শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৬ অপরাহ্ন

জাপানে ‘সামরিকবাদের’ উত্থান

মো: বজলুর রশীদ :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০২৩

জাপানের ঐতিহ্যবাহী সংবিধানে সশস্ত্রবাহিনীকে যুদ্ধ করার নীতি চিরদিনের জন্য ত্যাগ করে বৈদেশিক নীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। দেশটি সেই ঐতিহ্য আর বজায় রাখতে পারছে না। ১২ ডিসেম্বর ২০২২, জাপানের ক্ষমতাসীন দলের জোট, ৯০ শতাংশ লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এমপি এবং ১০ শতাংশ কোমেইতো পার্টির এমপিদের সমন্বয়ে গঠিত, জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পরিবর্তনের বিষয়ে একমত হয়। সাধারণ নিরাপত্তা ইস্যুর পাশাপাশি প্রতিরক্ষা বিষয়ও চিহ্নিত করে আগামী ১০ বছরে সামরিক উন্নয়নে করণীয় নির্দেশনা স্থির করা হয়।
১৯৪৭ সালে প্রণীত সংবিধানের নবম ধারার সাথে বর্তমান সিদ্বান্তগুলোর অসঙ্গতি রয়েছে। ওখানে বলা আছে- ‘জাপান বৈদেশিক নীতির সমস্যা সমাধানের জন্য সশস্ত্রবাহিনীর ব্যবহার চিরদিনের জন্য ত্যাগ করেছে।’ এই সাংঘর্ষিক বিষয়টি সমাধান বা পরিবর্তন না করে জাপান ইতোমধ্যে বড় এক সমরশক্তি হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে এবং পরাশক্তির বড় সেনাসদস্যের দল জাপানে অবস্থান করছে। শিনজো আবে ধারাটি নবম অনুচ্ছেদে তৃতীয় ধারা যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়ে সংশোধন করার চেষ্টা নিয়েছিলেন সেটি ‘আবে সংশোধনী’ নামে পরিচিতি পায়। আবে সংশোধনী প্রবর্তন আধুনিক জাপানের মৌলিক দলিলকে শুধু উপহাসই করে। অনেকে সম্পূর্ণ ধারাটি বাদ দিতে চান। তবে এরকম মৌলিক একটি দলিলকে পরিবর্তন করতে জাপানিরা নিজেদের সাথে গাদ্দারি করা মনে করছেন। বর্তমান প্রতিরক্ষাবাহিনী এসডিএফে এন্টি মিসাইল ইউনিট গঠনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্সের তথ্যে দেখা যায়, জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫৬ হাজার সেনাসদস্য রয়েছে, যা অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। সংবিধানের ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- তৃতীয় কোনো পক্ষ জাপানের ওপর হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে তা রক্ষা করতে হবে। অনুচ্ছেদ ৬-এ স্পষ্টভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জাপানের মাটিতে সেনা ঘাঁটি স্থাপনের অধিকার দেয়। এর ফলে মার্কিনিরা বিরাট ওকিনাওয়া দ্বীপ বলতে গেলে দখল করে আছে। দ্বীপটি এখন চীন দাবি করছে। জাপানে ছোট বড় ৩২টি ঘাঁটি ও ৪৮টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু আছে। অভিন্ন মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে শক্তিশালী জোট হলেও অনেক জাপানি মনে করেন, জাপানি ও মার্কিনিরা তেল-জলের মতো মিশে আছে। যেমনটি যুগো¯স্লাভিয়ায় সার্ব ও বসনিয়ানদের মার্শাল টিটু একত্রে মেশানোর চেষ্টা করেছিলেন। প্রকাশিত নিরাপত্তা কৌশলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ২০২৭ সালের মধ্যে ৫০০টি ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হবে। এ সময়ের ভেতর এগুলো নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করা হবে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হলো- জাপান সরকারের পরিকল্পিত সেনা আপগ্রেডেশনের প্রতিরক্ষা খরচ কিভাবে দেবে তা চিহ্নিত করা। বর্তমান সেনা খরচ ও প্রতিরক্ষা বাজেট দ্বিগুণ না হলে এটি সম্ভব নয়। এতে জাপানের অতিরিক্ত ৩০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। কিসিদার পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী সুগা কোভিট পরবর্তী মন্দার মধ্যে অলিম্পিক গেম সার্থকভাবে শেষ করেছিলেন। সামরিক এই জরুরি প্রয়োজনে জাপানকে অনেক অর্থ খরচ করতে হলে ধীরে ধীরে দেশের বার্ষিক জিডিপির ২ শতাংশে নিয়ে আসতে হবে। যুদ্ধোত্তর সময়কালে জাপানের প্রতিরক্ষা ব্যয় ১ শতাংশের নিচে ছিল। জাপানের অর্থনীতি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম। প্রধানমন্ত্রী কিশিদা বিষয়টি জনগণের কাছে বোঝানের সময় বিরোধীরা তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনার মুখে নীল না হওয়া পর্যন্ত ব্যাখ্যা করতে পারেন।’
