রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে সফররত ব্রুনাই’র সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়াহ মুইজাদ্দিন ওয়াদুল্লাহ এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী এবং রাজনীতিবিদ ভোজ সভায় যোগ দেন। এর আগে বঙ্গভবনের দরবার হলে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সুলতান বঙ্গভবনে এসে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি হামিদ একটি ফুলের তোড়া দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। রাষ্ট্রপতি, ব্রুনাই’র সুলতান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ শিল্পকলা আয়োজিত প্রায় ২৫ মিনিটব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠানে কয়েকজন মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ এবং উচ্চ পদস্থ সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তাগণ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। ব্রুনাই’র সুলতান প্রথমবারের মতো দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ ঢাকায় আসেন। হযরত শাহ্ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়।
সুলতান এবং তাঁর প্রায় ৪২ জন সফরসঙ্গীকে বহনকারি রাজকীয় ব্রুনাই এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইট ২টা ২৪ মিনিটে হযরত শাহ্ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরন করে।
আরো জনবল নিয়োগে ব্রুনাই’র সুলতানকে অনুরোধ রাষ্ট্রপতির : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মুসলিম দু’টি দেশের বৃহত্তর সুবিধার্থে বাংলাদেশ থেকে আরো অধিক হারে জনবল নিয়োগের জন্য ব্রুনাই’র সুলতানের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। বাংলাদেশের বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ বিদ্যমান রয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি ব্রুনাইয়ের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করারও আহ্বান জানান।
সফররত ব্রুনাই দারুসসালামের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহ আজ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি হামিদের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। বঙ্গভবন সুত্র বাসসকে জানায়, রাষ্ট্রপতি ব্রুনাইর সুলতানকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে বলেন, সুলতানের প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফর ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়। তিনি বাংলাদেশের আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়লগ পার্টনার স্ট্যাটাস পেতে ব্রুনাই’র সমর্থন প্রত্যাশা করেন। রাষ্ট্রপতি হামিদ ব্রুনাইতে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিনামূল্যে করোনার ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য সুলতানকে ধন্যবাদ জানান। তিনি দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধির উপরেও গুরুত্বারোপ করেন। রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন দানের জন্য সুলতানকে ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন যে এই ইস্যুতে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। তিনি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে দ্রুত প্রত্যাবর্তনে সুলতানের সহযোগিতা কামনা করেন। সুলতান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতের সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বৈঠকের পরে সুলতান বঙ্গভবনের ‘দর্শনার্থী বইতে’ও স্বাক্ষর করেন। এর আগে সন্ধ্যায় তিনি বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশী, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম এবং সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান এসময় উপস্থিত ছিলেন।