পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনার দ্বিতীয় দিনে গতকাল সোমবার আরও ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। নিখোঁজদের অপেক্ষায় ঘটনার পর থেকেই করতোয়ার পাড়ে অবস্থান করছেন স্বজনরা।
গতকাল সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় বলেন, ‘নৌকাডুবির ঘটনায় রোববার ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে উদ্ধারকাজ স্থগিত করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার সকালে দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার কাজে নামে ডুবুরি দল। সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৫০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।’ এর আগে, রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে করতোয়া নদীর আওলিয়া ঘাট এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় নৌকাটি। এসময় কয়েকজন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও নিখোঁজ হন অনেকে। এছাড়া দুর্ঘটনায় মৃত ২৫ জনের নাম ও পরিচয় জানানো হয়েছে। এদের মধ্যে ১২ নারী, আট শিশু ও পাঁচ পুরুষ রয়েছেন। তাদের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা, দেবীগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও জেলায়। নৌকাডুবিতে এখন পর্যন্ত মৃতরা হলেন- শ্যামলী রানী (১৪), লক্ষী রানী (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫), শোভা রানী (২৭), দীপঙ্কর (৩), পিয়ন্ত (২.৫), রুপালী ওরফে খুকি রানী (৩৫), প্রমিলা রানী (৫৫), ধনবালা (৬০), সুনিতা রানী (৬০), ফাল্গুনী (৪৫), প্রমিলা দেবী (৭০), জ্যোতিশ চন্দ্র (৫৫), তারা রানী (২৫), সনেকা রানী (৬০), সফলতা রানী (৪০), হাশেম আলী (৭০), বিলাস চন্দ্র (৪৫), শ্যভমলী রানী ওরফে শিমুলি (৩৫), উষশী (৮), তনুশ্রী (৫), শ্রেয়শী, প্রিয়ন্তী (৮), সনেকা রানী (৬০) ও ব্রজেন্দ্রনাথ (৫৫)।
উল্লেখ্য, গত রোববার দুপুরে মহালয়া উপলক্ষে ধর্মসভায় যাওয়ার সময় পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। গতকাল রাত পর্যন্ত ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহত সদস্যের প্রতিটি পরিবারকে লাশ সৎকারের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার করে টাকা প্রদান করা হচ্ছে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহালয়া উপলক্ষে জেলার বোদা, পাঁচপীর, মাড়েয়া, ব্যাঙহারি এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকায় করে বোদার বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অপর পাড়ে) যাচ্ছিলেন। অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় নদীর মাঝ পথে উল্টে যায় নৌকাটি। কিছু মানুষ সাঁতরে নদীর তীরে আসলেও ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং নৌকায় থাকা অনেক যাত্রী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। পরে উল্টে যাওয়া সেই নৌকা উদ্ধার করে তীরে রাখেন স্থানীয়রা। ফায়ার সার্ভিস আসার পরে আশপাশে কোনো বড় নৌকা না পাওয়ায় দুর্ঘটনাকবলিত সেই নৌকা দিয়েই উদ্ধার কাজ শুরু করে ডুবুরি দলছে।