জাপানের প্রতিরক্ষা নীতিতে আমূল পরিবর্তন প্রক্রিয়াটি কীভাবে বাস্তবে উন্মোচিত হবে, যদিও আজকের বিশ্বে সামরিক পরিবর্তন স্বাভাবিক একটি বিষয়। চীন মনে করে জাপানকে সামরিকভাবে শক্তিশালী করে যুক্তরাষ্ট্র তার দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে ও তাইওয়ানকে ব্যবহার করবে। প্রয়াত আবে তার তাইওয়ানপন্থী অবস্থানের জন্য পরিচিত ছিলেন। পদত্যাগের পর আবে ২০২১ সালের শেষের দিকে বলেছিলেন, ‘তাইওয়ানের জরুরি অবস্থা জাপানের জরুরি অবস্থা এবং জাপান-মার্কিন জোটের জন্য জরুরি অবস্থা।’ হত্যাকা-ের পর আবের প্রতি সহানুভূতি ডানপন্থী শক্তির উত্থান জাপানকে শক্তিশালী করবে কি না এবং যুদ্ধোত্তর সংবিধানের নবম ধারা সংশোধন হচ্ছে কি না সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ। জাপানের অনেকেই উদ্বিগ্ন যে কিসিদা প্রশাসন আবের উত্তরাধিকার পূরণের সুযোগটি কাজে লাগিয়ে জাপানি সামরিকবাদকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। বেশির ভাগ সংসদ সদস্য সামরিকবাদের উত্থান চান।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ফুমিও কিশিদা সর্বশেষ নির্বাচনী বিজয়ের মাধ্যমে অর্জিত আগামী তিন বছর রাজনৈতিকভাবে কতটা সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন সেটি। পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ও ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কিসিদার প্রবল আগ্রহ রয়েছে। আবের স্বপ্নের ব্যাটন তুলে নেয়ার জন্য কিশিদার যথেষ্ট অনুপ্রেরণা রয়েছে। অবাক করা বিষয় হলো- সবচেয়ে বড় বাধা হবে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা, বিরোধী দলের সাথে নয়। সংবিধান পরিবর্তনের অর্থ হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র জাপানের জন্য যে শান্তির সংবিধান প্রণয়ন করেছিল তা সংশোধন করা, বিশেষ করে ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- জাপানি জনগণ জাতির সার্বভৌম অধিকার হিসেবে যুদ্ধকে চিরতরে পরিত্যাগ করে এবং আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তির উপায় হিসেবে হুমকি বা শক্তি ব্যবহার করে’, ‘স্থল-সমুদ্র ও বিমান বাহিনীর, পাশাপাশি অন্যান্য যুদ্ধসম্ভাবনা কখনোই বজায় রাখা হবে না’ এবং ‘রাষ্ট্রের যুদ্ধের অধিকার স্বীকৃত হবে না।’
সংবিধান পরিবর্তন না করেও জাপান নতুন সামরিক আইন প্রণয়নে বাধাপ্রাপ্ত হবে না; সংবিধান সংশোধন ও জাপান তার পুরোনো সামরিকীকরণের পদ্ধতিতে ফিরে আসার মধ্যে তেমন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে না। প্রকৃতপক্ষে, সংবিধান সংশোধনের একটি বৃহত্তর প্রতীকী অর্থ রয়েছে। জাপানের ডানপন্থীরা বিশ্বাস করে যে এই পরিবর্তনটি জাপানকে যুদ্ধে পরাজয়ের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দেবে। তাইওয়ানের ভাষ্যকার জুলিয়ান কুয়োর বলেন, আসল চাবিকাঠি হলো- যুক্তরাষ্ট্র ‘বাঘকে তার খাঁচা থেকে মুক্ত করতে চায় কি না।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো নির্ধারক ফ্যাক্টর। আবে ক্ষমতায় থাকাকালীন চীন-মার্কিন সম্পর্কের পাশাপাশি চীন-জাপান সম্পর্কেরও পরিবর্তন ঘটেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পরে চীনের বিরুদ্ধে জাপানের অবস্থান আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং মার্কিন মিত্র হিসেবে জাপানের মর্যাদা আরো বেড়ে যায়।
