চর্চা করব।
অশ্লীল বা অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা : (খুব সম্ভবত) পৃথিবীতে যত দাঙ্গাফাসাদ, যুদ্ধ ও বিশৃঙ্খলাই সৃষ্টি হোক না কেন তার মূল কারণ সামান্য কথা। অর্থাৎ, কথাই সব রক্তারক্তির মূল। নবী করিম সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যে চুপ থাকে সে মুক্তি পাবে’। (তিরমিজি) যে যত বেশি কথা বলবে তার কথায় তত বেশি ভুল বা মিথ্যা থাকার সম্ভাবনা থেকে যাবে। আর, যত মিথ্যা তত গুনাহ। হাদিসে জিহ্বা বা কথা সংযত করার ব্যাপারে একাধিক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে সেই সাথে কথা সংযত করার ব্যাপারে আকর্ষণীয় পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন- নবী করিম সা: তাঁর এক হাদিসে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের লজ্জাস্থান এবং জিহ্বার ব্যাপারে আমাকে নিশ্চয়তা দিতে পারবে আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’ (সহিহ বুখারি) বলা হয়ে থাকে, জ্ঞানীরা সবসময় কম কথা বলে। বেশি কথা গিবত, অহঙ্কার কাউকে হেয় বা তুচ্ছ করার মতো হাজারো বড় বড় গুনাহকে টেনে আনে। অতএব, অনর্থক কথাবার্তা থেকে বিরত থেকে আমরা খুব সহজেই দুনিয়া আর আখিরাতের মুক্তি নিশ্চিত করতে পারি। লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com