চার দিনের সফরে জাপান যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২৫ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত জাপান সফর করবেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে বিষয়টি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে জাপান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিবৃতিতে শেখ হাসিনার জাপান সফরের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার করা হয়েছে।
এদিকে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ২৫ এপ্রিল থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর করার সম্ভাবনা রয়েছে। টোকিও দিয়ে সফর শুরু করে, ওয়াশিংটন হয়ে লন্ডন যাবেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী জাপানে দ্বিপক্ষীয় সফরে যাচ্ছেন। পরে বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন এবং ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সিংহাসনে আরোহণের (অভিষেক) আনুষ্ঠানিক আয়োজনে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই তিন দেশ সফরের সূচি, এজেন্ডা ও প্রস্তুতি নিয়ে কূটনৈতিক যোগাযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২৫ এপ্রিল তিন দিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে জাপান যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টোকিও সফরকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাপান ইন্ডাস্ট্রিয়াল আপগ্রেডেশন কো-অপারেশন সমঝোতা স্মারকসহ দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে একাধিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
জাপান সফরের বিষয়ে আজ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সম্মানিত অতিথিকে নৈশভোজে আপ্যায়িত করবেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, জাপান সরকার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছে এবং আশা করছে এ সফরের মধ্যে দিয়ে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটা হবে শেখ হাসিনার ষষ্ঠ জাপান সফর। ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম সরকারি সফরে তিনি জাপানে এসেছিলেন।
সফরে শেখ হাসিনা জাপান সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচির বাইরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমাবেশে ভাষণ দেবেন। এক অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলার সময়ে জাপানে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সংগঠন এবং ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করা শরণার্থীদের সহায়তায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে চার বিশিষ্ট জাপানের নাগরিককে সম্মানিত করবেন। বাংলাদেশ সরকার এর আগে বেশ কয়েকজন জাপানিকে এ সম্মান প্রদান করেছে। এর আগে, গত বছরের ২৯ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের কথা ছিল। কিন্তু ২৪ নভেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সফর স্থগিতের কথা জানানো হয়। জাপান সফর শেষে টোকিও থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রণে ১ মে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওয়াশিংটনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিশ্বব্যাংক কাজ করছে। এখনো পূর্ণাঙ্গ সফরসূচিসহ বিভিন্ন বিষয় চূড়ান্ত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে সরকারপ্রধানের ৫ মে লন্ডনে ব্রিটিশ রাজা হিসেবে চার্লসের আনুষ্ঠানিক অভিষেকে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। লন্ডনে দু-একদিন থাকার পর দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
গৃহস্থালি কাজে নারীর অবদান জিডিপিতে হিসাবের নির্দেশ: মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) গৃহস্থালি কাজে নারীর অবদান হিসাব করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, গৃহস্থালি কাজটা এমন মেয়েদের ছুটি নেই, বেতন নেই, বোনাস নেই, বিশ্রাম নেই। গতকাল মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনার কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এর আগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অর্থনীতিতে গৃহস্থালি কাজের অবদান স্বীকার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে আমাদের অনুশাসন দিয়েছেন। এ বছর না হলে আগামী বছরের বাজেটে জিডিপিতে গৃহস্থালি কাজের হিসাব করা হবে। প্রবাসী আয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন রেমিট্যান্স বেড়েছে রোজা ও ঈদের কারণে। তবে আগামীতে এই ধারা থাকবে না। পরে কোরবানির ঈদের আগে হয়তো আবারও বাড়তে পারে। এসময় স্লুইস গেট নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, হাওরে আর সড়ক হবে না, উড়াল সড়ক হবে। তবে আধা হাওরে সড়ক হতে হবে। পানির চাপে সড়ক ভেঙে যায়, যেখানে পানির চাপ বেশি সেখানে কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। প্রকল্পে বেশি পরামর্শক না নেওয়ার অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অনুমোদন দেওয়া একটি প্রকল্পে একজনের বেশি পরামর্শক না নেওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি। একই সঙ্গে বর্তমানে রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়ার উল্লসিত না হয়ে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। কেননা ঈদের কারণে রেমিট্যান্স বাড়লেও ঈদের পরে কমে যেতে পারে।
পাশাপাশি সমুদ্রের নীল অর্থনীতি (ব্লু ইকোনমি) কাজে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শিশু পল্লির ছেলে-মেয়েদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কারিগরি শিক্ষার আওতায় আনার নির্দেশনাও দেন তিনি। এখন থেকে সব হাওরে উড়াল সড়ক হবে: এখন থেকে হাওরে আর সড়ক হবে না, হবে উড়াল সড়ক। তবে অর্ধেক স্থল, অর্ধেক পানি এমন হাওরে সড়ক হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্দেশনা দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পানির চাপে সড়ক ভেঙে যায়। যেখানে পানির চাপ বেশি সেখানে কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী স্লুইস গেট নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বলেও পরিকল্পনামন্ত্রী জানান।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।