চলচ্চিত্র এক প্রকারের দৃশ্যমান বিনোদন মাধ্যম। চলমান চিত্র তথা ‘মোশন পিকচার’ থেকে চলচ্চিত্র শব্দটি এসেছে। কল্পনা, বাস্তব কিংবা গল্পের কোনো অংশ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হতে পারে। এর সাথে যুক্ত থাকে সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান। উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের গোড়াপত্তন হয় হিরা লাল সেনের হাত ধরে ১৮৯৮ সালের দিকে। তবে ১৯৫৫ সালে আবদুল জব্বার খানের মুখ ও মুখোশ দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এক নতুন দিগন্ত শুরু হয়। বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের বিপ্লব ঘটে ষাটের দশকে। এ সময়ে চলচ্চিত্রের কিছু কীর্তিমান নির্মাতা তাদের মেধার দীপ্তি ছড়াতে লাগলেন। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রচিত হলো বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সোনালি ইতিহাস।
ষাট থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত সময়কে বলা হয় চলচ্চিত্রের সোনালি যুগ। এ সময়ে তৈরি হয়েছে অনেক নায়ক-নায়িকা। জহির রায়হান ও খান আতাউর রহমানসহ আরো অনেকে উপহার দিয়েছেন কালজয়ী সিনেমা। তারা এখনো অগ্রপথিক হয়ে আছেন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে। ভবিষ্যতেও থাকবেন। ষাট থেকে নব্বইয়ের দশকে দেশে-বিদেশে অনেক পুরস্কার অর্জন করেছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র। সিনেমার গান, কথা, ডায়ালগ সবই ছিল মানুষের মুখে মুখে। মনে গেঁথে থাকতো অভিনয় ও সংলাপ। আশির দশকের অনেক জনপ্রিয় সিনেমার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবসাসফল সিনেমা ছিল বেদের মেয়ে জোসনা (১৯৮৯)। এরপর বীর পুরুষ, আম্মাজান, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, স্বামী কেন আসামি, ছুটির ঘন্টা, দীপু নম্বর টু, মাটির ঘরসহ আরো কিছু কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলোও ছিল ব্যবসাসফল।
তারপর ২০০০ সাল থেকে ২০০৭ সালের সময়কে চলচ্চিত্রের খারাপ সময় বলে ধরা হয়। কারণ এ সময়ে উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ হয়নি। আর হলেও তার মান ভালো ছিলো না। চলচ্চিত্রে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছিলো সেসময়। সেই সাথে অশ্লীলতা ঢুকে পড়েছিলো। যার ফলে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার মতো কোনো অবস্থা, নন্দন কিছুই ছিলো না। অনেক সংকটের মধ্যেও সুভা, আয়না, ঘানি, মাটির ময়না, রানওয়ে, খেলাঘর, আমার বন্ধু রাশেদ, শঙ্খনাদ, ডুব সাঁতার, নিরন্তর, হাজার বছর ধরে, চন্দ্রগ্রহণ, আহা, গেরিলার মতো ভালো চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে।
২০১০ সালের পর থেকে আবারো বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিছুটা উন্নতি দেখা যায়। এ সময় মনের মাঝে তুমি, মনপুরা (২০০৯) ছাড়াও অগ্নি (২০১৪), আয়নাবাজি (২০১৬), শিকারি (২০১৬), ঢাকা অ্যাটাক (২০১৭) ও নবাব (২০১৭) যথেষ্ট ব্যবসা করেছে। এছাড়া ডুব (২০১৭), পোড়ামন-২ (২০১৮), দেবী (২০১৮) স্বপ্নজালের (২০১৮) মতো ভালো কিছু সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। ২০১৯ সালে মুক্তি পেয়েছে ফাগুন হাওয়ায়, যদি একদিন, আবার বসন্ত, পাসওয়ার্ড, সাপলুডু, ইতি তোমারই ঢাকা, ন ডরাই, ইন্দুবালা, গহীনের গান, মায়া- দ্য লস্ট মাদার ইত্যাদি। নতুন করে অনেক সিনেমা মুক্তি পেলেও বলা যায় না এখন চলচ্চিত্রের সুদিন। বরং কোনো এক অন্ধকারের ছায়াকে যেন কিছুতেই দমন করে, সোনালি দিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও এদেশের পরিচালক, শিল্পী, কলাকুশলী ও দর্শক নতুনত্বের প্রত্যাশা করেন। স্বপ্ন দেখেন সুন্দর ও সফল আগামীর।