আমের পাশাপাশি জামেরও চলছে ভরা মৌসুম। তীব্র গরমে অনেক উপকারী এই ফলটির চাহিদার পাশাপাশি দামও তুলনামূলক বেশি। গ্রীষ্মকালীন ফল আম ও লিচুর তুলনায় জামের উপস্থিতি কম থাকলেও রাজধানীর অলিতে-গলিতে বিভিন্ন ফলের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে মুখ রঙিন করা এ ফল।
রাজধানীতে অনেকেই ফেরি করে কেজি দরে বিক্রি করছেন জাম। আবার কেউ কেউ মরিচ-লবণ দিয়ে মাখানো জাম ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করছেন। তরুণ-তরুণীদের মাঝে এ ফলের চাহিদাও ব্যাপক। বিশেষ করে ক্যাম্পাস কিংবা দর্শনার্থীরা ভিড় করেন এমন জায়গায় মসলা মাখানো জামের প্রচুর চাহিদা। গত মঙ্গলবার (১৪ জুন) রাজধানীর মধ্যবাড্ডা এলাকার আদর্শনগর গলির ভেতর গিয়ে দেখা যায়, আনারসের পাশাপাশি ভ্যানে করে জাম বিক্রি করছেন মনির হোসেন। আনারস কেটে মসলা মেখেও বিক্রি করেন তিনি।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেজি দরেও জাম বিক্রি করি। আবার কেউ চাইলে মসলা দিয়ে মেখেও দেই। কত টাকা কেজি যাচ্ছে এখন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ১৬০ টাকা কেজি। মনির কারওয়ান বাজার থেকে জাম কিনে আনেন। প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ কেজি জাম বিক্রি করেন বলে জানালেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বেশ কয়েকজন মৌসুমি ফল বিক্রি করেন। চাহিদা অনুযায়ী জামও বিক্রি করেন তারা। মৌসুমি ফল নানা ধরনের মসলা দিয়ে মেখে বিক্রি হয় এখানে। এসবের বেশ জনপ্রিয়তাও আছে। টিএসসি এলাকায় ঘুরতে আসেন কিন্তু বিভিন্ন রকমের মসলা মাখানো ফল খান না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। ক্যাম্পাসের ভেতর হওয়ায় কেজি দরের চেয়ে মাখানো জামের চাহিদা এখানে বেশি।
টিএসসির এক জাম বিক্রেতা বলেন, সারাবছর বিভিন্ন ফল বিক্রি করি। জামের মৌসুমে এর চাহিদা আছে ভালো। তবে ক্যাম্পাসের ভেতরে কেজি দরের চেয়ে মাখানো জাম বেশি বিক্রি হয়। আবার অনেক শিক্ষার্থী আমাদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণ জাম অর্ডার দিয়েও নেন। এদিকে, চাহিদার পাশাপাশি জামের দামও বেশি বলে জানালেন মধ্যবাড্ডা বাজার এলাকার বিক্রেতা ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, চাহিদা আছে। তবে দামও কম না। প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ কেজি জাম বিক্রি করি আমি।
কেমন দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারওয়ান বাজার থেকে কিনে আনি ৮০ টাকায়। বিক্রি করি ১২০ টাকা। সবচেয়ে ভালো জাম, যেটা একদম ফ্রেশ ও সাইজে বড় এবং টকটকে লাল, পাইকারিতে সেটি কিনতে গেলে কেজিতে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা পড়ে।
ইকবাল হেসেন থেকে কয়েক ফুট দূরত্বেই জাম নিয়ে বসে আছেন ষাটোর্ধ্ব বয়সী আনসার ব্যাপারি। পাশাপাশি দোকান হলেও তার কাছে থাকা জামের দাম একটু বেশি। সর্বনি¤œ ১২০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে জাম বিক্রি করছেন তিনি। দিনে ৪০ থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত জাম বিক্রি করেন তিনি।
এত বেশি দাম রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি গাজীপুর গিয়ে নিজেই গাছ থেকে বেছে বেছে জাম পেড়ে আনি। ১৫ বছর ধরে এ কাজই করছি। আমার কাছ থেকে যারা জাম নেয়, তারা সবাই আমাকে চেনে। কোনো ভেজাল নেই, টসটসা জাম। এজন্য দামও বেশি।
আনসার ব্যাপারি আরও বলেন, জামের সিজন থাকে মাত্র দুই সপ্তাহের মতো। এজন্য এ সময়ের মধ্যে ফলটি চলেও ভালো। অন্যদিকে, কারওয়ান বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, পাইকারিতে ৭০ টাকার নিচে কোনো জাম নেই। চাহিদা আছে, কিন্তু মানুষের পকেটে টাকা নেই। এজন্য খায় না। ফলে আমরা দামও পাই না।
রাজধানীজুড়েই ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে জাম। চলতে ফিরতে হঠাৎ সামনে পড়তে পারে লাল টকটকে এ ফল। বাহ্যিক সৌন্দর্যের ওপরও নির্ভর করে জামের গ্রহণযোগ্যতা। দেখতে সুন্দর ও গাঢ় বেগুনি রঙের জাম সাধারণত তরুণ-তরুণী কিংবা স্কুলের শিক্ষার্থীদের নজর এড়ায় না।- জাগো নিউজ