শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৯ অপরাহ্ন

দেশে ফিরে ভালো-মন্দ কিছু অভিজ্ঞতা

ড. অজয় কান্তি মন্ডল
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২

চার বছরের প্রবাস জীবন শেষে সম্প্রতি দেশে ফিরেছি। এই দীর্ঘ সময়ে দেশের বা দেশের মানুষের যেসব পরিবর্তন আপাত দৃষ্টিতে নিজের গোচরে এসেছে তার সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরলাম। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর টার্মিনালে পৌঁছেই অফিসিয়াল ফরমালিটি শেষ করলাম। আমরা (আমি আমার স্ত্রী ও কন্যা) ভালোভাবে পৌঁছিয়েছি এই খবরটি বাসায় জানানোর জন্য মোবাইল বের করে দেখলাম আগের সিমকার্ড একটিও কাজ করছেনা। চীন ত্যাগ করার পূর্বে বাবাকে মোবাইল নম্বরে রিচার্জ করতে বললে কোন নম্বরে রিচার্জ সফল হয়নি। তখনই এমনটি সন্দেহ করেছিলাম। দীর্ঘদিন মোবাইলের সিমকার্ড ব্যবহার না করায় সেগুলো মোবাইল কোম্পানি বন্ধ করে দিয়েছে। বিমানের ভিতর থাকাকালীন অনেকেই বিষয়টি নিয়ে বলাবলি করলেও নিজে অতটা গুরুত্ব দেইনি। কেননা ভেবেছিলাম বিমানবন্দরের ওয়াইফাই দিয়ে প্রয়োজন মিটিয়ে নেব। কিন্তু ঝামেলাটা বাঁধল সেখানেই। বহু চেষ্টা করেও বিমানবন্দরের ওয়াইফাই এর সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারলাম না। বিমানবন্দরে থাকা ভলেন্টিয়ারদের সাথে কথা বললেও তাঁরা ওই সমস্যার সমাধান দিতে পারল না। বিকল্প কোন উপায় না দেখে আমি একজনের থেকে মোবাইল নিয়ে বাসায় কথা বলে জানিয়ে দিলাম আমরা ভালোভাবে পৌঁছিয়েছি। এরপর বেল্ট থেকে একেএকে নিজেদের লাগেজগুলো সংগ্রহ করলাম। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এবার তুলনামূলক একটু দ্রুতই লাগেজ পেলাম। পূর্বে বিমানবন্দরে পৌঁছে লাগেজ পাওয়া নিয়ে বিলম্বিত হওয়া সহ আরও অনেক ক্ষেত্রে বেশ খারাপ অভিজ্ঞতা আছে। তাই দ্রুততার সাথে লাগেজ বুঝে পেয়ে ভাবলাম হয়ত বিমানবন্দরের যাত্রীসেবার মান আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। এরপর বিমানবন্দরের বের হওয়ার পথে অবস্থিত কাউন্টার থেকে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করলাম খুলনা যাওয়ার উদ্দেশে। তাও প্রশান্তি যে অন্ততপক্ষে কোনরকম ঝামেলা ছাড়া সরাসরি একই গাড়িতে খুলনা পৌঁছাব। তাছাড়া উদ্দেশ্য ছিল একটু শান্তিতে ঘুমানো। তাই ভাড়ার তোয়াক্কা না করে একটি এসি মাইক্রোবাস নিলাম।
বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পথে দেখলাম আনসার সদস্যরা একরকম বলপূর্বক বহু মানুষকে আটকে রেখেছে। এসব মানুষের চোখে মুখে দীর্ঘ প্রতিক্ষার ছাপ। হয়ত বিদেশ থেকে তাঁদের কোন পরিবার বা পরিজন দেশে ফিরবেন সেই প্রতিক্ষায় তাঁরা প্রহর গুনছেন। কিন্তু বিমানবন্দরের কড়াকড়ি নিয়মের গেড়াকলে তাঁরা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে একজন অন্যজনের সাথে ঠেসাঠেসি করে দাঁড়িয়ে আছেন। বিমানবন্দর থেকে যখনই কেউ বের হচ্ছেন অপেক্ষারত সবার বহু প্রতিক্ষিত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি গিয়ে পড়ছে তাঁদের উপর। বাইরের দেশে দেখেছি বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পথে যাত্রীর স্বজনদের জন্য নির্ধারিত জায়গা আছে এবং সেগুলো বিমানবন্দরের বেশ ভিতর পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। দেশের প্রধান বিমানবন্দরে সাধারণ জনগণের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা যে বেশ অপ্রতুল তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই এসব অব্যবস্থাপনা দেশে গিয়ে প্রতিনয়ত মোকাবেলা করতে হবে সেটার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই চীন ত্যাগ করেছিলাম। কিন্তু বিমানবন্দরের ওয়াইফাই ব্যবহারের যে অব্যবস্থাপনা সেটা নিয়ে মেজাজটা একটু বিগড়ে গেল। যাই হোক, গ্যারেজ থেকে মাইক্রোবাসে উঠলাম এবং আমাদের যাত্রা শুরু হল। একটি দেশের জাতীয় এবং সর্ববৃহৎ বিমানবন্দরের প্রবেশপথ এবং বের হওয়ার পথের বেহাল অবস্থা দেখলে যেকোন মানুষের আফসোস হওয়ার কথা। আমাদের ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। আমাদের মাইক্রোবাসটি ভাঙাচোরা একটা রাস্তা দিয়ে লক্কর ঝক্কর করতে করতে মেইন রোডের গিয়ে উঠল। দেখতে পেলাম রাস্তার দু’পাশেই প্রচন্ড গাড়ির জ্যাম। আমাদের গাড়ির জানালার সবগুলো গ্লাস বন্ধ থাকার সত্ত্বেও চারিদিকের ইঞ্জিন ও হাইড্রোলিক হর্নের শব্দে কান ঝালাফালা হওয়ার উপক্রম। তাহলে যারা ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলছে বা পাবলিক পরিবহনে বসে আছে তাঁদের কাছে এই শব্দের মাত্রা কতটা অসহনীয় তা সহজেই অনুমেয়।
যেহেতু আমরা সবাই খুব ক্লান্ত তাই আমাদের গাড়ি মেইন রোডে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই আর চোখের পাতা খুলে রাখতে পারলাম না। সবাই ঘুমিয়ে গেলাম। গাড়ির ঘুম কখনোই আমার স্থায়ী হয়না। আধাঘণ্টা পরেই চোখ খুলে দেখলাম গাড়ি তখনো বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান করছে। চীনে থাকা অবস্থায় ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে ভালোরকম অভিজ্ঞতা ছিল। কেননা, চীনে যাওয়ার আগে ১৪ বছর ঢাকা শহরে থাকার অভিজ্ঞতা, ঢাকার এই ট্রাফিক জ্যাম সহ ঢাকাবাসীর যুদ্ধ করে টিকে থাকার যে সংগ্রাম সেটা সম্পর্কে ভালোই ধারনা আছে। তাই আধাঘন্টায় আধাকিলোমিটার দূরত্ব যাওয়াটাও তেমন অস্বাভাবিক মনে হয়নি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামার উপক্রম। এমন সময়ের এই ট্রাফিক জ্যাম দেখে একটু হলেও দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন নিয়ে মনে বিস্ময় জাগল। বুঝতে পারলাম ৪ বছরের আগের সেই ঢাকা শহরের অবস্থা বর্তমানে আরও বেহাল হয়েছে। জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে কিন্তু ঢাকা শহরের মানুষের জীবনমান যে অতিমাত্রায় কমেছে তা এই ট্রাফিক জ্যামের তীব্রতা এবং রাস্তা ঘাটের বেহাল দশা দেখে বুঝতে বাকি রইল না।
