প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কোনো কিছু কেনা, গ্রহণ করা বা খাওয়াকে বলা হয় অপচয়। অপচয়ের কারণে আমাদের পড়তে হয় নানা সমস্যায়। তা ছাড়া বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে অপচয় করা বৃহৎ মানবজাতির জন্যই হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপচয়ের ফলে প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অপচয়কারী নিজে, তারপর সে ক্ষতির প্রভাব পড়ে গোটা দেশের সাধারণ মানুষের জীবন ও অর্থনীতির ওপর।
বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কটকালে প্রতিটি দেশেরই অবস্থা কমবেশি বেগতিক। এক দিকে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার, অন্য দিকে জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য জোগানের চিন্তা করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্য বা অর্থের অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে ভয়াবহ বিপদের কারণ।
আসন্ন বিপদকে মোকাবেলার জন্য আমাদের হতে হবে আরো সচেতন, আরো মিতব্যয়ী। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো কিছু ক্রয় বা গ্রহণ তো নয়ই; বরং চেষ্টা করতে হবে ন্যূনতম মাত্রায় প্রয়োজন মেটানোর।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা অপচয় করাকে নিষেধ করেছেন। সূরা আনআমের ১৪১ নং আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে, ‘…তোমরা এগুলোর ফল খাও যখন তা ফলবন্ত হয় এবং ফসল কাটার দিন এগুলোর হক আদায় করো (ওশর)। আর তোমরা অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপব্যয়কারীদের ভালোবাসেন না।’
অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সূরা আরাফের ৩১ নং আয়াতে। সেখানে বলা হয়েছে- ‘হে আদম বংশধর! প্রত্যেক ইবাদতের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান করো। তোমরা খাও ও পান করো; কিন্তু সীমা অতিক্রম করো না (অপচয় করো না), আল্লাহ সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না।’
আর যারা অপচয় করে তাদের উদ্দেশে মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা বনি ইসরাইলের ২৯ নং আয়াতে বলেছেন- ‘আর তুমি তোমার হাত গলায় বেড়ি করে রেখো না (অর্থাৎ কৃপণ হয়ো না) এবং তাকে একেবারে খুলেও দিয়ো না (অর্থাৎ অপচয় করো না)। তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে যাবে।’
বোঝা গেল, অপচয় ও কৃপণতা করার মধ্যে কোনো ধরনের উপকারিতা নেই; বরং অপচয়কারীকে দুনিয়া ও পরকাল উভয় জগতে লাঞ্ছিত-অপমানিত হতে হবে। অন্য আয়াতে এসেছে- ‘নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ।’ (সূরা বনি ইসরাইল-২৭)
রাসূল সা: বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দার তিনটি কাজ অপছন্দ করেন- ১. অনর্থক কথাবার্তা বলা; ২. সম্পদ নষ্ট করা এবং ৩. অত্যধিক প্রশ্ন করা।’ (সহিহ বুখারি-১৪৪৭)
সম্পদ যখন নির্ধারিত খাতে নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্যয় করা হয় তখন সেটিকে সম্পদ নষ্ট করা বলা হয় না। নষ্ট করার অর্থ হচ্ছে- কোনো খাতে অতিরিক্ত সম্পদ খরচ করা বা অপ্রয়োজনীয় খাতে বিন্দু পরিমাণও ব্যয় করা।
অপচয় বাদ দেয়া মানে আমি কৃপণতার নীতি গ্রহণ করাকে বুঝাচ্ছি না। শরিয়তের দৃষ্টিতে কৃপণতাও অপচয়ের মতোই নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। আমি বলতে চাচ্ছি, আমাদের মধ্যপন্থা অবলম্বন করা উচিত। কেননা, মধ্যপন্থাই উত্তম পন্থা। রাসূলুল্লাহ সা: নিজেও সর্বদা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতেন। প্রকৃতপক্ষে, মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা ও রাসূলুল্লাহ সা:-এর দেখানো পথই সর্বোত্তম ও সার্বজনীন।
মানবজাতিকে মধ্যমপন্থা ও মিতব্যয়ী হওয়ার নসিহত প্রদান করে পবিত্র কুরআনে এসেছে একাধিক নির্দেশনা। সূরা ফুরকানের ৬৭ নং আয়াতে উল্লেখ আছে, ‘তারা যখন ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না বা কৃপণতা করে না; বরং তারা এতদুভয়ের মধ্যবর্তী অবস্থায় থাকে।’
ঈমানদার ব্যক্তিদের পরিচয় দিতে গিয়ে এই আয়াতটির অবতারণা করা হয়েছে। তার মানে, মিতব্যয়িতা বা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা ঈমানদার মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই অর্থে বলা যায়, অপরিমিত খরচ তথা অপচয় এড়ানো ঈমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দাবি।
লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়