শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন

প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে:সিইসি

মোবারক বিশ্বাস, পাবনা:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে বোঝাপড়ায় ফাঁক থাকলে এবং নির্বাচনী কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে সেই নির্বাচন প্রত্যাশিত মাত্রায় অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে না। এমনকি নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে।’ গতকাল রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাবনার ঈশ্বরদীতে ‘নির্বাচনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার: চ্যালেঞ্জসমূহ এবং উত্তরোণের উপায়’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘আমরা স্বস্তিদায়ক হিসেবে এবং সহজভাবে নির্বাচন আয়োজন করতে চাই। সেজন্য আমরা প্রত্যাশা করি, দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের মধ্যে মোটাদাগে বোঝাপড়া থাকে তাহল ভালো নির্বাচন উপহার দিতে পারবো। আমরা সেই আস্থা এখনও রেখে যাচ্ছি।’
রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে সব দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে যদি বোঝাপড়ার গ্যাপ থাকে তাহলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করুন। সবার সহযোগিতায় সব রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে জনগণের কাছে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চেষ্টা করবো।’
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফর উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইন্সটিটিউটের সেমিনার হল রুমে আয়োজিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম, অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহা পুলিশ মহাপরিদর্শক আব্দুল বাতেন। সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ:
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদীয় আসনের সীমানা হুবহু ঠিক রেখে এই খসড়া তৈরি করা হয়েছে। কেবল প্রশাসনিক পরিবর্তনের বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে। নতুন প্রশাসনিক ইউনিয়ন সৃষ্টি হওয়ায় ছয়টি আসনে পরিবর্তন এসেছে। অবশ্য এই পরিবর্তনে ওই আসনগুলোর পরিধি কমেনি বা বাড়েনি।
সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী ৭৫টির মতো আসনে জনসংখ্যার বড় ব্যবধান থাকলেও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সর্বোচ্চ জনসংখ্যার আসনের সঙ্গে সর্বনি¤œ জনসংখ্যার আসনের মধ্যে সাতগুণের বেশি ব্যবধান হলেও (৮৮ শতাংশ) জনসংখ্যার পার্থক্যকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না।
তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে খসড়া প্রকাশের পর অংশীজনের দাবি-আপত্তি বিবেচনায় নিয়ে যৌক্তিক ক্ষেত্রে সীমানা পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি তারা বিবেচনা করবে।
যেসব পরিবর্তন এসেছে
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে নতুন গঠিত প্রশাসনিক এলাকা অন্তর্ভুক্ত করে এবার সীমানার খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। যদিও আইনে প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনা করে ভৌগোলিক অখ-তা রক্ষার পাশাপাশি সর্বশেষ আদমশুমারির প্রতিবেদনে উল্লিখিত জনসংখ্যার যতদূর সম্ভব বাস্তব বণ্টনের কথা বলা হয়েছে।
আগের সীমানা পুনর্নির্ধারনের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে যেসব উপজেলা সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বর্তমানে কালকিনি উপজেলা নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসনের সঙ্গে ডাসার উপজেলা যুক্ত করা হয়েছে। কালকিনি উপজেলা বিভক্ত করে সরকার কালকিনি ও ডাসার উপজেলা করেছে। ময়মনসিংহ-৪ আসনে ময়মনসিংহ সদর আসনের সঙ্গে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনকে যুক্ত করা হয়েছে।
ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-১ আসন ধর্মপাশা ও মধ্যনগর করায় মধ্যনগরের নাম যুক্ত হয়েছে। জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনের দক্ষিণ সুরমার নাম পরিবর্তন করে সরকার শান্তিগঞ্জ উপজেলা করার খসড়া সীমানায় এই অংশটুকু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন ও সিলেট সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসনের সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন এবং তিনটি ইউপির আংশিক সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ আসনে পরিবর্তন হয়েছে। এক্ষেত্রে খসড়ায় সিলেট-১ আসনে সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ২৭ নম্বর এবং ৩১ থেকে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড ও সদর উপজেলা, একই কারণে সিলেট-২ আসনে পরিবর্তন হয়ে সিটি করপোরেশনের ২৮ থেকে ৩০ ও ৪০ থেকে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত হয়েছে। কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলা আসন নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৩ আসনের সদর উপজেলা ভেঙে ঈদগাঁও নামে নতুন আরেকটি উপজেলায় করায় এই নামটিও যুক্ত হয়েছে ইসির খসড়া সীমনায়।
যেসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েছে ইসি
খসড়া সীমানায় প্রকাশে নির্বাচন কমিশন যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েছে তা হলো- প্রতিটি জেলার ২০১৮ সালে নির্ধারিত মোট আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখা, প্রশাসনিক ইউনিট বিশেষ করে উপজেলা এবং সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডের যথাসম্ভব অখ-তা বজায় রাখা, ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌর এলাকার ওয়ার্ড একাধিক আসনে বিভাজন না করা, যেসব নতুন প্রশাসনিক এলাকা সৃষ্টি হয়েছে বা সম্প্রসারণ হয়েছে বা বিলুপ্ত হয়েছে তা অন্তর্ভুক্ত করা এবং ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যথাযথ বিবেচনায় রাখা।
ইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সংক্ষুব্ধ বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আগামী ১৯ মার্চের মধ্যে কোনও আসনের পুনর্র্নিধারিত নির্বাচনি এলাকার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত দিতে পারবেন। তবে দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত কোনও আসনের সীমানা সংক্রান্ত হতে হবে। পরে প্রকাশ্য শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে বলে জানানো হয়েছে।
কী বলছে ইসি
সীমানা পুনর্র্নিধারণের খসড়ার বিষয়ে কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসনিক বিভক্তি যেগুলো হয়েছে সেখানে পুরনো নাম বাদ দিয়ে নতুন নাম যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া কোনও পরিবর্তন হয়নি। আইনে চূড়ান্ত জনশুমারি হতে হবে। কিন্তু সরকার জানিয়েছে তাদের চূড়ান্ত জনশুমারি করতে আরও বছর খানেক সময় লাগবে। এজন্য আমরা অপেক্ষা না করে তাদের খসড়াটাকে আমলে নিয়েছি ঠিকই। তবে আইনে জনসংখ্যার বিষয়টি থাকলেও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে প্রশাসনিক অখ-তা ও ভৌগোলিক বিষয়গুলো। আমরা সেটাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এজন্য কোনও পরিবর্তন আনিনি।
তিনি বলেন, স্থানীয় জনগণ, ভোটার, রাজনীতিবিদরা পরিবর্তনের প্রয়োজন মনে করলে আবেদন করবেন। তাদের বক্তব্য যৌক্তিক মনে হলে পরিবর্তন আনা হবে। না হলে আমরা কোনও পরিবর্তন আনবো না।
সর্বশেষ আদমশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা-১৯ আসনের জনসংখ্যা ১৯ লাখ ২ হাজার ২৯ জন। অপরদিকে ঝালকাঠী-১ আসনের জনসংখ্যা দুই লাখ ৫৬ হাজার ৩৪৬ জন। এখানে জনসংখ্যার পার্থক্য ৮৮ শতাংশের বেশি। এ রকম অন্তত ৭৫টি সংসদীয় আসনে ২৬ থেকে ৮৮ শতাংশ জনসংখ্যার বড় ব্যবধান রয়েছে। এর মধ্যে ১৮ আসনে জনসংখ্যার ব্যবধান ৫১ থেকে ৮৮ শতাংশ। বাকি ৫৭টি আসনে জনসংখ্যার ব্যবধান ২৬ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, ড. শামসুল হুদার কমিশন গড় জনসংখ্যার কমবেশি সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশকে মানদ- ধরেছিল। ওই মান ধরে ২০০১ সালের আদমশুমারি প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে ২০০৮ সালে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করে। তখন দেশের মোট জনসংখ্যাকে ৩০০ আসন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে একটি জেলায় কতটি আসন হবে, তা নির্ধারণ করা হয়।
এরপর ওই জেলার জনসংখ্যাকে আসন সংখ্যা দিয়ে ভাগ দিয়ে গড় জনসংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই গড় জনসংখ্যা, এক জেলার সংসদীয় আসন আরেক জেলায় না যাওয়া এবং ইউনিয়ন ও সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড একাধিক সংসদীয় আসনে বিভাজন না করার নীতিমালা অনুসরণ করে।
এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছিলেন, চলতি মাসেই সীমানা পুনর্র্নিধারণের খসড়া প্রকাশ করা হবে।গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সীমানা যে ছিল তা নিয়ে খসড়া প্রকাশ করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে দাবি আপত্তির জন্য একটা সময় নির্ধারণ করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন।
এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল জাতীয় সংসদের ২৫টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনে ৩০০ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করেছিল ইসি। যে ২৫টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন হয়েছিল সেগুলো ছিল– নীলফামারী-৩ ও ৪; রংপুর-১ ও ৩; কুড়িগ্রাম-৩ ও ৪; সিরাজগঞ্জ-১ ও ২; খুলনা-৩ ও ৪; জামালপুর-৪ ও ৫; নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫; সিলেট-২ ও ৩; মৌলভীবাজার-২ ও ৪; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ ও ৬; কুমিল্লা-৬, ৯ ও ১০ এবং নোয়াখালী-৪ ও ৫। এ ২৫টি আসনের মধ্যে সিরাজগঞ্জ-৩ ও ৪ আসনটি খসড়া তালিকায় ছিল না। বাকি ২৩টি খসড়া সীমানায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী জুন মাসের মধ্যে নির্বাচনি সীমানা চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান কমিশনার আলমগীর।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com