সাভারে কর্মরত প্রথম আলো পত্রিকার সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তার বাসা থেকে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ এবং তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, গভীর রাতে একজন সাংবাদিককে বাসা থেকে তুলে নেয়া সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের নিপীড়নমূলক আচরণে আবারও প্রমাণ হলো দেশে গণমাধ্যমের কোনো স্বাধীনতা নেই। তিনি বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী ধরার স্টাইলে কোনো বাহিনীর পরিচয়ে রাতের অন্ধকারে সাংবাদিককে তুলে নিয়ে যাওয়া একাত্তরের বর্বর হানাদার বাহিনীকে হার মানিয়েছে। সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নেয়ার পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তার অবস্থান সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। তাকে তুলে নেয়ার ঘটনায় ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে সরকার বন্দুকের জোরে মানুষের প্রতিবাদকে স্তব্ধ করে দিতে চায়। মির্জা ফখরুল বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা বলা যাবে না, অভাবের কথা বলা যাবে না, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কথা বলা যাবে না, ভোট ডাকাতির কথা বলা যাবে না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যাবে না। সরকার দেশে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আমি অবিলম্বে সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের এই আন্দোলন : গণতন্ত্রের জন্য দেশের মানুষ লড়াই করছে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের এই আন্দোলন।’ গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর গুলশানের দি ওয়েস্টিন হোটেলে বিদেশী কূটনীতিকদের সম্মানে আয়োজিত বিএনপি’র ইফতার মাহফিল তিনি এ কথা বলেন। ইফতার মাহফিলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, ব্রিটিস হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি. মান্টিটাস্কি ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী, ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভুশি, ভারতের উপহাইকমিশার বিনয় জর্জ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও ইফতারে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন সংস্থা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরাও ছিলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্যে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেকে রহমানের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের শুভেচ্ছা জানান। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অতি সম্প্রতি বিএনপির ১৭ জন নেতা-কর্মী প্রাণ দিয়েছে। আমাদের দলের চেয়ারপারসনকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। আমাদের ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, শতাধিক নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে।’
ইফতারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু ?মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আলম নোমান, শাহজাহান ওমর, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, এ এস এম আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, গোলাম আকবর খন্দকার, এনামুল হক চৌধুরী, ফরহাদ হালিম ডোনার, বিজন কুমার সরকার, আবদুল কাইয়ুম, খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শ্যামা ওবায়েদ, আসাদুজ্জামান আসাদ, জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ইশরাক হোসেন, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, মীর হেলাল, বগুড়া-৪ আসনের সাবেক সংসদ মোশাররফ হোসেন অনুষ্ঠানে ছিলেন।
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীসহ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারাও ইফতারে ছিলেন। পরে কূটনীতিকরা নৈশভোজেও অংশ নেন।