বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে কোন নির্বাচন হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার না আসছে এবং তার অধীনে নির্বাচন না হচ্ছে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ২০০৯ সালে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে শহীদ ব্যক্তিবর্গের স্মরণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ফখরুল বলেন, মানুষ জেগে উঠেছে, মানুষ জেগে উঠছে। আজকে দেয়ালের লেখা পড়েন, মানুষের চোখের ভাষা দেখেন। দেখবেন এই সরকারের প্রতি মানুষের শুধু ঘৃণা আর ঘৃণা। এই মুহূর্তে সকলের চায়, এই সরকারের পরিবর্তন।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সমস্ত রাজনৈতিক দল, সমস্ত সংগঠন, সমস্ত ব্যক্তি এক হতে হবে, এটা শুধু বিএনপি’র জন্য নয়, অথবা এটা অন্য কোন দলের জন্য নয়, এটা এই দেশের মানুষের জন্য এই দেশকে রক্ষা করার জন্য আজকে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এখানে বিএনপি নিরাপদ নয়, এখানে জাসদ নিরাপদ নয়, এখানে অন্যান্য ধর্ম পালন করে তারাও নিরাপদ নয়, এখানে আলেমরাও নিরাপদ নয়। কেউ নিরাপদ নয়। জন্য আজকে সকলকে একতাবদ্ধ হতে হবে।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনা যেন আর কোনদিন ঘটতে না আসতে পারে, তার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে রাজপথে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি গণবিপ্লব, গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে এদেরকে পরাজিত করতে হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
ফখরুল বলেন, আগস্ট মাস থেকে আমরা যখন চাল ডাল তেল লবণের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন করতে শুরু করেছি তখন থেকে তারা গুলি করে হত্যা করতে শুরু করেছে। আমাদের ১৭ জন নেতাকর্মীকে আন্দোলনকারীকে প্রকাশ্যে রাজপথে গুলি করে মেরেছে। ইতোমধ্যে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দিয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে এখনো আমাদের কয়েক হাজার নেতাকর্মী জেলে রয়েছেন। এই ভয়াবহ একটি অবস্থা দুর্বিষহ একটি অবস্থা। এই অবস্থা থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নাও। তিনি বলেছেন আজকে রাজপথেই ফয়সালা করতে হবে। বেগম খালেদা স্লোগান দিয়েছিলেন সেই স্লোগান অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। যে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’। সেগুলোকে একসঙ্গে নিয়ে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মেজর হাফিজের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, মেজর হাফিজ খুব সুন্দর কথা বলেছেন- প্রতিবছর শুধু শোক দিবস পালন করব, প্রতিবছরের শুধু রোদন করব, তাতে কোন লাভ হবে না। আজকে বেরিয়ে আসতে হবে, কোথায় আমাদের সেই তরুণ, কোথায় আমাদের সেই যুবক, কোথায় আমাদের সেই ছাত্ররা যারা এই দেশে ইতিহাস তৈরি করেছে। যারা প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তের সামনে এসেছে, আজকে তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে; দেশকে বাঁচাতে। ১৯৭১ সালে যেমন যুদ্ধ করেছি, নিজের দেশকে রক্ষা করার জন্য, স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য, আজকে ঠিক একইভাবে এদেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য এবং মানুষকে বাঁচানোর জন্য, আমার অস্তিত্বকে রক্ষা করার জন্য, আমার স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য, আমার সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে লেখতে পারে না, সত্য প্রচার করতে পারে না। মানুষ প্রতিবাদ করতে পারে না। এ থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হবে। আর এই দায়িত্ব শুধু বিএনপির একার নয়, সকল দেশপ্রেমিক দল ও নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সবাই একজোট হলে কোনো স্বৈরাচারী সরকার টিকে থাকতে পারেনি, ইতিহাস তাই বলে।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে আরো বক্তব্য রাখেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, বিএনপি’র মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন ও ঢাকা দক্ষিণ বিএনপি’র সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ।