রমজান মাসে অসহায় ও অভাবীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা ও দান-সদকার ঐতিহ্য আছে। রমজান মাসে মহানবী (সা.) এত বেশি পরিমাণ দান-সদকা করতেন, যা প্রবহমান বাতাসের মতো ছিল। ‘আল-কামিল’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, জাহেলি যুগেও এই রীতি ছিল। রমজান মাস শুরু হলে রাসুল (সা.)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিব হেরায় আরোহণ করে ইবাদতে নিমগ্ন থাকতেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি হেরায় গিয়ে ইবাদত করতেন। পুরো মাস ধরে তিনি অসহায়দের খাবার খাওয়াতেন। ‘তারিখ আত-তাবারি’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ওমর (রা.) রমজান মাসে (যুদ্ধ ছাড়া প্রাপ্ত সম্পদ) ফাইপ্রাপ্ত সবার জন্য এক দিরহাম করে ভাতা নির্ধারণ করেন। রাসুল (সা.)-এর স্ত্রীদের জন্য দুই দিরহাম করে নির্ধারণ করেন। তাকে বলা হয়, আপনি খাবার রান্না করলেও তাদের তাতে অন্তর্ভুক্ত করবেন! এ কথা শুনে তিনি বলেন, আমি মানুষকে তাদের ঘরেই পরিতৃপ্ত করব। উসমান (রা.) এ রীতি অব্যাহত রাখেন এবং রমজানে খাবারও নির্ধারণ করেন। রমজানে মসজিদে ইবাদতে নিমগ্ন ব্যক্তি, মুসাফির ও অসহায়দের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতেন। আত-তাবাকাত আল-কুবরা গ্রন্থে বলা হয়েছে, তাবেঈন ইমরান বিন আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত, রমজান মাসে মসজিদে নববীতে রোজাদারদের শরবত দেওয়া হতো।
‘আখবারু মক্কা’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, উমাইয়া যুগে মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান (রা.) আলে আল-মুয়াম্মাল আল-আদাবিয়্যিন থেকে মক্কার একটি বাড়ি ক্রয় করেন এবং এর নাম রাখেন দারুল মারাজিল বা খাবারের ডেগ। কেননা এখানে অনেক ডেগ ছিল। তাতে হজযাত্রী ও রমজান মাসের জন্য খাবার রান্না করা হতো। তা রোজাদারদের মধ্যে বিতরণ করা হতো। তিউনিশিয়ার গভর্নর আল-আদিল আহমদ বিন মুহাম্মদ অসহায়-দরিদ্রদের জন্য বেশি দান করতেন। ‘আল-বয়ানুল মুগরিব’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি রমজানের প্রতি রাতে বাতি নিয়ে বের হতেন। তার সঙ্গে একজন দিরহাম বহনের জন্য থাকত। পথ চলতে চলতে তিনি অভাবী-দরিদ্রদের তা দিতেন। অতঃপর কারাউন জামে মসজিদে এসে পৌঁছলে তার এ কার্যক্রম শেষ হতো। তখন সবাই তার জন্য দোয়া করত।
তারিখে দিমাশক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, দামেশক ও জর্দানের গভর্নর মালিক বিন তাওক তখনকার সময়ে প্রসিদ্ধ দানশীল ছিলেন। রমজান মাস এলে প্রতিদিন ‘আল-খাদরা’ ফটকে দাঁড়িয়ে একজন ঘোষক ঘোষণা দিতেন। তখন সেখানে শাসনকার্য পরিচালিত হতো। বলা হতো, আল ইফতার রহিমাকুমুল্লাহ… (ইফতারের জন্য এসো, আল্লাহ তোমাদের ওপর অনুগ্রহ করুন)। সবার জন্য তা উন্মুক্ত থাকত। যে কেউ চাইলেই সেখানে ঢুকতে পারত। কেউ বাধা দিত না। রোজাদারদের ইফতার করাতে সাধারণ ব্যক্তিদেরও নানা রকম উদ্যোগ ছিল। এ ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা আন-নোমান (রহ.)-এর শায়খ হাম্মাদ বিন আবু সুলাইমান আল-কুফি খুবই পরিচিত। তারতিবুল আমালি আল-খুমাইসিয়্যাহ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, তিনি রমজানের প্রতিদিন পাঁচ শ ব্যক্তিকে ইফতার করাতেন। ঈদের রাতে তিনি তাদের নতুন কাপড় দিতেন। সবাইকে এক শ এক শ করে দিতেন।
‘ইয়াতিমাতুত দাহর’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, বুওয়াইহি সাম্রাজ্যের মন্ত্রী আস-সাহিবু ইবনু আব্বাদের কাছে রমজান মাসে আছরের পর কেউ এলে সে তার ঘর থেকে ইফতারের আগে বের হতে পারত না। তার সঙ্গে অতিথিকে ইফতার করতে হতো। রমজানের প্রতি রাতে তার বাড়িতে অন্তত এক হাজার লোক ইফতার করত। এ মাসে তার নামাজ-ইবাদত ও দান-সদকার পরিমাণ বছরের অন্য মাসের সমান ছিল।