শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩১ অপরাহ্ন

খেজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত “শিয়ালী”

মণীষ চন্দ্র বিশ্বাস গৌরনদী :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২

বৈচিত্র্যপূর্ণ ছয় ঋতুর দেশ আমাদের,এক একটি ঋতুর রয়েছে এক এক রকম বৈশিষ্ট্য।বাংলার প্রকৃতির ঋতুবৈচিত্র্যে এখন হেমন্তের মাঝামাঝি, দিনে মিষ্টি রোদ, ভোরে পাতায় শিশির বিন্দু, হালকা কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। একই সঙ্গে খেজুরের রস সংগ্রহ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিয়ালী।তারা কার্তিকে খেজুর গাছ চাঁছতে (স্থানীয় শব্দ-ঝোড়া) শুরু করেছেন। কাজ শেষে অগ্রহয়ণে গাছ শুকানো নল লাগানো শেষে রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করা হয়।তবে আরও দুইসপ্তাহ পর খেজুর গাছ থেকে বেশি রস সংগ্রহ করতে পারবে শিয়ালিরা।খেজুর গাছ একবার চাঁছলে তিন-চার দিন রস সংগ্রহ করা যায়। তারপর তিনদিন গাছ শুকাতে হয়। শুকনো গাছের রস সুমিষ্ট হয়।শীত বাড়বে, তত খেজুরের রস সংগ্রহ হবে। খেজুরের রস সংগ্রহ করে রস থেকে পাটালি গুড় তৈরি শুরু হয়ে চলবে মাঘ মাস জুড়ে। শনিবার (১২ নভেম্বর) সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়,সকাল থেকে গাছিরা খেজুরের গাছগুলো পরিচর্যা করছেন।ঝুঁকি নিয়ে মাজায় রাবারের বেল্ট ব্যবহার করছেন। রোদ্রে খেজুর গাছ শুকানোর পর মাটির হাঁড়ি গাছে বাঁধছেন।এখনকার রস প্রচুর সুস্বাদু ও মিষ্টি। কেউবা কাঁচা রস সংগ্রহ করে হাট-বাজারে বিক্রি করেন। কেউ কেউ আবার ঝোলা গুড় বানানোর চেষ্টা করছেন। গ্রামাঞ্চলে পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু, বাড়ির আঙিনায় খেজুরের গাছ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্য ছিল। ঝোপঝাড়ে, ক্ষেতের আইলে, গ্রামের মেঠোপথের দুই ধারে অসংখ্য খেজুরের গাছ কোন পরিচর্যা ছাড়া বড় হতো। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি হতো সুস্বাদু খেজুরের পাটালী গুড়।অগ্রহায়ণ মাসে গ্রামাঞ্চলে গাছি পুরোদমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা নিয়ে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। একদিকে নতুন ধানের চাল, আর খেজুরের রসে তৈরি হতো নানা প্রকার পিঠা-পায়েস। বাড়িতে বাড়িতে নবান্নের উৎসব দেখা যেতো। যা এখন বিলুপ্ত সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার এ ঐতিহ্য।জনপদের সাধারণ মানুষ সচেতন না হওয়ার কারণে পরিবেশবান্ধব এ খেজুরের গাছ ইট ভাটায় জ্বালানি হিসাবে বেশি ব্যবহার করার কারণে খেজুর গাছ চোখে পড়ে না।কমছে শুধুই খেজুর গাছের সংখ্যা।সময়ের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবন-যাপনের হারিয়ে যাচ্ছে দেশের প্রচলিত সংস্কৃতি।বরিশাল জেলার গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় বড় আকৃতির খেজুর গাছ ছিল ও দেখা যেতো। যা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছেন সেই খেজুরের গাছ। এখন গৌরনদী উপজেলা শহরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে কোথাও খেজুরের গাছ চোখে পড়ে না। প্রতিটি অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে।সচেতন মহল মনে করেন, খেজুর গাছ আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সাহিত্য তথা জীবনধারায় মিশে আছে। এই ঐতিহ্যকে যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করতে হবে।গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া প্রতিবছর শীতের শুরুতেই খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু হয়।এবারও খেজুরের গাছ কাটার কাজ শেষ করেছেন গাছি বা শিয়ালীরা। উপজেলার শিয়ালি জালাল মিয়া, লোকমান হোসেন ও শাহ আলম জানান, অন্য মৌসুমে তাঁরা বিভিন্ন কাজ করেন, কিন্তু শীত এলেই তাঁরা খেজুরগাছ কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন।শিয়ালী বলেন নিজেদের কোনো গাছ নেই।অন্যের গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতে হয়।গাছের মালিককে রসের একটা অংশ দিতে হয়।তারপর প্রতিবছর তাঁরা রস ও গুড় বিক্রি করে উপজেলার হাটবাজারসহ পাড়া মহল্লায়।গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম,ও আগৈলঝাড়া কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় জানান, প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে খেজুরগাছের ভূমিকা অপরিসীম।এই উপজেলায় এখনো বেশ কিছু খেজুরের গাছ দেখা যায়।খেজুরগাছ ও রসের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে তা দিন দিন কমছে ও হাঁরিয়ে যাচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com