চীন এখন আর জাপানকে সমান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে না। আবের মৃত্যুর পর কিশিদা প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আর কোনো ‘ব্যাকসিট ড্রাইভার ‘ নেই। মনে হচ্ছে তাড়াহুড়ো না করে সংবিধান সংশোধনের পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে। জাপানের যুক্তরাষ্ট্রপন্থী ও তাইওয়ানপন্থী অবস্থানও কোনোভাবে বদলাচ্ছে না। চীনা নেটিজেনরা বরং বলেছেন, জাপান যদি সামরিকীকরণে ফিরে যায় তবে চীন এক শতাব্দীর লজ্জা মুছে ফেলার সুযোগ পাবে।
কিসিদা ওয়াশিংটন সফর শেষ করেছেন, এ বছরের ১৩ জানুয়ারি। তিনি বাইডেনের সাথে বৈঠক করেছেন। এখন জাপান-মার্কিন সম্পর্ক সর্বোচ্চ উচ্চতায়। কিশিদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের পরে শীর্ষে ছিল পাঁচটি জি-সেভেন দেশ, ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও কানাডা সফর করা। জাপান জি-৭ গ্রুপের বর্তমান সভাপতি। বাইডেন কিশিদার প্রশংসা করে বলেন, ‘একজন সত্যিকারের নেতা ও সত্যিকারের বন্ধু।’ ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে জাপানে মার্কিন মেরিন কর্পস ঘাঁটির কমান্ডার মেজর জেনারেল হেনরি সি স্ট্যাকপোল বলেছিলেন, আমেরিকান সেনাদের অবশ্যই জাপানে থাকতে হবে; কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাপান আবার পুনরুত্থিত হোক কেউ তা চায় না।’ তিনি মনে করেন, নেকড়েদের আবদ্ধ করে রাখাই উত্তম! ওয়াশিংটন সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জাপান চেয়ার জনস্টন বলেন, ‘অনিচ্ছার হাওয়া পাল্টে গেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র জাপানের নতুন সক্ষমতাকে স্বাগত জানাচ্ছে।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক ক্রিয়াকলাপের কারণে পূর্ব এশিয়ায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জাপান গুরুত্বপূর্ণ কৌশলী ভূমিকা পালন করবে ও মার্কিনিদের পক্ষে প্রক্সি দেবে মনে করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে, জাপানি আত্মরক্ষাবাহিনী, জেএসডিএফ কেবল প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত একটি ‘ঢাল’ হিসেবে কাজ করেছে, যখন মার্কিন বাহিনীকে প্রতিশোধমূলক আক্রমণের জন্য ‘বর্শা’ হিসেবে কল্পনা করেছিল। এই ইস্যুর প্রতিফলন ঘটিয়ে জাপানের দীর্ঘতম প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত শিনজো আবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদের শেষে পুরো সপ্তাহে শত্রুঘাঁটি আক্রমণের সক্ষমতা অর্জনের পরিকল্পনার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে সক্ষম হন, যেটি ‘আবের পাল্টা আক্রমণের ক্ষমতা’ নামে পরিচিত লাভ করে এবং এই মতবাদকে কিশিদা প্রশাসন সম্মান করে তুলে ধরছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র খুশি তবে চীন বিরূপ। সামরিকবাদ ও জি-৭ সভাপতি হিসেবে জাপানের জন্য বড় তিনটি সমস্যা সামনে এসেছে। কিশিদা কি সেগুলো সমাধান দিতে পারবেন? তার একটি হলো চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দোসর হিসেবে ইউক্রেনকে সমর্থন ও রাশিয়াকে কঠোরতা প্রদর্শন করতে হবে। তবুও, জাপান এখনো রাশিয়ার তেল-গ্যাস উন্নয়ন প্রকল্প সাখালিন-১ ও সাখালিন-২-এ প্রচুর সহায়তা পাচ্ছে। প্রতিদিন রাশিয়ার অর্থনৈতিক পাইপলাইনে বিলিয়ন ইয়েন ঢেলে দিচ্ছে। জাপান অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রায় ৯০ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভর করে। অপরদিকে সাখালিন-১ মূল্যবান বিকল্প উৎস। সাখালিন-২ জাপানের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, এলএনজি আমদানির প্রায় ৯ শতাংশ সরবরাহ করে এবং এর মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৩ শতাংশ, যা জাপানের জ্বালানি নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে অপরিহার্য। এ ছাড়াও কঠোর বাস্তবতা হলো- কিশিদার নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত হিরোশিমা গ্যাস কোং লিমিটেড তার প্রায় অর্ধেক এলএনজি সাখালিন-২ থেকে সংগ্রহ করছে। তবে এখন যা পরিস্থিতি জেলেনস্কির ইউক্রেন সফরের আমন্ত্রণ কিশিদা নাও রাখতে পারেন যদি বাইডেন চাপ না দেন। পুতিন যেকোনো সময় ইউরোপের মতো ‘গ্যাস লাইন কূটনীতি’ জাপানের সাথে খেলে দিলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এত দূরে থেকে গ্যাস সরবরাহ করা দুরূহ হয়ে পড়বে। জাপান ইউক্রেনকে কেবল বুলেট-প্রুফ ভেস্ট, হেলমেট ও অন্যান্য প্রতিরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করে। জার্মান হিসাব দিয়েছে, ২০২২ সালে ইউক্রেনকে জাপানের সহায়তা জি-৭ এর মধ্যে সর্বনি¤œ, যার মোট মূল্য ৬০০ মিলিয়ন ইউরো, যেটি ইউক্রেনকে দেয়া মোট মার্কিন সহায়তার মাত্র ১.২ শতাংশ। পাশ্চাত্য রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পথে এগিয়ে যাচ্ছে, কিশিদার জন্য এটি কঠিন পরীক্ষার বিষয়।
দ্বিতীয় সমস্যাটি পারমাণবিক অস্ত্রকে কেন্দ্র করে। কিশিদা ‘পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন বিশ্ব’ গড়ার জন্য পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে সক্রিয়কর্মী। নাগাসাকি হিরোশিমা জাপানিরা কখনো ভুলবে না। কিন্তু রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে সরাসরি হুমকি দিচ্ছে এবং চীন তার পারমাণবিক অস্ত্রভা-ার সম্প্রসারণ করছে, বাস্তবতা হচ্ছে- জাপান আগের চেয়ে বেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ছাতার আশ্রয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। ১৯৯১ সালের মে মাসে জাপান ইরানের বিরুদ্ধে পারস্য উপসাগরে মাইনসুইপার পাঠায়। ইরান বলেছিল এগুলো আর ফেরত যাবে না। তৎকালীন জাপানি প্রধানমন্ত্রী তোশিকি কাইফু বলেছিলেন ‘জাপানকে আবারো বিদেশে তার বাহিনী পাঠানোর অনুমতি দেয়া একজন মদ্যপকে চকোলেট লিকার দেয়ার মতো।’ সহজে বোঝা যায়, পরাশক্তির চাপে জাপান এটি করেছিল অর্থাৎ সামরিক শক্তি ব্যবহারের চাবিকাঠি জাপানের হাতে নেই। পরিশেষে, ক্রমবর্ধমান চীনকে কীভাবে মোকাবেলা করা যায় তাও কিশিদা প্রশাসনের জন্য একটি বড় মাথাব্যথা। কিশিদা অনেকবার বলেছেন, তার সরকার চীনকে মাথায় রেখে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে, জোর করে স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের কোনো প্রচেষ্টা সহ্য করবে না। কিন্তু জাপানের সরকারি ঋণ ইতোমধ্যে জিডিপির ২৬৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে- যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ, চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তির সাথে সামঞ্জস্য করার প্রয়াসে টোকিও তার ক্রমবর্ধমান জাতীয় ঘাটতিতে কতটা যোগ করতে পারে তার সীমা না থাকলে কিসিদা কিছুই ব্যালেন্স করতে পারবেন না।
বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে কেবল সঙ্ঘাত ও আক্রমণ প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে জাপানকে পুরো অঞ্চলের উত্তেজনা প্রশমনে চীনের প্রতিবেশী হিসেবে তার নিজস্ব ভূমিকা পালন করলে এই অঞ্চলে ভিন্ন পরিবেশ তৈরি হবে। টোকিওর পক্ষে কি কঠোর কূটনীতি পরিচালনা করা সম্ভব যা শক্তিশালী ও সূক্ষ্ম উভয়ই? এখন কিশিদা প্রশাসনের কূটনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। জাপান কি তার নিজ ঐতিহ্যগত শক্তি ও নীতি নিয়ে এগোবে নাকি পশ্চিমা মাউথপিস হিসেবে কাজ করবে তা নিয়ে খোদ জাপানে বিপক্ষ জোট শক্তিশালী হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র জাপানকে সামরিক শক্তিবিহীন করেছিল যেন জাপান ঘুরে ছোবল না দেয়, এখন সামরিকীকরণ করা হচ্ছে যেন চীনকে ছোবল দিতে সহজ হয়। লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com