বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫২ অপরাহ্ন

আমরা আইন হাতে তুলে নেবো না: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

ইকবাল হোসেন:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৪ মার্চ, ২০২৩

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অধ্যাপনা থেকে পুরোদস্তুর রাজনীতিক। বিরোধী বিএনপি’র মহাসচিব। কথা বলেন সোজাসাপ্টা। দীর্ঘদিন রাজনীতি করলেও গায়ে ময়লা লাগেনি। ৭৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিক হাল আমলে ৩৮৩দিন জেল খেটেছেন। ৮৯টি মামলা মোকাবিলা করছেন এখন। বৃহস্পতিবার কথা হলো, তবে সংক্ষিপ্ত। ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে তার দলের অবস্থান পরিষ্কার করলেন। বললেন, আমরা নির্বাচনে যেতে চাই।
কিন্তু কোন সে নির্বাচন। যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না সে নির্বাচনে তো আমরা যেতে পারি না। আমাদের কথা স্পষ্ট, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিএনপি’র পক্ষে অসম্ভব। অতীতের অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। আর সংলাপের কথা বলছেন? আমি বলবো, এটা একটা তামাশা। আমরা তো প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সংলাপে যোগ দিয়েছিলাম। কী লাভ হয়েছে? একটা দাবিও তিনি মানেননি। তাদের নেতাদের বক্তৃতা শুনে মনে হয়, বিরোধীরা সংলাপে অংশ নিলেই সংকটের সমাধান হয়ে যাবে। খালিস নিয়তে সংলাপ না হলে তা হবে অর্থহীন। তার মানে কি আপনারা সংলাপে যাচ্ছেন না? অর্থহীন এই সংলাপে যাওয়ার কি প্রয়োজন আছে বলুন। তাই সংলাপের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বলা হয়ে থাকে কিংবা আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন আপনারা ক্ষমতায় গেলে চার থেকে পাঁচ লাখ লোক মারা যাবে। কী যে বলেন! দেশটা কি মগের মুল্লুক হয়ে যাবে? দেশে কি কোনো আইন থাকবে না! আমরা আইন হাতে তুলে নেবো না। আমরা আইনের বাইরে কোথাও যাবো না। তাছাড়া তাদের ভয় কেন। সোজা কথা, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা এসব বলছেন। এতে কোনো লাভ হবে না। জনগণ ভালো করেই জানে, জনসমর্থন হারিয়ে নেতারা এসব কথা বলছেন। উদ্দেশ্য একটাই- আতঙ্ক তৈরি করা, বিদেশিদের বিভ্রান্ত করা। আপনারা ক্ষমতায় গেলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে? এটা আমরা পরিষ্কার করেছি আগেও। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। তারা আমাদের বন্ধু। আমাদের সঙ্গে আগেও সুসম্পর্ক ছিল। আমরা এই সম্পর্ককে আরও উন্নত করবো। আমাদের দাবি- দাওয়া আদায়ের ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট থাকবো। মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন, আপনারা ক্ষমতায় গেলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী? এই প্রশ্নটা কেন তোলা হচ্ছে জানি না। আমাদের দলের চেয়ারপারসন আছেন। আছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও। তাদেরই কেউ প্রধানমন্ত্রী হবেন। তাছাড়া এই মুহূর্তে এটা মুখ্য বিষয় নয়। আমরা তো এটাও বলেছি, বিএনপি’র নেতৃত্বে সরকার হলেও কিছুদিনের জন্য একটা জাতীয় সরকার গঠিত হবে। বিগত বছরগুলোতে দুর্নীতি, অন্যায়, অনিয়মে দেশটা ডুবে গেছে। তা পরিষ্কার করা হবে সরকারের প্রধান কাজ। প্রসঙ্গ টেনে আবার বললেন, মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলা করছে। সরকার বলছে, আপনাদের ১০ই ডিসেম্বরের আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ হবে কেন, বরং সরকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। অত্যন্ত উদ্দেশ্যমূলকভাবেই ৭ই ডিসেম্বর আক্রমণ করে সেটাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছে। তারপরও বলবো সেটা নস্যাৎ হয়নি। কারণ আমরা মনে করি যে, ১০ তারিখে গোলাপবাগে যে জনসভা হয়েছে সেটায় মানুষের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত এবং বিশাল। আন্দোলন কখনো ওঠে, কখনো নামে। আমরা এখনও ভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছি। গ্রামে, ইউনিয়নে ছড়িয়ে দিয়েছি আন্দোলন। সুতরাং আমরা মনে করি না যে, আন্দোলন ঝিমিয়ে গেছে বা আমরা পিছু হটেছি। তাহলে কি আপনারা বলছেন, আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি? আবারও বলবো, ব্যর্থ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। বিভিন্ন সার্ভে রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ বিএনপি’র এই আন্দোলনকে সমর্থন করছে। কেন বিএনপি’র প্রতি মানুষ ঝুঁকছে? সরকারের চরম ব্যর্থতা, একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কারণে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সর্বোপরি রয়েছে তাদের লাগামহীন দুর্নীতি। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামীর দিনগুলো কি যে হবে আল্লাহ্ মালুম। আমরা জনগণের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। আপনারা তো শুধু রাজনীতি নিয়ে আন্দোলন করছেন। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নানা কর্মসূচি দিচ্ছেন। এটা মোটেই সত্য নয়। জনগণের অভাব-অভিযোগ, কষ্ট- এসব নিয়েই মূলত আমরা কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছি। ক্ষমতার পরিবর্তন চাই বলেই, কিছু দাবি হয়তো সামনে আসছে। দিনের শেষে আমরা বলবো, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই হচ্ছে আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। সরকারের তরফে একটা প্রস্তাব এলো আপনাদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চাইলে রাজনীতি করতে পারেন। এ প্রসঙ্গে কিছু বলবেন? এটা হাস্যকর এবং দুরভিসন্ধিমূলক। সরকার যদি আন্তরিকই হয়, তাহলে বেগম জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছে না কেন। আগে মুক্তি দিক তারপর রাজনীতির প্রসঙ্গ আসে। তারা একটা ফাঁদ পেতেছিল। আমরা সে ফাঁদে পা দেইনি। আবারও বলছি সরকার যেখানে তাকে জামিনই দেয় না সেখানে রাজনীতির কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। ধরুন, সরকার দাবি মানলো না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলো না। তখন কী করবেন? আন্দোলন, চূড়ান্ত আন্দোলন। সরকারকে বাধ্য করবো দশ দফা দাবি মেনে নিতে। এটাই আমাদের শেষ কথা। ২০১৮ এর মতো নির্বাচনে যাবেন নাতো? প্রশ্নই ওঠে না। যাইহোক, অনেকে বলে থাকেন স্থানীয় সরকারের নির্বাচন বয়কট করা আপনাদের ভুল সিদ্ধান্ত। মোটেই না। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে তারা যেভাবে হস্তক্ষেপ করছে তাতে মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। মানুষ ভোট দিতেও আসে না। সামগ্রিকভাবে ভোট কলঙ্কিত হয়েছে। আস্থা কমেছে। এটার পরিবর্তন করতে হলে গোটা ব্যবস্থাটাকেই ঢেলে সাজাতে হবে। আর এটা সম্ভব দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে। আপনি অতি সম্প্রতি বলেছেন, পাতানো যে কোনো নির্বাচন প্রতিহত করা হবে। কিন্তু কীভাবে? অতীতের অভিজ্ঞতাতো মোটেই সুখকর নয়। মির্জা ফখরুল জোর দিয়ে বললেন, জনগণ প্রতিহত করবে। নির্বাচন তারা করতে পারে কিন্তু সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। যেমন হয়নি ২০১৪ এবং ২০১৮-এর নির্বাচন। আগাম কোনো নির্বাচনের সম্ভাবনা আছে কি? এরাতো অনেক কৌশলই নিচ্ছে এবং নিবে। তাতে কোনো কাজে আসবে না।
এককথায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা কী? ভয়াবহ। মানুষ অসহায়। বাঁচার জন্য লড়াই করছে। অর্থনৈতিক সংকট এতটাই তীব্র যে, মানুষ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com