শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ  ‘বিবেচনায় রয়েছে’: বদিউল আলম ১৬ বছর বঞ্চিতদের এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বইমেলয় স্টল বরাদ্দের দাবি ইসির অগাধ ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োগে সমস্যা ছিল: বদিউল আলম আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থান খোঁজার মানুষ তৈরি করছে, যা ত্রুটিপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন: ‘স্থানীয়দের জীবিকা বনাম পরিবেশ রক্ষা’ আ. লীগ-জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সময় লাগবে: মির্জা ফখরুল

বিশ্বখ্যাত আলেম আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভির ইন্তেকাল

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিশ্বখ্যাত আলেম শায়খ আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভি ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন।
গতকাল সোমবার আলআরাবিয়া ও আলজাজিরা আরবি তার ইন্তেকালের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। একইসাথে শায়খ কারজাভির ফেরিভাইড ফেসবুক পেজ ও টুইটার একাউন্ট থেকেও তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘ইমাম শায়খ ইউসুফ কারজাভি ইন্তেকাল করেছেন। যিনি তার গোটা জীবন ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠায় উৎসর্গ করেছেন..।’
শায়খ ইউসুফ আবদুল্লাহ আল কারজাভি মিসরীয় বংশোদ্ভূত একজন প্রভাবশালী গবেষক আলেম। তিনি মিসরভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের উপদেষ্টা ছিলেন।
মিসরীয় জাতিসত্ত্বার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও শায়খ কারজাভি কাতারে বসবাস করতেন। মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে তিনি কয়েকবার কারাবরণ করেন এবং সবশেষ মাতৃভূমি ত্যাগ করে কাতারে স্থায়ী হন। ২০১৫ সালে মিসরের একটি আদালত তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-াদেশ জারি করে।
মুসলিমদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন শায়খ কারজাভি। মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিকদের অভিজাত সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সের (International Union of Muslim scholars) সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।
একইসাথে জর্ডানের রয়্যাল অ্যাকাডেমি ফর ইসলামিক কালচারাল অ্যান্ড রিচার্জ (Royal academy for Islamic culture and research), ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (OIC), রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী এবং ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার, অক্সফোর্ড এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায?িত্ব পালন করেছেন। তিনি আয়ারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর ফাতওয়া অ্যান্ড রিচার্জের (European Council For Fatwa and Research) প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
আধুনিক উদ্ভূত নানা জটিল সমস্যার সাবলীল ও গভীর ইজতিহাদভিত্তিক সমাধানমূলক শতাধিক গবেষণা-গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। তার গ্রন্থগুলো প্রকাশের পরপরই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে জ্ঞানী, গবেষক, বোদ্ধামহল ও সাধারণ মানুষের কাছে সেগুলো ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে। মহান এই মনীষীর জন্ম ১৯২৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, মিসরের উত্তর নীলনদের তীরবর্তী সাফাত তোরাব গ্রামে। দুই বছর বয়সে বাবা ইন্তেকাল করলে চাচা তার লালন-পালন করেন। দশ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ কুরআন হিফজ করেন। হিফজ সম্পন্ন করে আল-আজহার কারিকুলামে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে জাতীয় মেধায় দ্বিতীয় হন। প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উসুলুদ দ্বীন অনুষদ থেকে অনার্স, আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। মিসরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘Institute of Imams’ এর পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন শায়খ ইউসুফ কারজাভি। কিছুদিন তিনি আওকাফ মন্ত্রণালয়ের ‘Board of Religious Affairs’ এ কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শরীয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের প্রতিষ্ঠাকালীন ডীন নিযুক্ত হন। ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি এখানে কর্মরত থাকেন এবং একই বছর তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্র’। ১৯৯০-৯১ সালে আলজেরিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের Scientific Council এর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯২ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর হিসেবে পুনরায় কাতার ফিরে আসেন। শায়খ ইউসুফ কারাজাভি ১৪১১ হিজরিতে ইসলামী অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ব্যাংক ফয়সল পুরস্কার লাভ করেন। ইসলামী শিক্ষায় অবদানের জন্য ১৪১৩ হিজরিতে মুসলিম বিশ্বের নোবেল খ্যাত কিং ফয়সাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন । ১৯৯৭ সালে ব্রুনাই সরকার তাকে ‘হাসান বাকলি’ পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়াও তার বৈচিত্র্যময় পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি নানা পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন। তার অন্যতম কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার- এক. কিং ফয়সাল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ। দুই. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পদক, মালয়েশিয়া। তিন. আন্তর্জাতিক পবিত্র কুরআন সম্মাননা পুরস্কার, দুবাই। চার. সুলতান হাসান আল বলকিয়াহ সম্মাননা, ব্রুনাই। পাঁচ. আল-ওয়াইস পদক, সংযুক্ত আরব আমিরাত। ছয়. জর্ডানের মেডেল অব ইন্ডিপেন্ডেন্স । সূত্র : আলজাজিরা, আলআরাবিয়া, উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য
