খাদ্যরসিক বাঙালির চিনি ছাড়া চলে না। মিষ্টি ছাড়া বাঙালির অনুষ্ঠান ভোজ অসম্পূর্ণ। সকাল-বিকেল চা বা কফি চিনি ছাড়া মুখে রোচে না। বিশেষ বিশেষ তরকারি এবং ডালে খানিক চিনি না পড়লে রান্নার খুঁত ধরেন পরিবারের সকলেই। ফলে চিনির বিকল্প খুঁজে বেড়ান সকলেই। ‘সুগার ফ্রি’ বা ‘স্টিভিয়া’র মতো কিছু কৃত্রিম বিকল্প বাজারে এখন সহজলভ্য। অনেকের রান্নাঘরে ঠাঁই পেয়েছে কৃত্রিম চিনির কৌটা। অনেক ডায়াবেটিক রোগীর প্রতিদিনের ডায়েটেও স্থান পেয়েছে এই কৃত্রিম চিনির গুঁড়ো কিংবা ট্যাবলেট। তবে প্রতিদিনের ডায়েটে এই কৃত্রিম চিনি খাওয়া কি আদৌ স্বাস্থ্যকর? কিন্তু শরীরে ক্যালোরির মাত্রা কমাতে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষরাও খাবারে এই চিনি ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন। ‘নেচার মেডিসিন’-এ প্রকাশিত গবেষণা বলছে, কৃত্রিম চিনিতে থাকা ‘এরিথ্রিটল’ নামক একটি যৌগ রক্তজমাট বাঁধা, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
সেখানে বলা হয়েছে, বিগত ৩ বছরে হৃদরোগের সাথে সম্পর্কযুক্ত যতগুলো মৃত্যু ঘটেছে, তার সাথে কোনো না কোনো ভাবে এই ‘এরিথ্রিটল’-এর যোগ রয়েছে। যদিও এই যৌগটিকে নিশ্চিতভাবে দায়ী করার আগে বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে যারা নিয়মিত কৃত্রিম চিনি রান্নায় ব্যবহার করেন তাদের স্ট্রোক এবং সেরিব্রোভাসকুলার রোগের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেড়ে যায় এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকিও তাদের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
পুষ্টিবিদদের মতে, বাজারে যে সকল কৃত্রিম চিনি পাওয়া যায়, তাতে অ্যাসপারটেম ও সুক্রালোজ নামক যৌগ থাকে। এই যৌগগুলোর কারণেই কৃত্রিম চিনিতে মিষ্টি ভাব আসে। এগুলো কিন্তু শরীরের পক্ষে মোটেই ভালো নয়। সুক্রালোজের তুলনায় অ্যাসপারটেম আরো বেশি ক্ষতিকর। এই দুই যৌগ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। শরীরে নেগেটিভ ইলেকট্রন তৈরি হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। যেকোনো কৃত্রিম জিনিসই তো বেশি খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো নয়, কৃত্রিম চিনিও তাই পরিমিত মাত্রায় খাওয়াই শ্রেয়। কৃত্রিম চিনি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়বে না, ওজন বাড়বে না এই ভেবে সকালে চা থেকে শুরু করে, সারা দিনের রান্নাবান্না এমনকি ক্ষীর কিংবা পায়েসও মিষ্টি ভাব আনতে কেউ কেউ এই প্রকার চিনির ব্যবহার করেন। এতে কিন্তু আপনার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই মাত্রাতিরিক্ত কৃত্রিম চিনি খাওয়া উচিত নয়। যাদের হৃদযন্ত্রের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এই প্রকার চিনি না খাওয়াই ভালো। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা