মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ১১:১৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
নেত্রকোণায় হাওড় রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান ফরিদপুরে জেলা ও মহানগর মহিলা দলের উদ্যোগে মানববন্ধন রমজানে নিত্য পণ্যের বাজার মনিটরিং করলেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা শ্রীমঙ্গলে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ লামায় হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চেক বিতরণ জামালপুরে রোগীকল্যাণ সমিতির উদ্যোগে জাকাতের টাকা সংগ্রহ অভিযান চাঁদনী হত্যাকা-ের এক দশক: বিচার কি আদৌ মিলবে? নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণের প্রতিবাদে দৌলতখানে ছাত্রদলের মানববন্ধন চিতলমারীতে এক ভারতীয় নাগরিক হত্যা মামলার আসামী

টানা ৪ দিন দূষিত শহরের শীর্ষে ঢাকা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ মার্চ, ২০২৩

বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় টানা চতুর্থ দিনের মতো গতকাল রোববার সকালে ঢাকার অবস্থান ছিল শীর্ষে। গতকাল সকাল ৯টায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ৩২২ নিয়ে রাজধানীর বাতাসের মান ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থায় ছিল। ১০১ থেকে ২০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। আর ৩০১ থেকে ৪০০ এর এর মধ্যে থাকা একিউআইকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। চীনের বেইজিং, পাকিস্তানের লাহোর ও ভারতের মুম্বাই যথাক্রমে ২১৪, ২১০ ও ১৯৭ স্কোর নিয়ে তালিকার পরবর্তী দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান দখল করেছে।
বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে, সেগুলো হলো- বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ এবং ওজোন (ও৩)। দীর্ঘদিন ধরে বায়ু দূষণে ভুগছে ঢাকা। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে ঢাকার বায়ু দূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো- ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো।
বায়ুদূষণে ঢাকা কেন শীর্ষে? বায়ুদূষণের শিকার শহরগুলোর তালিকায় ঘুরেফিরে প্রথম স্থান দখল করছে রাজধানী ঢাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত চার কারণে এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন রাজধানীবাসী। প্রথমত, পুরনো যানবাহনের আধিক্য। দ্বিতীয়ত, অপরিকল্পিতভাবে শহরের যেখানে-সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও উন্নয়ন কাজ। তৃতীয়ত, শহরের আশপাশের ইটভাটা ও শিল্প-কলকারখানার দূষণ। চতুর্থত, শহরের ভেতরে যে ময়লা আবর্জনা জমে সেগুলো পোড়ানোর ধোঁয়া। সরকার কঠোর না হওয়ায় এই পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন ঘটছে না বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। দেড় কোটিরও বেশি মানুষের আবাসস্থল ঢাকা। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থানও প্রথম দিকেই। পরিবেশবিদরা বলছেন, অন্য দেশগুলো তাদের বড় শহরগুলোর বায়ুদূষণ রোধে যেখানে পদক্ষেপ নিয়েই চলেছে, সেখানে ঢাকা ব্যর্থ। দূষণের সব থেকে বড় উৎস ঢাকার বর্জ্য, আর এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন করতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন। আবার শহরের মধ্যে উন্নয়নকাজের ফলে সৃষ্ট দূষণ নিয়ন্ত্রণও ঠিকমতো করে উঠতে পারছে না দুই সিটি করপোরেশনের কোনোটিই।
বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, ‘অন্যদেশের তুলনায় আমাদের দেশে দূষণ বেশি। কারণ আমাদের এক্টিভিটি বেশি। কন্সট্রাকশন বেশি, আর নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থাও নেই। দিল্লি বা কাঠমান্ডুতেও দূষণ হচ্ছে। তারাও মাঝে মাঝে দূষণের শীর্ষে চলে আসে। কিন্তু ঢাকার মতো ধারাবাহিকভাবে প্রথম হয়নি। এছাড়া এসব দেশ বায়ুদূষণ রোধে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমরা সে তুলনায় কিছুই করছি না।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধুলোবালির মধ্যে মূলত ছয় ধরনের পদার্থ ও গ্যাসের কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা বেড়ে গেছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা অর্থাৎ পিএম ২.৫ এর কারণেই ঢাকায় দূষণ অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। ক্ষতিকর ছয় ধরনের পদার্থের মধ্যে প্রথমেই আছে পিএম (পার্টিকুলেটেড ম্যাটার) ২.৫ অথবা ২ দশমিক ৫ মাইক্রো গ্রাম সাইজের ক্ষুদ্র কণা। এরপর পিএম-১০ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এই ধূলিকণার আকার বোঝাতে হলে উদাহরণ হিসেবে বলতে হবে, মাথার চুলের ডায়ামিটারের (ব্যাস) ৬ ভাগের এক ভাগ হচ্ছে ২ দশমিক ৫। এটি এত ক্ষুদ্র, যা খালি চোখে দেখা যায় না। বাকি চারটির মধ্যে আছে সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন, কার্বন মনোক্সাইড এবং সিসা। এই ছয় পদার্থ ও গ্যাসের ভগ্নাংশ গড় করেই বায়ুর সূচক নির্ধারণ করা হয়। সেই সূচককে বলা হয় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স।
বায়ুদূষণের সূচকে ঢাকার সূচক ৫০ হলে তা দূষণের পর্যায়ে পড়বে না। কিন্তু গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বেশ কয়েকদিন বারবার সূচকের মাত্রা ৩০০-তে গিয়ে ঠেকেছে। যখন ঢাকা প্রথম স্থানে থাকে তখন দেখা যায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা শহরগুলোর তুলনায় ঢাকার সূচকের মান প্রায় ১০০ বেশি, যা খুবই উদ্বেগজনক।
১০১ থেকে ১৫০ সূচক হলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। ১৫০-২০০ সূচক হলে সেটি অস্বাস্থ্যকর। আর সূচক যদি ২০০ থেকে ৩০০ হয় তাহলে সেটি খুবই অস্বাস্থ্যকর। ৩০০-এর ওপরে হলে সেটিকে দুর্যোগপূর্ণ বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’-এর বায়ুমান সূচকে (একিউআই) গত এক বছরের হিসাবে দেখানো হয়, ঢাকায় ২০১৯ সালে গড়ে বায়ুদূষণের সূচক ছিল ৮৩ দশমিক ৩। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ছিল গড়ে ১৮১ দশমিক ৮, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৪৫ দশমিক ৭, মার্চ মাসে ১০৭ দশমিক ৪, এপ্রিল মাসে ৭০ দশমিক ২, মে মাসে ৫২ দশমিক ২, জুন মাসে ৩৫ দশমিক ৯, জুলাই মাসে ৩৮ দশমিক ২, আগস্টে ৩১ দশমিক ৩, সেপ্টেম্বরে ৩৭ দশমিক ৭, অক্টোবরে ৬৪ দশমিক ৬, নভেম্বরে ৯৪ দশমিক ২ এবং ডিসেম্বরে সূচক ছিল ১৪৬ দশমিক ৩। এর আগে ২০১৮ সালের গড় ছিল ৯৭ দশমিক ১ এবং তারও আগে ২০১৭ সালের গড় সূচক ছিল ৭৯ দশমিক ৭।
এদিকে চলতি মাসের ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ঢাকা বায়ুদূষণের শীর্ষে ছিল। সেদিন সূচক ছিল ৩৩২। সে তুলনায় বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ঢাকা ছিল অষ্টম অবস্থানে। সূচক ১৫১। তিন দিন অল্প বৃষ্টির কারণে বায়ুদূষণের মাত্রা কমে আসে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘গড়ে মাস হিসেবে দূষণ মাত্রা বেশি নয়। তবে অন্য দেশগুলোর তুলনায় মাসের মধ্যে অনেকদিনই সূচকের শীর্ষে ছিল ঢাকা। এই কারণে ঢাকাকে শীর্ষ দূষণের শহর বলা হচ্ছে।’
অন্য দেশের তুলনায় কেন ঢাকা বারবার শীর্ষে চলে আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একেক দেশের দূষণের কারণ সাধারণত ভিন্ন হয়। যেমন নেপালে বায়ুদূষণের মূল কারণ হচ্ছে ইটভাটা ও পুরনো যানবাহন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ধূলিঝড়। অন্য দেশগুলোতে যেখানে দূষণের কারণ একটি বা দুইটি, সেখানে আমাদের দূষণের কারণ অনেক। মূলত চার কারণে দূষণ হয়। ঢাকা শহরের দূষণের জন্য প্রধানত দায়ী পুরনো যানবাহন, এরপর রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ি এবং কন্সট্রাকশনের জন্য রাস্তার পাশে রাখা ধুলোবালি, এরপর ইটের ভাটা, শিল্প-কারখানার দূষিত বাতাস, আবর্জনা পোড়ানো। এতগুলো কারণ থাকায় যে কোনও একটি নিয়ে কাজ করলে হবে না। আমাদের অনেক বিষয়কে সামনে রেখে পরিকল্পনা করতে হবে। দ্রুতগতিতে কাজ হবে এমন কিছু পরিকল্পনা করা দরকার।’
ড. সালাম বলেন, ‘বায়ুদূষণের তালিকার শীর্ষ থেকে নামতে হলে সরকারি সংস্থাগুলোকে তাদের কাজের পরিধি বড় করতে হবে, দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের উচিত গবেষণা করে বের করা কত দ্রুত এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। এমনকি সাংবাদিকদেরও এই বিষয়ে করণীয় আছে। তাদের উচিত লেখালেখির মাধ্যমে সমস্যাগুলো তুলে আনা, পদক্ষেপ নেওয়ার অবস্থা কী তা জানানো।’
তবে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ বিষয়ে একমত নয় পরিবেশ অধিদফতর। তারা বলছে, বায়ুদূষণ কমাতে এরইমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই চলছে বায়ুদূষণ বিরোধী অভিযান। এরইমধ্যে ভেঙে দেওয়া হয়েছে অনেক ইটভাটা। বন্ধ করা হয়েছে অনেক শিল্প-কারখানা। বড় বড় রাস্তায় প্রায়ই পানি ছিটানো হচ্ছে। পুরনো গাড়ি চলাচল যাতে না করতে পারে সেজন্য নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযান চালানো হচ্ছে। এমনকি সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট বিলি, পোস্টার ছাপানো এবং বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী তামজীদ আহামেদ বলেন, ‘আমরা বায়ুদূষণ রোধে প্রায় প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করছি।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com