বাংলাদেশের জনগণের পরম ও চরম অর্জন মহান স্বাধীনতার মাস মার্চের চতুর্থ দিবস আজ শনিবার। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীকার আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র দ্বিতীয় দিনের মতো সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। গোটা পূর্ববঙ্গ সে সময় স্লোগানমুখর ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ অথবা ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা’।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের প্রতিবাদে ৬ তারিখ পর্যন্ত হরতাল পালনের ডাক দিয়েছিলেন। তিনি সেই সাথে সামরিক আইন প্রত্যাহার করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরেরও দাবি জানিয়েছিলেন। অন্যদিকে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাধীনতার আওয়াজ উঠেছিলো। পূর্ব পাকিস্তানের স্থলে ‘বাংলাদেশ’ বলা শুরু হয়েছিলো। মার্চের শুরু থেকেই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সংগ্রাম তুঙ্গে উঠতে থাকে। সেই আন্দোলন ক্রমান্বয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত হয়েছিলো। প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও পেশাজীবী সংগঠন স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে অংশ নিয়েছিলো। প্রতিদিন কোনো না কোনো দল মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করেছিলো। এদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবন সংলগ্ন বটতলা ও বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সমাজবাদী জোট ও ছাত্র ইউনিয়ন সমাবেশ করেছিলো। একাত্মতা ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৮ জন শিক্ষক যৌথ বিবৃতি দিয়েছিলেন। দৈনিক ইত্তেফাকে ৪ মার্চ ’৭১-এর এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, “সেনাবাহিনীর গুলীতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৭৫ জন নিহত হয়। ৩ মার্চ চট্টগ্রামের ফিরোজ শাহ কলোনি, ওয়্যারলেস কলোনি, আমবাগান, পাহাড়তলী, জুট ফ্যাক্টরি এবং সন্নিহিত অন্যান্য এলাকায় সকাল হইতে অপরাহ্ন পর্যন্ত অগ্নিকা-, হামলা, প্রতি-হামলা, প্রাইভেট বন্দুকের গুলীবর্ষণ, সংঘর্ষ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর গুলীবর্ষণ ইত্যাদি ঘটনায় অন্যূন অর্ধশতাধিক লোক প্রাণ হারাইয়াছে এবং কয়েক শত আহত হইয়াছে। চট্টগ্রামের উপরোক্ত অবাঙালি এলাকা হইতে সিভিল পোশাক পরিহিত ২০তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যদের অবস্থান ও গুলীবর্ষণের সংবাদ শহরে দাবানলের মতো ছড়াইয়া পড়ে এবং সমগ্র শহরে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এ সংবাদে স্থানীয় ইপিআর সৈনিকদের উত্তেজিত হইতে দেখা যায়।
২০১৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী তার ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১’ শীর্ষক গ্রন্থে একাত্তরের ৪ মার্চের ঘটনাপ্রবাহ সংক্ষেপে তুলে ধরেন এভাবে- “পদচ্যুত গবর্ণর ভাইস এডমিরাল এসএম আহসান বিমানযোগে করাচীর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন। একই দিনে অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আসগর খান আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান। ঐ দিন থেকেই ঢাকা রেডিও এবং টেলিভিশনের বাঙালি কর্মচারীদের উদ্যোগে ‘রেডিও পাকিস্তান ঢাকা’ কেবল ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র’ এবং ‘পাকিস্তান টেলিভিশন’ কেবল ‘ঢাকা টেলিভিশন’ নামে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করে।