সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৬ পূর্বাহ্ন

রোজাদার ফুটবলারদের জন্য ইংলিশ ফুটবলে ‘বিশেষ নির্দেশনা’

স্পোর্টস ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩

রমজান মাস উপলক্ষে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও ইংলিশ ফুটবল লিগে খেলা চলার সময় খেলোয়াড়দের বিরতি দেয়াসহ রেফারিদের বেশকিছু ‘বিশেষ নির্দেশনা’ দিয়েছে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ)। রমজান মাসে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সকল ম্যাচের সময় রোজা রাখা মুসলিম ফুটবলার ও ম্যাচ কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ বিরতি দেবেন রেফারিরা। এর আগে ফুটবলাররা নিজে থেকে বিরতি বা ইফতারের সময় খুঁজে নিতেন। কিন্তু এবার রমজান শুরুর আগেই এফএয়ের বিশেষ চার্টারে সবগুলো ক্লাব সম্মত হয়েছে। এর ফলে রোজা থাকা সকল ফুটবলারকে ইফতারের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে বিরতি দেয়া হবে। এর আগে ২০২১ সালে ‘মুসলিম অ্যাথলিট চার্টার’ নামে একটি সনদে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মতি জানিয়েছিল কয়েকটি ক্লাব। ওই চার্টারটি সকল মুসলিম অ্যাথলিটদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এবার এফএয়ের নতুন নির্দেশনায় বিষয়টি এখন থেকে সব ফুটবল ম্যাচের জন্য প্রযোজ্য হবে।
মুসলিম ফুটবলারদের জন্য ‘বিশেষ চার্টার’: রেফারিদের দেয়া নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে যে ম্যাচ শুরুর আগেই কোন কোন ফুটবলার রোজা রেখেছেন, তাদের সাথে কথা বলে নিতে। এরপর ম্যাচ চলাকালে একটা আনুমানিক সময় বাছাই করতে, যখন একটি বিরতি দেয়া হবে এবং ওই সময়ে তারা ইফতার করতে পারবেন।
রেফারিদের বলা হয়েছে, বিরতিতে রোজাদার ফুটবলাররা তরল, এনার্জি জেল কিংবা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন, যেন রোজা রাখার পরও শরীরে যথেষ্ট শক্তি থাকে এবং ধর্মীয় রীতিও পালন করতে পারে একজন ফুটবলার। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফুটবলার ইসলাম ধর্মের অনুসারী। লিভারপুলের মোহাম্মদ সালাহ, চেলসির এনগোলো কান্দে, ম্যানচেস্টার সিটির রিয়াদ মাহারেজরা রোজা রাখেন বলে জানা গেছে।
মাঠে ওই ফুটবলারদের বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় আচার পালন করতে দেখা যায়। বিশেষত খেলা শুরুর আগে দোয়া করা কিংবা গোল দেয়ার পর তা নিয়ে আনন্দ প্রকাশের সময়। ২০২১ সালে করা মুসলিম চার্টারে সব মিলিয়ে ১০টি পয়েন্ট ছিল। যার মধ্যে অ্যালকোহল পরিহার এমনকি কোনো উদযাপনের সময়েও, প্রার্থনার জন্য উপযোগী স্থানের ব্যবস্থা করা, হালাল খাবার এবং রমজান মাসে রোজা রাখার অনুমতি দেয়া। সেসব পয়েন্ট এখনো বহাল রয়েছে।
অলাভজনক সংস্থা নুজুম স্পোর্টসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এবাদুর রহমান ওই সময় বলেছিলেন, ‘আমি খেলাধুলার জগতে কাজ করার সুবাদে জানি যে এখানে আমার ধর্ম মেনে চলা কতটা কঠিন। খেলোয়াড় ও ক্লাবগুলোর সাথে কথা বলে এটা অনুভব করেছি যে যুক্তরাজ্যে একটি মুসলিম অ্যাথলিট চার্টার চালু করার এটাই সঠিক সময়। আমরা বিশ্বাস করি এটাই প্রথম এবং এর মতো কিছু আগে হয়নি।’

