আজ ১৫ নভেম্বর। আজ থেকে ঠিক ১৫ বছর আগে এইদিনটি উপকূলবাসীর ইতিহাসে একটি বিভীষিকাময় দিন। গ্রীষ্মম-লীয় সামুদ্রিক প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডর প্রচ- শক্তি নিয়ে আঘাত হানে দেশের উপকূলীয় ১১টি জেলায়। ঝড়টি ভূমিতে আছড়ে পড়ার সময় প্রথম এক মিনিটে বাতাসের বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল প্রতিঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার, যা একে সাফির-সিম্পসন স্কেলে ক্যাটাগরি-৫ এর সাইক্লোনে পরিণত করে। এতে মূহূর্তেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূলীয় এলাকাগুলো। সিডরের কালো রাতের ভয়াল দূর্যোগ গোটা উপকূলবাসীকে এখনও তাড়া করে ফিরছে। আজও উপকূলের বিভিন্ন জনপদে কান পাতলে শোনা যায় স্বজনহারাদের দীর্ঘশ্বাস। বিভীষিকাময় দিনটি মনে পরলেই এখনো আঁতকে ওঠেন উপকূলের মানুষ। উপকূলের মানুষের স্মৃতিতে আজো ভেসে ওঠে শত শত মানুষের চিৎকার আর স্বজনদের বাঁচার আকুতি। শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ ওই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়ে ছিল কয়েক হাজার মানুষ। নিখোঁজ হয়েছিল আরও সহস্রাধিক এর বেশি। এছাড়াও বঙ্গোপসাগরে থাকা ৫ শতাধিক মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারের ৩ হাজার জেলে নিখোঁজ হয়ে যায়, স্থানীয় কৃষি খাত প্রচ- ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিপুল পরিমাণ ধানী জমির ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। যা দুর্যোগ পরবর্তীকালে মোট ক্ষতি ২১০ কোটি ডলার হিসাব করা হয়েছিল। ঘরবাড়ি আর সহায় সম্বল হারিয়ে মানুষ হয়ে পড়ে অসহায়। বাঁধ ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সব কিছু। সিডরের ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত ধকল কাটেনি উপকূলবাসীর। ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন নিহতের স্বজনরা। এখনও ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোয় নির্মাণ হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ। ফলে এখনও আতঙ্কে দিন কাটে উপকূলবাসীর।
প্রলয়ঙ্কারী সিডরে ক্ষয়ক্ষতি ॥ সরকারি হিসাবে বাগেরহাট ও বরগুনাকে সিডরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
বরগুনা জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুসারে, সিডরে এ জেলায় প্রাণ হারান ১ হাজার ৩৪৫ মানুষ। নিখোঁজ হন ১৫৬ জন। ৩০ হাজার ৪৯৯ টি গবাদি পশু ও ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯ টি হাঁস-মুরগী মারা যায়। ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬১ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সম্পূর্ন গৃহহীন হয়ে পড়ে ৭৭ হাজার ৭৫৪ টি পরিবার।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুসারে, সিড়রে জেলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৯০৮ জন। তবে বেসরকারী হিসাবে প্রাণহানীর এ সংখ্যা ছিলো পাঁচ হাজারের বেশী। সিডরের আঘাতে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছিল জেলায় ৬৩ হাজার ঘরবাড়ি। আহত হয়েছিল ১১ হাজারের বেশী মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দুই লাখ ৮৩ হাজার ৪৮২ টি পরিবার, ৩৬৭ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৮৬২ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, প্রায় ৬৫ কিলোমিটার বাঁধ এবং ৭৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলা, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠিসহ উপকূলীয় ১৬ জেলায় ধব্বংসের ছাপ রেখে যায় সিডর।
আজও থামেনি জেলে পরিবারগুলোর কান্না ॥ সিডরে বঙ্গোপসাগরে থাকা ৫ শতাধিক মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারের ৩ হাজার জেলে নিখোঁজ হয়ে যায়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ জেলেদের। নিখোঁজ এসব জেলেরা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তাও জানেনা পরিবারের সদস্যরা। তবে তাদের পরিবারের সদস্যরা আজো তাদের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে। থামেনি স্বজনহারাদের কান্না। সিডরের কথা মনে করে এখনও আঁতকে ওঠেন তারা। স্বজন হারানোদের ব্যথায় এখনো আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলার জেলে পল্লিতে। নিখোঁজ জেলেদের ফিরে আসার প্রতিক্ষায় প্রহর গুনছেন স্বজনরা। ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের কূলগাজী গ্রামের সহিজল মাঝি সিডরে আঘাত হানার সময় মাছ ধরতে গিয়ে ছিলেন সাগরে। তিন মেয়ে তিন ছেলে, মা-বাবা আর স্ত্রী রেখে সেই যে গেলেন আর ফিরে এলেন না। আসবেন কিনা তাও জানে না তার পরিবার। এখনো তার ফিরে আসার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন সহিজলের স্ত্রী। স্বামীর কথা বলতে গেলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। সহিজলের স্ত্রী বলেন, সিডরের সময় সে নদীতে গেছে। বোটে মাছ ধরতে। সে বোট পইর্যা গেছে। আর সে ফিরর্যা আসে নাই। আর আসবে নাকি হেও জানিনা, আল্লাপাক জানে। ছেলে-সন্তান নিয়া খুব অসহায় আছি। সংসার খুব কষ্টে চলে। একই গ্রামের কাদির গাছালির মেয়ে জামাই মিলন মাঝিও মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ হারালেন। নিজে সাগরে গিয়ে ডুবে মরে পরিবারকে ফেলে দিয়ে গেলেন বাস্তবতা নামের অথৈ সাগরে। তার স্ত্রী-পূত্র কন্যা সবাই এখন ছন্নছাড়া সংসারহারা।
স্মৃতিতে সিডর ॥ ‘‘সিডরের কথা মনে হইলে আইজও কইলজাটা কাইপ্পা ওডে, রাইতে ঘুমাইতে পারি না। বড় বড় গাছ পরার ছবি এহনও চোহে ভাসে। মোর ঘরটা পালকের মতো উঠাইয়া নিয়ে গ্যালো। চাতুর দিকে চাইয়া দেহি পানি আর পানি। ব্যানে উইড্ডা দেহি মোর ছাগল-গরু আর নাই। সিডরের দিনের ভয়াল স্মৃতি এমনভাবেই প্রকাশ করছিলেন ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া গ্রামের ফিরোজ মিয়া। তার মতো এমন দুঃসহ স্মৃতি আজও বয়ে বেড়ান উপকূল অঞ্চলের অসংখ্য মানুষ।’’ ‘‘বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা গ্রামের তাসলিমা আক্তারের বাবা-মা আর ছেলের প্রাণ কেড়ে নেয়। একইভাবে গ্রামের আবাদুস সাত্তার সেদিনের প্রবল জলোচ্ছ্বাসের মুখে ধরে রাখতে পারেনি নিজের তিন প্রাণপ্রিয় সন্তান আর স্ত্রীকে। তাদেরকে প্রতিদিন তাড়িয়ে বেড়ায় সেই ভয়াল স্মৃতি। তসলিমা আক্তার আর আবদুস সাত্তার বলেন, সেদিন রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে তারা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। বাইরের আবহাওয়া ছিল খারাপ। সন্ধ্যা থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। সন্ধ্যা থেকেই তারা শুনছিলেন রেডিওতে বিপদ সঙ্কেতের কথা। তবে তারা বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবেননি। গ্রামের অনেকে গেছেন কাছেপিছে আশ্রয়কেন্দ্রে বা স্কুলে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ শুরু হয় প্রবল ঝড়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই উড়িয়ে নিয়ে যায় আশ্রয়, আর সেই সঙ্গে যেন সাগর ভেঙে পানি ঢুকে পড়ে বাড়িঘরে। বলেন সাত্তার। পরদিন ভোরের আলো ফুটে উঠতেই তসলিমা ও সাত্তার খুঁজে পান পরিবারের সদস্যদের নিথর দেহ। তবে অনেকের কোনো খোঁজই পায়নি উপকূলবাসী, ভেজা চোখে জানান এই দুজন।’’ ‘‘বলেশ্বর নদীর তীরে বাড়ি। ছোটবেলা থেকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে বড় হয়েছি। ঐ দিন সন্ধ্যা থেকেই একটু বৃষ্টি ও সামান্য বাতাস হচ্ছিল। ভাবছিলাম এটাতো মাঝেমধ্যেই হয়। আব্বার সঙ্গে পরামর্শ করে সবাই ঘরেই থাকলাম। আনুমানিক রাত ১১টার দিকে হঠাৎ বাতাসের বেগ বাড়লো। সবাইকে বললাম দ্রুত ঘর থেকে বের হও। আমিও মুহূর্তের মধ্যে ঘর থেকে বের হয়ে পুরাতন বেড়িবাঁধের মধ্যে থাকা নুর মোহাম্মাদের বাড়িতে গিয়ে উঠি। মাত্র ৫ মিনিটের ব্যবধানে কয়েক ফুট উচ্চতার পানির স্রোত আসে। নুর মোহাম্মাদের ঘরের সব দরজা খোলা ছিল। তার ঘরের মধ্যে যখন চার ফুট পানি প্রবেশ করে তখন সাঁতরে বের হয়ে যাই। পানির ¯্রােতে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছিল তারপরও অনেক কষ্টে পাশের বাড়ির আব্দুল মল্লিকের বাড়ির একটি গাছে উঠে জীবন রক্ষা করেছিলাম। সবকিছুই হয়েছিল বড় অল্প সময়ের মধ্যে। ফজরের আজানের পরে আমি গাছ থেকে নেমে বাড়িতে এসে দেখি আমাদের ঘরের কোনো চিহ্ন নেই। ঘরে থাকা বাবা,মা,ছোট দুই ভাই ও এক বোনকে আর খুঁজে পেলাম না। পরবর্তীকালে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজির পর ধান ক্ষেতের মধ্যে বাবা, মা ও এক ভাইয়ের মরদেহ পাই। আর এখনো পর্যন্ত বাকি ভাই-বোনকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। কান্না জড়জড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে বাবা-মাসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হারানো শরণখোলা উপজেলার উত্তর সাউথখালী গ্রামের লাল মিয়া হাওলাদারের ছেলে বাদল হাওলাদার। সিডরের ক্ষত কাটিয়ে উঠলেও দুঃসহ স্মৃতি এখনো কাঁদায় বাদলকে। মনে পড়লেই আঁতকে ওঠেন স্বজন হারানোর বেদনায়।’’
১৯ কবরে ৩৩ লাশ ॥ সিডরে বরগুনা সদরের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম নলটোনা। এখানে তখন কোনো বেড়িবাঁধ ছিল না। জলোচ্ছ্বাসে এ গ্রামে প্রায় ২০ ফুটের মতো পানি আছড়ে পড়ে। পরের দিনই সেখানে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের লাশ পাওয়া যায়। তখনো এলাকাটি ছিল পানির নিচে। লাশ দাফনের জন্য স্থান খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাদের স্বজনরা। তখন লাশ নিয়ে দাফন করা হয় কিছুটা দূরে বরগুনা-নিশানবাড়িয়া সড়কের পাশে পশ্চিম গর্জনবুনিয়া গ্রামে। দাফনের কাপড় ছাড়াই ৩৩ জনকে ১৯টি কবরে মাটিচাপা দেয়া হয় বলে জানান গ্রামের বাসিন্দারা।
তারা জানান, জায়গার অভাবে ৫টি কবরে ৩ জন করে, ৪টি কবরে ২ জন করে ও আলাদা ১০টি কবরে ১০ জনকে শায়িত করা হয়। বরগুনা প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা সংগ্রাম সম্প্রতি কবরস্থানটি পাকা করে দিয়েছে। সারিবদ্ধ কবর দেখে দূর-দূরান্তের মানুষ এখানে এসে থমকে দাঁড়ায়। গ্রামের মানুষদের সারা বছরই স্বজনদের কথা মনে করে এখানে দাঁড়িয়ে নীরবে অশ্রু ফেলতে দেখা যায়।
বাকেরগঞ্জ ঘূর্ণিঝড় ॥ প্রাণহানি ও ভয়ঙ্করের দিক থেকে পৃথিবীর ঘূর্ণিঝড়ের ইতিহাসে ষষ্ঠস্থান দখল করে আছে বাকেরগঞ্জ ঘূর্ণিঝড়। ১৮৭৬ সালের ৩১ অক্টোবর বাকেরগঞ্জের উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই ঘূর্ণিঝড় ‘দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ ১৮৭৬’ নামেও পরিচিত। ওই ঝড়ে আনুমানিক দুই লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। পরবর্তী সময়ে আরও বেশি মানুষ মারা যায় দুর্যোগপরবর্তী মহামারী এবং দুর্ভিক্ষে।
এরআগে ১৯৬০ সালে অক্টোবর মাসে ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার গতির প্রবল ঘূর্ণিঝড় আঘাতহানে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বাকেরগঞ্জ, ফরিদপুর, পটুয়াখালী ও পূর্ব মেঘনা মোহনায়। ওই ঝড়ে প্রায় ১০ হাজার ?মানুষ মারা যায়। পরের বছর ১৯৬১ সালের ৯ মে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আঘাতহানে বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলে। সে সময় প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মানুষ মারা যান। ১৯৬২ সালের ২৬ অক্টোবর ফেনীতে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৬৩ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার এবং সন্দীপ, কুতুবদিয়া, হাতিয়া ও মহেশখালী উপকূলীয় অঞ্চল। ওইসময় প্রাণ হারান ১১ হাজার ৫২০ জন।