জামায়াতে ইসলামীর শোক: বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলার আল্লামা ড. ইউসুফ আল-কারযাভির ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ এক শোকবাণী প্রদান করেছেন।
শোকবাণীতে তিনি বলেন, “আজীবন মাজলুম বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের কিংবদন্তি, অভিভাবক ও বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলার আল্লামা ড. ইউসুফ আল-কারযাভি ২৬ সেপ্টেম্বর মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি মূলত বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী আন্দোলন ইখওয়ানুল মুসলিমীনের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আধুনিক উদ্ভূত নানা জটিল সমস্যার সাবলীল ও গভীর ইজতিহাদভিত্তিক সমাধানমূলক শতাধিক গবেষণা-গ্রন্থের রচয়িতা। তাঁর গ্রন্থগুলো প্রকাশের পরপরই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে জ্ঞানী, গবেষক, বোদ্ধামহল ও সাধারণ মানুষের কাছে সেগুলো ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে। আমি তাঁর ইন্তিকালে গভীরভাবে শোকাহত। শোকবাণীতে তিনি আরো বলেন, মুসলিমদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন শায়খ কারযাভি। তিনি মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিকদের অভিজাত সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্স-এর সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। একইসাথে জর্ডানের রয়্যাল অ্যাকাডেমি ফর ইসলামিক কালচারাল অ্যান্ড রিচার্জ, ইসলামী সম্মেলন সংস্থা, রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী এবং ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার-অক্সফোর্ড এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আয়ারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর ফাতওয়া অ্যান্ড রিচার্স-এর প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। মিসরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ইনস্টিটিউট অব ইমাম-এর পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন শায়খ ইউসুফ কারযাভি। ১৯৭৭ সালে তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শরীয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের প্রতিষ্ঠাকালীন ডীন নিযুক্ত হন। ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি এখানে কর্মরত থাকেন এবং একই বছর তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্র’। ১৯৯২ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর হিসেবে পুনরায় কাতার ফিরে আসেন। শোকবাণীতে তিনি বলেন, প্রসিদ্ধ একজন শিক্ষক হিসেবে তাঁর হাতে অসংখ্য দাঈ ইলাল্লাহ, ইসলামিক স্কলার এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠার সুযোগ্য নেতা-কর্মী গড়ে উঠেছেন। তাঁরা আরব জাহানের গন্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে ইসলামের আলো ছড়াচ্ছেন। তিনি ছিলেন মাজলুম মুসলমানদের হৃদয়ের বন্ধু এবং জুলুমের বিরুদ্ধে আপোষহীন কন্ঠ। তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে বিশ্বের কোটি কোটি মুক্তি পাগল মুসলমানদের অন্তরে বেঁচে থাকবেন।
তিনি বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর এ গোলামের জীবনের সমস্ত নেক আমলগুলো কবুল করুন, মানবিক ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো মেহেরবানী করে ক্ষমা করুন এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর রহমতের ফিরিস্তাদেরকে তাঁর খালেছ গোলাম আল্লামা ড. ইউসুফ আল কারযাভী রাহিমাহুল্লাহর সঙ্গী বানিয়ে দিন। চূড়ান্ত পুরষ্কার হিসেবে আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন। মরহুমের পরিবার-পরিজন, প্রিয়জন, সহকর্মী এবং শুভাকাক্সক্ষীদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সবরে জামিল আতা করুন, আমীন।” অপর এক শোকবাণীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের আল্লামা ড. ইউসুফ আল-কারযাভির ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “তিনি মুসলিম বিশ্বের একজন অভিভাবক ছিলেন। ইসলামী জ্ঞানচর্চা ও ইসলামের মহান আদর্শ প্রচারের পাশাপাশি ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। শত জুলুম-নির্যাতন, প্রলোভন উপেক্ষা করে তিনি তাঁর আদর্শ ও কর্তব্যে অটল ছিলেন। তাঁর ক্ষুরধার লেখনি মুসলিম উম্মাহকে আলোড়িত করেছে। তিনি ছিলেন সমকালীন সময়ের একজন কিংবদন্তি। আমি তাঁর ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করছি। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাঁর এ গোলামকে আবরার বান্দাদের মধ্যে কবুল করে তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন। তাঁর শোকাহত স্বজনদের এবং সহকর্মীদেরকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সবরে জামিল দান করুন। আমীন।”




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com