পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল (অব.) পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন। সাবেক এ সামরিক শাসক দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর গতকাল রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা যান। পাকিস্তানের স্থানীয় গণমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। পারভেজ মোশাররফের বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। দুবাইয়ের একটি আমেরিকান হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের আইএসপিআর বলেছে, জেনারেল মুশাররফের মৃত্যুতে তারা শোকাহত। তার অসুস্থতার ব্যাপারে ২০২২ সালে জানানো হয়েছিলো জেনারেল মুশাররফ অ্যামিলয়ডোসিস নামে এক জটিল রোগে ভুগছেন। এ রোগে মানব শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে বিকল হয়ে যেতে থাকে। জেনারেল মুশাররফের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট, ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল মুশাররফ। এরপর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।
জেনারেল মুশাররফ ২০০৭ সালে সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারি করেন, যার মাধ্যমে তিনি নিজের শাসনামল প্রলম্বিত করতে চেয়েছিলেন। এই ঘটনায় পাকিস্তানে ব্যাপক বিক্ষোভ হয় এবং ইমপিচমেন্ট এড়াতে ২০০৮ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। এ জন্য পরে জেনারেল মুশাররফকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তিনি পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসক যাকে সংবিধান স্থগিত করার জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তাকে মৃত্যুদ- দিয়েছিল পাকিস্তানের আদালত, যদিও পরে সেটি বাতিল হয়ে যায়।
জেনারেল পারভেজ মুশাররফের ক্যারিয়ার:১৯৯৮ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৯৯ সালের মে মাসের কারগিল যুদ্ধে সেনাবাহিনীর জড়িত থাকা নিয়ে তখনকার প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সাথে সম্পর্কে ফাটল ধরে জেনারেল মুশাররফের। এর ধারাবাহিকতায় ওই বছরই এক অভ্যুত্থান করে ক্ষমতায় বসেন জেনারেল মুশাররফ। ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। রাষ্ট্রপতির পদ ত্যাগ করার পর ২০০৮ সালে দেশ ছাড়েন তিনি, কিন্তু ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পাকিস্তানে ফেরেন। যদিও আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে ব্যর্থ হন।
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার শুনানিতে মাত্র দুবার হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি। এর আগে তার সময় কেটেছে হয় সেনাবাহিনীর একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নয়তো ইসলামাবাদের একটি খামারে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের এপ্রিলে তিনি করাচিতে চলে যান। সেখানে দুবছর থাকার পর তিনি আবার দেশত্যাগ করেন। ২০১৬ সালে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ তিনি দুবাইতে অবস্থান করছিলেন। সূত্র: ডন, বিবিসি