এবাদুর রহমান ওই চার্টারকে সংহতি, সমতা এবং নিজেদের ক্লাব ও টিমে মুসলমান খেলোয়াড়রা যে অবদান রাখছে তাকে স্বীকৃতি দেয়ার ইতিবাচক আন্দোলন বলে বর্ণনা করেছিলেন। তবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এর আগেও ইফতার করার জন্য বিরতি দেয়া হয়েছিল। ২০২১ সালে লেস্টার সিটি ও ক্রিস্টাল প্যালেসের মধ্যকার একটি ম্যাচে রেফারি গ্রাহাম স্কট বিরতি দিয়েছিলেন। ওই ম্যাচে ওয়েসলি ফোফানা ও শেইখো কোয়াটে সূর্য ডোবার সময় ইফতার করেছিলেন। ওই ফোফানা টুইট করে প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ ও ক্রিস্টাল প্যালেসের গোলকিপার ভিসেন্তে গুয়াইতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন, ‘গোলকিপার গোল কিকের সময় মুসলমান ফুটবলারদের অনুরোধে বিরতি দিয়েছিলেন এবং রেফারি অনুমোদন দিয়েছিলেন ইফতারি করার জন্য।’ ইংল্যান্ডে ২৩ মার্চ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত রমজান মাস চলবে।
মুসলিম ফুটবলাররা কী বলছে: ইংল্যান্ডের ক্লাব পর্যায়ের দলগুলো ও অ্যাকাডেমিতে মোট ২৫৩ জন মুসলিম ফুটবলার আছেন। নুজুম স্পোর্টস নামে একটি অলাভজনক সামাজিক সংগঠন এই ফুটবলারদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। ইসলামে রমজান মাস পবিত্র মাস হিসেবে বিবেচিত এবং এই মাসে যারা রোজা রাখেন তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকে বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছে নুজুম স্পোর্টস। ইংলিশ ক্লাব এভারটনের মিডফিল্ডার আব্দুলায়ে ডোকোরে বলেন, ‘আমি রমজান ভালোবাসি। কখনো কখনো রমজানে ফুটবল খেলা কঠিন, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে যখন রমজান মাস আসে। কিন্তু আমি সবসময় রোজা রাখি এবং এটা আমার খেলায় কোনো প্রভাব ফেলেনি।’ ডোকোরের মতো মুসলিম ফুটবলারের জন্য ধর্মীয় রীতি-নীতি বড় প্রভাব রাখে তাদের জীবনে।
তিনি বলেন, ‘ধর্ম আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, আমি সবসময় ধর্ম আগে রাখি, এরপর আমার কাজ। দুটি এক সাথে যদি চলে আমি কোনো সমস্যা দেখি না।’ তিনি নিয়মিত মসজিদে যান, বৃহত্তর ম্যানচেস্টারে তার পরিবার নিয়ে থাকেন এবং পরিবারের সবাই খুব ধার্মিক। ডোকোরে ইংল্যান্ডকে ইউরোপের সেরা দেশ মনে করেন। কারণ তিনি এখানে নিজের ইচ্ছামতো ধর্মীয় আচার পালন করতে পারেন।
এভারটনে তিনজন মিডফিল্ডার খেলেন, তিনজনই মুসলিম। ডোকোরে বলেন, তাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক, তারা ড্রেসিংরুমে একসাথে নামাজ পড়েন। নামাজে ইদ্রিসা গুয়ে ইমামের দায়িত্ব পালন করেন। তারা একসাথে জুম্মার নামাজ পড়তে মসজিদে যান। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে রমজান মাসে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মোট ৫২টি ম্যাচ মাঠে গড়িয়েছিল, এর মধ্যে নয়টি ম্যাচের মধ্যে ইফতারের সময় মাঠে খেলা চলছিল। যদিও মুসলিম ফুটবলারদের কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি, তবে এবার প্রিমিয়ার লিগ রোজা রেখে খেলার বিষয়টিকে আরো গুরুত্বের সাথে দেখছে। নুজুম স্পোর্টস রেফারিদের পেশাদার সংগঠন প্রফেশনাল গেম ম্যাচ অফিসিয়ালস লিমিটেডের সাথে একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে, যেখানে রেফারিদের রোজার মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে। মুসলিম চ্যাপলেইন্স ইন স্পোর্ট ২০১৪ সাল থেকেই যুক্তরাজ্যে মুসলিম অ্যাথলিটদের নিয়ে কাজ করছে, তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও ইংলিশ ফুটবল লিগ। প্রিমিয়ার লিগ ইসলাম সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে এই প্রতিষ্ঠান থেকে পরামর্শ নিয়ে থাকে।
কিভাবে অনুশীলন করলে এবং কী ধরনের খাবার একজন ফুটবলারকে রোজা রেখে খেলতে সাহায্য করবে এ বিষয়ে গবেষণাও হয়েছে বিস্তর।
মুসলিম চ্যাপলেইন্স ইন স্পোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল ভামজি বলেছেন, ‘মুসলমান ফুটবলাররা বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রিমিয়ার লিগে এসেছেন। তাদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট আছে। এসব বিষয়ে মাথায় রেখেই আমরা কাজ করছি।’ তিনি বলেন, ‘প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ দুই ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি ও লিভারপুল আমাদের থেকে সাহায্য নিয়ে থাকে। এই ক্লাব দুটির মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে খুবই মিল রয়েছে। পেপ গার্দিওলা ও ইয়ুর্গেন ক্লপ কোচ হিসেবে উদার মনের। তারা ফুটবলারদের সুবিধা-অসুবিধা বুঝেন। ইংল্যান্ডজুড়েই রমজানকে আলাদাভাবে পালন করা হচ্ছে এখন। লন্ডনের ক্লাব চেলসি ২৬ মার্চ তাদের স্টেডিয়াম স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ইফতারের আয়োজন করবে। এটাকে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি ইভেন্ট বলছে ক্লাবটি। স্থানীয় মসজিদগুলোর সদস্যরা ও চেলসির মুসলিম সমর্থক গোষ্ঠীদের আলাদাভাবে দাওয়াত দিচ্ছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। বাকিরা টিকিট কেটে ওই ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন। সূত্র : বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com