আল্লাহর নাজিল করা সর্ব শেষ গ্রন্থ কুরআনুল কারিম। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর হেদায়েত ও কল্যাণের জন্য নাজিল করেছেন। এ পবিত্র গ্রন্থের মাধ্যমেই মানুষ খুঁজে পায় আলোর দিশা। সঠিক পথের সন্ধান। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর নিশ্চয়ই এটা মুমিনদের জন্যে হেদায়েত ও রহমত।’ (সুরা নমল : আয়াত ৭৭) জাহেলিয়াত তথা অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে আলোর পথে দিশারী হয়ে এসেছে পবিত্র কুরআনুল কারিম। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘অবশ্যই তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও সুস্পষ্ট গ্রন্থ এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তাঁর সন্তুষ্টির অনুসরণ করে এবং তাঁর অনুমতিতে তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হেদায়াত দেন।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ১৫-১৬) কুরআনুল কারিমের তেলাওয়াত, অধ্যয়ন ও শিক্ষা গ্রহণ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে মানুষ পথহারা হয়ে যাচ্ছে। অথচ মুমিন মুসলমান যদি নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন করে তবে তা থেকে পায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকার। তাই নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন করা খুবই জরুরি। কুরআনুল কারিম অধ্যয়নে যেসব উপকার পায় মুমিন, তাহলো-
হেদায়েত বা আলোর সন্ধান: কুরআনুল কারিমের রয়েছে মুমিন মুসলমানের জন্য হেদায়েত ও পথ নির্দেশ। ব্যক্তি, পারিবার, সামাজ কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবন কীভাবে পরিচালিত হতে হবে তার প্রতিটি বিষয় রয়েছে এ কুরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আমি তোমার জন্য কিতাবটি নাজিল করেছি। এটি এমন যে তা সবকিছুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, আর এটা হেদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ স্বরূপ।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৮৯)
ঈমান বৃদ্ধি: কুরআনুল কারিম তেলাওয়াত ও অধ্যয়নে মুমিন বান্দার ঈমান বেড়ে যায়। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- ‘যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কুরআনের আয়াতসমূহ, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা নিজ প্রভুর প্রতি ভরসা পোষণ করে।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ২)
অন্তরে প্রশান্তি লাভ: কুরআনের অধ্যয়ন অশান্ত ও হতাশাগ্রস্ত আত্মা প্রশান্তি লাভ করে। আর তাও ওঠে এসেছে কুরআনে- ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।’ (সুরা রাদ : আয়াত ২৮)
কুরআনের সুপারিশ লাভ: কুরআনুল কারিম কেয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন-
হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কুরআন তেলাওয়াত কর, কারণ কুরআন কেয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।’ (মুসলিম)
জান্নাতে লাভ: প্রত্যেক মুমিনের সর্বোচ্চ কামনা হলো জান্নাত। কুরআন তার তেলাওয়াতকারীর জন্য জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম হবে। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজা ও কুরআন কেয়ামাতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, রোজা বলবে- হে আমার রব! আমি দিনের বেলায় তাকে (এ রোজাদারকে) পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। অনুরূপভাবে কুরআন বলবে, হে আমার রব! আমাকে অধ্যয়ন করার কারণে রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ) সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করা। কুরআন অধ্যয়ন করে নিজেদের জীবনে তার বাস্তবায়ন করা। আর তাতেই উল্লেখিত প্রতিদানগুলো পাবেন মুমিন।
আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে কুরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন করার তাওফিক দান করুন। কুরআনের হেদায়েত ও জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।