সারাদেশের মুরগি খামারি ও ব্যবসায়ীরা খুবই প্রতিকূল সময় অতিবাহিত করছেন। মীরসরাই উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের যুবকরা এক সময় খামারে মুরগি পালন করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে খামারের বিভিন্ন পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধির ফলে ধীরে ধীরে গুটিয়ে যাচ্ছে জনপ্রিয় খামার ব্যবসা। গত বছরের করোনার ক্ষতি সামাল দিতে না পেরে অনেকেই ঋণ নিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে আরও লোকসানে পড়েছেন। বেকার একজন যুবক উদ্যোক্তা হয়ে যখন খামারের মুরগি পালন করত, তখন তার পরিবারে ইতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব পড়ত। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ খামার ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে প্রবাসের দিকে ছুটছেন। মীরসরাই প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, মীরসরাইয়ে প্রায় ৩০ হাজার খামারি রয়েছেন। এসব খামারে বয়লার, লেয়ার, সোনালি, দেশি মিলে প্রায় ৭ লক্ষ মুরগির রয়েছে। গরু, ছাগল, ভেড়া খামারে প্রায় ১ লক্ষ পশু রয়েছে এবং কবুতরের ৩০টি খামার ও কোয়েল এর ৫টি খামার রয়েছে। সারাদেশে খামারি পর্যায় গড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। অথচ এক কেজি ওজনের একটি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকা। খামারি পর্যায়ে মুরগির দাম কম হলেও ভোক্তা পর্যায়ে ১৬০-১৭০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগি। এছাড়া কেজিতে ২০-৪০ টাকা দাম বেড়ে সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৯০ টাকা, যা আগে ছিল ২৪০-২৫০ টাকা। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দুই থেকে তিন বছর আগে যেসব বেকার যুবক বা ব্যবসায়ী খামারে সফলতা লাভ করেছেন তার এখন চোখে ধোঁয়াশা দেখছেন। অনেকেই আবার পাঁচ বা ছয় হাজার সেটের মুরগির খামারকে ছোট করে দুই তিন হাজার সেটে পরিণত করেছেন। উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের চৎচরত এলাকার খামারী বিপ্লব দাশ ক্ষোপ প্রকাশ করে বলেন, ২০২১-২২ সালে প্রতিটি বস্তায় মুরগির খাদ্যের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি হয়েছে। আগে যে বস্তা আমরা ক্রয় করতাম ১৬৫০ টাকা দিয়ে। এখন তার কিনতে হচ্ছে ৩২৫০ টাকা দিয়ে এবং এক্ষেত্রে যদি নগদে না হয় তবে ৩৩০০ টাকা করে দিতে হয়। মীরসরাই পৌরসভার ফরহাদ হোসেন নামে একজন খামার ব্যবসায়ী দাবি করেন কিছুদিন আগে ডিমের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মানুষ ব্যাপক সমালোচনা করে। কিন্তু প্রতিটি ওষুধ এবং খাদ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যে ওষুধ আমরা ক্রয় করতাম ১৫০০ টাকা দিয়ে, এখন তা ক্রয় কত হচ্ছে ৩৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। মীরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: জাকিরুল ফরিদ বলেন, ‘ওষুধ এবং খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন মীরসরাইয়ের খামারিরা। ওষুধ এবং খাদ্যদ্রব্যের দাম শিগগিরই সহনীয় অবস্থায় না এলে খামার ব্যবসায়ীদের জন্য একটি দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। তিনি আরো বলেন প্রান্তিক খামারীদেরকে সরকারী ভাবে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া গেলে ঘুরে দাঁড়াবে এই সব প্রান্তিক খামারীরা।