দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ। জোট শরিকদের প্রার্থী করার ক্ষেত্রেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে দলটি। এই প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে তিন ধরনের তৎপরতা শুরু হয়েছে—যার ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এমন তথ্য মিলেছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, বিগত তিনটি নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনটি হবে বড় চ্যালেঞ্জের। এই নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো অংশ নিক বা না নিক, সার্বিক বিবেচনায় ভোট আগের মতো সহজ হবে না। সে জন্য দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় সর্বোচ্চ যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। দলের কর্মসূচিগুলোতেও তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাঠানো হচ্ছে। রাজনৈতিক এসব কর্মকা-ের মূলে রয়েছে—নির্বাচনি প্রস্তুতি, যার লক্ষ্য দ্বাদশ নির্বাচনের বৈতরণী পেরিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বশীল নেতারা জানান, আগামী নির্বাচনে সংসদীয় ৩০০ আসনে জিতে আসার মতো যোগ্য প্রার্থী খুঁজতে ত্রিমুখী তৎপরতা চলছে। এতে কোন আসনে দলের কার অবস্থান তুলনামূলক ভালো, সেটি পরখ করে দেখা হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। অযোগ্যদের বিপরীতে যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা হচ্ছে জরিপ ও নানা মানদ-ের ওপর ভিত্তি করে। এই কাজটি নিজস্ব প্যাটার্নে করছে সরকারি একটি সংস্থা, দেশি-বিদেশি একাধিক বেসরকারি সংস্থা এবং দলের দায়িত্বশীল নেতারা। যোগ্য প্রার্থী খোঁজার এই প্রক্রিয়াটি মাঝ পর্যায়ে রয়েছে, যার বাকি কাজ শিগগিরই সমাপ্ত হবে।
দলটির মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্য বলেন, সংসদীয় আসনভিত্তিক জরিপসহ ত্রিমুখী তৎপরতা চলছে। সরকারি একটি সংস্থার পাশাপাশি বিদেশি একটি সংস্থাও জরিপ করছে। সিআরআই তাদের মতো করে তথ্য সংগ্রহ করছে। এ ছাড়া সাংগঠনিকভাবেও প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। এসব ক্ষেত্রে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো প্রতিবেদন আকারে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে।
সূত্রমতে, সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জরিপের ফল ও প্রতিবেদন আসার পর সেগুলো আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে যোগ্য ও তুলনামূলক কম যোগ্যসহ ক্যাটাগোরিক্যাল একাধিক প্রার্থী তালিকাও হতে পারে। এরমধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদের বিতর্কিত ও অযোগ্য এমপিদের আলাদা তালিকা থাকছে। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন দলীয় সভাপতি। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করা হলে নিয়ম অনুযায়ী মনোনয়নের আবেদনপত্র বিক্রি এবং জমা নেওয়া হবে। তবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বিভিন্ন মাধ্যমে বাছাই করা যোগ্য প্রার্থীদের মনোনীত করবেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকে। তবে এবার বেশ কিছু যোগ্যতার ভিত্তিতে নৌকার প্রার্থী মনোনয়ন করা হবে। বিভিন্ন দিক বিবেচনায় যারা এগিয়ে থাকবেন, তারা দলীয় মনোনয়ন পাবেন। এ ক্ষেত্রে বর্তমান অনেক সংসদ সদস্য বাদ পড়তে পারেন, যাদের অবস্থান ভালো নয়।’
সূত্রের ভাষ্য, জরিপে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে—আসনভিত্তিক কার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি, স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর কিনা, অনিয়ম-অপকর্ম ও বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িত কিনা, উপদল সৃষ্টির গ্রুপিংয়ে জড়িত কিনা, বিরোধী সম্ভাব্য প্রার্থীর বিপরীতে অবস্থান শক্তিশালী কিনা ইত্যাদি। এসব বিষয়ে তৃণমূল পর্যায় থেকে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে—বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য এবং দলীয় নেতাদের। এ কারণে নিজ এলাকায় তৎপরতা বাড়িয়েছেন এমপি-মন্ত্রী ও নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে দলীয়ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়েও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বেশ কিছু বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মনোনীত করা হবে এবার। এসব যোগ্যতার বিচারে যারা টিকবেন না, তারা বাদ পড়বেন। তাদের জায়গায় নতুন প্রার্থী আসবে। যারা ভালো প্রার্থী তারা মনোনয়ন পাবেন।’
গত বছরের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের নিজেদের যোগ্যতায় জিতে আসতে হবে। কাউকে পাস করিয়ে আনা হবে না। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের কার অবস্থা কেমন, তা জানতে জরিপ চলছে।
গত ১৩ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায়ও এ বিষয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা। সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জনগণ যাদের চায়, তাদের পাশে থাকা প্রার্থীকেই নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হবে। জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকা বা ক্ষমতাধর মনে করা কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। বিষয়টি পরিষ্কার করেই বলছি—যাদের আমলনামা ভালো তারা মনোনয়ন পাবেন, যাদের আমলনামা খারাপ তারা বাদ পড়বেন।’-বাংলাট্রিবিউন