সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন

কালীগঞ্জে কৃষকের সূর্যমুখী বাগান এখন স্থানীয়দের বিনোদন কেন্দ্র

তৈয়বুর রহমান (কালীগঞ্জ) গাজীপুর :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৩

সবুজ পাতার মাঝে মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে হলুদ রঙের সূর্যমুখী ফুল। সামান্য বাতাসেই দোল খাচ্ছে ফুলগুলো। এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে দলে-দলে আসছেন নানা বয়সের কয়েক শ মানুষ। পাহাড়া লোক রেখেও দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কেউ শাড়ি পড়ে, কিউ বা আবার সালোয়ার কামিজ পরে তুলছেন ছবি বা সেলফী। কেউবা আবার বাগান থেকে সূর্যমুখী ফুল তুলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাগানের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। বড়দের সাথে শিশুরাও মেতেছে সমান আনন্দে। গাজীপুরের কালীগঞ্জ সরকারী শ্রমিক কলেজের সামনে কালীগঞ্জ-টঙ্গী-ঘোড়াশাল সড়কের পাশে পৌরসভার তুমলিয়া এলাকায় তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রণোদনায় কৃষক সুকুমার পালমার প্রদর্শণীতে দেখা গেছে এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। ৫০ শতাংশ জায়গা জুড়ে গেল বছরের ডিসেম্বরের ১০ তারিখে বপন করা হয়েছে হাইসান-৩৩ জাতের কয়েক হাজার সূর্যমুখী ফুলের বীজ। প্রায় প্রতিটি গাছে এখন ফুল ফুটেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বছর জুড়ে নানা ধরনের ফসল ও সবজির উৎপাদন হয়ে আসছে কালীগঞ্জ পৌরসভাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে। সূর্যমুখীর তেল ও বীজের চাহিদা পূরণে চাষের উদ্যোগ নেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কালীগঞ্জে কয়েকটি প্রদর্শনীসহ প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখীর। কয়েক বছরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকের বদৌলতে কৃষি অফিসের প্রণোদনায় স্থানীয় কৃষকদের প্রদর্শণী খামারগুলো ফুলপ্রেমীদের পদচারণায় বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশের কয়েক উপজেলার মানুষ প্রতিদিন ভিড় করছেন এ সূর্যমুখী বাগানে। পরিবার পরিজন, তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ কিছুটা বিনোদনের জন্য ছুটে আসছেন এখানে। পিছিয়ে নেই ভিডিও তৈরি করা টিকটকাররাও। বাগানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী জয় বলেন, সবার দেখাদেখি এখানে ঘুরতে আসলাম। প্রকৃতির এক অপরূপ নিলা-খেলা চলছে এখানে। মানুষের প্রচুর ভীরের মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দিতেই এখানে আসা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিদিনই সবাই সূর্যমুখী বাগানে আসতেছে তাই আমিও আসলাম। প্রথম আসলাম ২০ টাকা টিকেট নিলো। দেখলাম খুব ভাল লাগছে। তবে ওয়েদারটা মেঘাচ্ছন্ন, একটু রৌদ্র থাকলে আরও ভাল লাগতো। তবুও দুই বান্দবী মিলে কিছু ছবি তুললাম। একই কথা বলেন অন্য আরেক শিক্ষার্থী। টিকটকার সাব্বির আহমেদ জানান, ফেসবুকে দেখলাম এ বাগানে অনেকেই ছবি তুলেছে। অবশেষে আমিও সূর্যমুখী বাগানে ঘুরতে এসেছি। এসে খুব ভালো লাগছে। তাই একটি ব্লগ তৈরি করার পাশাপাশি বেশ কিছু ছবি তুললাম এবং কয়েকটি টিকটকও তৈরি করলাম। সূর্যমুখী বাগান পাহারার দায়িত্বে থাকা এক কিশোর জানায়, সে সারাদিন বসে থাকে। আর কোন দর্শনার্থী আসলে তাদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে টিকিট ফি নেওয়া হয়। এছাড়াও কেউ ফুল নিতে চাইলে, নষ্ট বা ভেঙ্গে পড়া ফুল ৫০/১০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সারাদিন অনেক মানুষ হয়। কৃষক সুকুমার পালমা বলেন, আমি পর পর দুইবার সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। সূর্যমুখী ফুলের চাষ একটি সৌখিন জিনিস। কারণ মানুষ ফুল খুব পছন্দ করে। তাছাড়া রাস্তার পাশে এবং কলেজের সামনে হওয়ায় মানুষ বাগানে খুব বিরক্ত ও সমস্যা করে। তারা ফুল চুরি করে নিয়ে যায়। তাই ভিতরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ছিলাম, তবে ২০ টাকা টিকিট মূল্যে প্রবেশদ্বার খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে মানুষ এখন ছবি ছবি তুলতে পারছে। তিনি আরো বলেন, আমি ৫০ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। তবে আগামীতে করলে আরো বৃহৎ আকারে করবো। তবে স্থানীয় কৃষি অফিসের লোকজন আমাকে সব ধরণের সহযোগী করছে। তারা মাঝে মধ্যে আমার এই বাগান পরিদর্শনে আসে। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ ফারজানা তাসলিম বলেন, সূর্যমুখী ফুলের একটি পাগল করা সৌন্দর্য রয়েছে। যা দর্শনার্থীদের সব সময় মুগ্ধ করে, আকর্ষণ করে। স্থানীয়ভাবে যে প্রদর্শনীগুলো আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় বাস্তবায়ন করছি, এর সবগুলোতেই দর্শনার্থীদের খুব ভীড়। তারা সেখান থেকে মানুষিক প্রশান্তি নিচ্ছেন। কৃষিবীদ ফারজানা তাসলিম আরো বলেন, সূর্যমুখী ফুলের তেলের একটি বাড়তি সুবিধা রয়েছে। এটা কোলেস্ট্রোরেল ফ্রী এবং অন্যান্য পুষ্টি উপদানগুলোও বেশি তাই এটা খাওয়াও আমাদের দরকার।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com