ইতোমধ্যে আমাদের গাড়ি প্রগতি সরণি দিয়ে রামপুরা-বাড্ডার দিকে এগুতে লাগল। ধারনা ছিল, কোনরকমে সায়েদাবাদ পেরোতে পারলেই আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব। কিন্তু সায়েদাবাদ পৌঁছে মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ধরতে ধরতে প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। অর্থাৎ বিমানবন্দর থেকে সায়েদাবাদ পৌঁছাতে সাড়ে চার ঘন্টার মত সময় লেগেছে আমাদের। বিমানবন্দর থেকে সায়েদাবাদ মোট দূরত্বকে সময় দিয়ে ভাগ করলেই আমাদের গতি পেয়ে যাওয়ার কথা। সেই হিসাবে না গিয়ে জোর গলায় বলা যায়, পায়ে হেঁটে রওনা দিলেও এর বহু আগে ওই পথ পাড়ি দেওয়া যায়। কিন্তু বাস্তব হলেও সত্য, এসব রাস্তার পাশ দিয়ে কোথাও পায়ে হাঁটার তেমন ফুটপাত নেই। ফুটাপাত থাকলেও সেগুলোর অধিকাংশ দোকান বা হকারদের দখলে। চলাচলকারী মানুষের তুলনায় যার আয়তন অপ্রতুল। এসব দেখতে দেখতে আমাদের গাড়ি মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেস ওয়ে ধরে এগুতে লাগল। এতক্ষণে চীনের রাস্তায় চলাচলের সামান্য স্বাদ পেলাম। কিন্তু কিছু বিষয় নিজেকে বেশ ভাবিয়ে তুলল। এক্সপ্রেস ওয়ে দিয়ে হাওয়ার বেগে ছুটে চলেছে মোটর বাইক। সব বাইকে একের অধিক যাত্রী নিয়ে কখনো আমাদের মাইক্রোবাসের পাশ দিয়ে শা শা করে অতিক্রম করে যাচ্ছে।
সব মোটরবাইকেই দুইজন করে যাত্রী। খেয়াল করলাম বেশিরভাগ বাইকে পেছনের জন মোবাইলে পুরোদমে ভিডিও করে চলেছে। আর চালক তাঁর যতরকম কারিশমা আছে তার সবটাই দেখাতে হেলেদুলে চলছে এবং সাইসাই করে এক একটা বাস, ট্রাক, ট্যাক্সি বা মাইক্রোবাস অতিক্রম করে যাচ্ছে। এসব বাইকের চালক হরহামেশাই তাঁদের চলাচলের লেন পরিবর্তন করে চলেছে। আমাদের মাইক্রবাসটিকেও এমন কয়েকটি মোটরবাইক অতিক্রম করেছে । চালকের পাশে বসে স্পিডোমিটারের দিকে তাকাতেই খেয়াল করলাম আমাদের মাইক্রোবাসের গতি তখন ৭০ কিমি এর ঘরে। একটি দেশের নবনির্মিত এক্সপ্রেসওয়ে সেখানে গাড়ির গতি ৮০-৯০ কিমি থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বীরদর্পে কোনরকম ট্রাফিক রুল না মেনে মোটরবাইকের এই বেপরোয়া গতি নিজেকে একটু ভাবিয়ে তুলল। চীনে যতরকম পরিবহন রাস্তায় দেখেছি, সবগুলোই যতরকম নিয়ম কানুন আছে সেগুলো মেনেই তাঁরা চালায়। চার বছরের মধ্যে কোথাও কোন দুর্ঘটনা বা অনিয়ম আমার গোচরে আসেনি। কোথাও শুনিনি যে রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় বা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে