মীরসরাই উপজেলায় অবাধে সংরক্ষিত বনভূমির গাছ নিধন করা হচ্ছে। উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ৯২টি করাতকলের মধ্যে ৮০টি অবৈধভাবে চলছে এই সব করাত কল। অসাধু কাঠ ব্যবসায়ী চক্রের কবলে পড়ে দিন দিন গাছগাছালি কমছে। যার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। ফলে ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ। হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। স্থানীয় পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকার কারণে অধিক হারে বাড়ছে করাতকল। অথচ বন বিভাগের নীতিমালায় রয়েছে, সংরক্ষিত বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। করাতকল চালাতে হলে প্রয়োজন হবে লাইসেন্স। কিন্তু এসব নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইন্সেস নিয়ে চলছে এই সব করাত কল। আর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন না থাকায় এসব করাতকল থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৯২টি করাত কলের মধ্যে লাইসেন্স প্রাপ্তি করাতকল আছে ১২টি। বাকি ৮০টি লাইসেন্সবিহীন ভাবে চলছে এই সব অবৈধ করাতকল। করাতকল বিধিমালা-২০১২ তে বলা আছে, কোনো সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান ও জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে এমন স্থান থেকে কমপক্ষে ২০০ মিটার এবং সরকারি বনভূমির সীমানা থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। কেউ মানছেনা এই নির্দেশনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক করাতকল মালিকরা জানান, কাঠ কাটাকে কেন্দ্র করেই করাতকলের ব্যবসা চলে। স-মিল ব্যবসায়ীরা স্থানীয় ইউনিয়ন ও পৌরসভা থেকে ট্রেড-লাইসেন্স পায়। উপর থেকে কেউ এলে তাদের ম্যানেজ করা হয় বলে জানান তারা। উপজেলার করাত-কল সমিতির সভাপতি প্রসার কান্তি বড়ুয়া জানান, আমরা সব সময় আমাদের সমিতির সদস্যদের বৈধভাবে করাত কল পরিচালনা করার অনুরোধ করি। পাশাপাশি করাত কলে যাতে করে কোন প্রকার সরকারী বনভূমি কাঠ না চিরানো হয় সেই জন্য তাগিদ দিয়ে থাকি। এই বিষয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান জানান, মীরসরাই উপজেলায় বেশিভাগ করাত কল অবৈধ। আমরা করাতকল বিধিমালা আইন অনুযায়ী সম্প্রতি ৩টি করাত কল সিলগালা করেছি। তিনি আরো বলেন অবৈধ করাত কলের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এই বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলার উত্তর বন বিভাগের প্রধান সহকারী নুরুল হক বলেন, যারা অবৈধভাবে করতকল চালাচ্ছে তাদের ইতিমধ্যে নোটিশ দেয়া হয়েছে। অবৈধ ও অননুমোদিত করাতকলের তালিকা স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে দেয়া হয়েছে। খুব শিগ্রই অবৈধ করাত কলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।