১৯৬৫ সালের ১২ মে ঘূর্ণিঝড়ে বারিশাল ও বাকেরগঞ্জে প্রাণ হারান ১৯ হাজার ২৭৯ জন। সে বছর ডিসেম্বরে আরেক ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজারে মৃত্যু হয় ৮৭৩ জনের। পরের বছর অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে সন্দীপ, বাকেরগঞ্জ, খুলনা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লায়। এতে মারা যান ৮৫০ জন।
গ্রেট ভোলা সাইক্লোন ॥ ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকুলীয় এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রলয়ঙ্করী ‘গ্রেট ভোলা সাইক্লোন’। ওই ঝড়ে চট্টগ্রাম, বরগুনা, খেপুপাড়া, পটুয়াখালী, ভোলার চর বোরহানুদ্দিনের উত্তরপাশ ও চর তজুমুদ্দিন এবং নোয়াখালীর মাইজদি ও হরিণঘাটার দক্ষিণপাশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ঝড়ে প্রাণ হারায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ।
১৯৮৮ সালের নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায় যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা। ওই ঝড়ে পাঁচ হাজার ৭০৮ জন প্রাণ হারিয়েছে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড় কেড়ে নেয় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষের জীবন।
এখনো দাঁড়াতে পারেনি উপকূলবাসী ॥ সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও উপকূলবাসীর দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত খুব কম মানুষকেই পুনর্বাসন করতে পেরেছে সরকার। বেশিরভাগ মানুষের দিন কাটছে চরম দুঃখ-দুর্দশার মধ্যদিয়ে।
আজও হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ ॥ সিডরের ১৫ বছর পার হলেও নির্মিত হয়নি উপকূলীয় রক্ষাবাঁধ। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে অতিবর্ষণ কিংবা আমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে যায় ফসল-ফলাদি। তলিয়ে যায় মাছের ঘেরসহ পুকুর। আমনচাষে সমস্যা হয়। লবণ পানি উঠে নষ্ট হয় ফসল। শক্ত বেড়িবাঁধ না হওয়ায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের খবরে আতঙ্কে থাকে উপকূলবাসী। ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদী তীরবর্তী এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় এখনো দুর্যোগ ঝুঁকিতে দিন পার করছে জেলার অনেক পরিবার। সূত্রমতে, টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় ২০০৮ ঘূর্ণিঝড় নার্গিস, ২০০৯ আইলা, ২০১৩ মহাসেন, ২০১৫ কোমেন, ২০১৬ রোয়ানু, ২০১৭ মোরা, ২০১৯ ফণী ও বুলবুল, ২০২০ আমফান, ২০২১ ইয়াস, ২০২২ সিত্রাং এর প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে উপকূলীয় জেলাগুলোতে। তাই আজও ত্রানের পরিবর্তে টেকসই বেড়িবাঁধ চায় উপকূলবাসী।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, বিষখালী তীরে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাব পাঠানো আছে। যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হয় সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
নভেম্বর মানেই আতঙ্ক ॥ ১৭৯৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ওপর শুধু নভেম্বর মাসেই ১১টি মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। যার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি, গৃহপালিত ও বন্য পশুর মৃত্যুর পাশাপাশি সম্পদহানীর ঘটনা ঘটেছে। তাই উপকূলবাসীর মধ্যে নভেম্বর মাস আলাদা একটি আতঙ্কের মাস।