কেউ মারা গেছে। রাস্তায় কোন হর্নের শব্দ কখনো কানে আসত না। হাইড্রোলিক কোন হর্ন তো তাঁরা ব্যবহারই করেনা, সেইসাথে তাঁদের ভিতরে গাড়ি চালানোর সময় কোনরকম তাড়াহুড়ো বা আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা আমার নজরে আসেনি। কিছু কারণে এমনটি সম্ভব হয়েছে। যেমন চীনের রাস্তাগুলো খুবই প্রশস্ত এবং সেখানে মোটরবাইক, প্রাইভেটকার, বাস এগুলোর জন্য পৃথক পৃথক রাস্তা আছে। প্রতিটি রাস্তা একাধিক লেনে বিভক্ত। জনগণের হাটার জন্য ফুটপাতগুলো দৃষ্টিনন্দন। চীনের ট্রাফিক নিয়ম কানুন খুবই কড়া। কেউ ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ করলে তার জরিমানা, ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল সহ বেশ কিছু কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। সমস্ত রাস্তা, ট্রাফিক সিগন্যালগুলো ক্যামেরার আওতায় থাকায় একজন চালক গভীর রাতের নির্জনে বা একেবারে ফাঁকা রাস্তায়ও ট্রাফিক সিগন্যাল মানতে বাধ্য। আমাদের দেশের অর্থনীতি চীনের মত অতটা শক্তিশালী না তাই সবকিছু চীনের মত হতে হবে তেমনটা আশা করাও বোকামি। কিন্তু সদ্য নির্মিত এই এক্সপ্রেসওয়েতে যখন ট্যাক্সি, বাস, ট্রাক সহ বিভিন্ন যান চলাচলের সাথে পাল্লা দিয়ে মোটরবাইক চলবে সেখানে কর্তৃপক্ষের কিছু নিয়মনীতির কড়াকড়ি আরোপ করা উচিৎ ছিল বলে আমার মনে হয়।
তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হত।
অল্পসময়ের মধ্যেই আমরা পদ্মাসেতুর টোল প্লাজায় পৌঁছে গেলাম। মুহূর্তেই দীর্ঘ পদ্মা নদী পার হয়ে গেলাম। এই পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়ে কতবার কতরকমের ঝক্কি-ঝামেলায় পড়েছি সেটা বলে শেষ করা যাবেনা। তাই ৫ মিনিটের মধ্যে পদ্মাসেতু পার অনেকটা নিজের কাছে বিস্ময় লাগল। এটি বর্তমান সরকারের এক অভাবনীয় উদ্যোগ ও সাফল্য বলা যায়। সন্ধ্যায় সেতুর আলোর ঝলকানি অনেকটা উন্নত দেশের স্বাদ এনে দিল। আমরা খুলনা পৌঁছালাম। তবুও প্রশান্তি যে ভালোভাবে দেশে পৌঁছেয়েছি। পরেরদিন সকালে খুলনার নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম। উদ্দেশ্য ছিল একটি মোবাইল সিমকার্ড কেনা। যাত্রাপথে দেখলাম রাস্তায় সবখানেই মোটরচালিত রিক্সা এবং ইজিবাইক। খুলনা শহরের সমস্ত পথ ও অলিগলিতে এই যানবাহনের সংখ্যা এত বেশি, তা অবাক হওয়ার মত। খুলনায় আসার পর থেকে বেশ কয়েকবার লোডশেডিং এর সাক্ষাত পেয়েছি। বিশ্বমন্দা, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ নানাবিধ কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে এই লোডশেডিং ভাগে পড়বে সেটা দেশে ফেরার আগে মনস্থির করে এসেছি। কিন্তু দেশের মানুষের সৌখিনতা বা বিলাসতা বহু উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। যেখানে আগে মানুষ পায়ে হেঁটে বা পায়ে চালানো রিক্সায় চড়ে যাতায়াত করত সেখানে এখন সবজায়গায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক বা রিক্সা। জনগন আধা কিলোমিটার পথ যেতেও বেছে নিচ্ছে এসব বাহন। বিশ্বমন্দায় জ্বালানি সমস্যা আরও বেশি উস্কে দেওয়ার মত একটি বিষয় বিদ্যুতের সাহায্যে এই বিশাল পরিমান ইজিবাইক বা রিক্সা চার্জিত করা। সেইসাথে জনগণ ভুলতে বসেছে হেঁটে চলা বা কায়িক শ্রম করার বিষয়গুলি। এতে করে মানুষের ভিতরে যেমন জড়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক তেমন মুটিয়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়েবেটিসসহ নানান ধরণের জটিল রোগের প্রবণতা বেড়ে চলেছে। এসব নানান কিছু চিন্তা করতে করতে নিউমার্কেটের পাশে অবস্থিত একটি মোবাইল মার্কেটে গেলাম। প্রথমে একটি সিমকার্ড নিলাম। এরপর সেটি মোবাইলে ভরার পরে দেখলাম মোবাইলের ইন্টারনেটসহ কিছু অ্যাপস ভালো কাজ করছেনা। চীনে গুগল সাপোর্ট করেনা তাই চীন থেকে নিয়ে আসা মোবাইল ফোনে দেশে এসে সমস্যা হয়। বিষয়টা আমি ভালোভাবে অবগত। দোকানে মোবাইলটা ঠিক করতে দিয়ে বসে আছি। তখন দেখতে পেলাম মার্কেটে অনেক বেশি ভিখারির আনাগোনা। সবমিলিয়ে ঘন্টা খানিকের মত মোবাইলের দোকানে ছিলাম। এরমধ্যে কমকরে হলেও ১৫ জনের মত ভিখারির দেখা পেলাম। সুস্থ সবল এসব পুরুষ বা মহিলার হাতে একটি থালা বা বাটি এবং অনেকের কোলে বাচ্চাসহ এসেছে ভিক্ষা করতে। আগেরদিন যখন ঢাকা খুলনা হাইওয়ে দিয়ে আসছিলাম, তখন অবশ্য বেশ কয়েকটা সাইনবোর্ড চোখে পড়েছিল। সবগুলোতে লেখা ছিল ‘ভিখারি মুক্ত উপজেলাতে আপনাকে স্বাগতম’। এই ভিখারি মুক্ত উপজেলা সম্বলিত সাইন বোর্ড চোখে দেখলে আমার মনে হয়, উপজেলার সব ভিখারিগুলো হয়ত শহরে চলে গেছে। তা না হলে শহরে এত ভিখারি কোথা থেকে এল! ভিক্ষা করা এসব মহিলা বা পুরুষ যথেষ্ট কর্মঠ। তার পরেও তাঁরা ভিক্ষুকের মত এমন পেশাকে কেন বেছে নিয়েছে সেটি আমার বোধগম্য হলনা।
সার্বিক দিক বিবেচনায় মনে হল, চার বছরে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। কেননা, পেট বাঁচাতে হলে ক্রয় করতে হবে। আর সকল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই পেট বাঁচানোর খাবার কিনতেও ব্যয় হচ্ছে বেশি টাকা। তাই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে সেটাই স্বাভাবিক। একজন নিরক্ষর লোকও এই সহজ হিসাবের সাথে একমত হবে। কিন্তু ক্রয়ক্ষমতার সাথে আয়ের ও একটা সামঞ্জস্য থাকা উচিৎ। যেন একটি বাড়লে অপরটি বাড়ে সেদিকে দেশের নীতি নির্ধারকদের সজাগ দৃষ্টি দেওয়া আবশ্যক। তা না হলে বাড়তি ব্যয় সামাল দিতে গিয়ে জনগণ ঘুষ, দুর্নীতি সহ নানান অপকর্মে লিপ্ত হবে। লেখকঃ গবেষক ও কলামিস্ট।
Email: ajoymondal325@yahoo.com




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com