রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৩ অপরাহ্ন

হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত

মুহাম্মাদ শেখ মূসা
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৩

পবিত্র কুরআনুল কারিম নাজিলের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই রাতকে হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, উত্তম ও মহাসম্মানিত রাত হিসেবে আমাদের জন্য দান করেছেন। প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ দশকের রাতগুলোর মধ্যে কোনো এক বিজোড় রাত হলো লাইলাতুল কদরের রাত। যে রাতে পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে, সে রাতই লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা হজরত জিবরাইল আ:-কে সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে ঊষা বা ফজর পর্যন্ত।’ (সূরা আল কদর)
রমজান মাস পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস। শবেকদর কুরআন নাজিলের রাত। এ রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমার হেরা পর্বতের গুহায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের সরদার হজরত জিবরাঈল আ:-এর মাধ্যমে রাহমাতুল্লিল আলামিন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর প্রতি মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নাজিল করেন।
এ কারণে আল্লাহ তায়ালা এ রাতের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ রাতে মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদিকে হাজার মাসের ইবাদত-বন্দেগি ও আমলের সমান সওয়াব দান করেন। কুরআনুল কারিমের অন্য স্থানে এ রাতটিকে বরকতময় রাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন- ‘হা-মিম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে (কুরআন) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা দুখান : ১-৬)
কুরআন নাজিলের কারণে মর্যাদার এ রাতের কথা উল্লেখ করার পর যে মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে সে মাসের কথাও আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে উল্লেখ করেছেন এভাবে- আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রমজান মাস এমন একটি মাস যে মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে মানবের মুক্তির দিশারি ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে।’ (সূরা আল বাকারাহ-১৮৫) সুতরাং লাইলাতুল কদরের রাতে আল্লাহর ওই সব বান্দা সবচেয়ে বেশি সম্মানিত ও মর্যাদার অধিকারী হবেন, যাদের সাথে কুরআনের সম্পর্ক বেশি। যিনি কুরআন-সুন্নাহর আলোকেই নিজের জীবন পরিচালিত করবেন। বাস্তব জীবনে কুরআন-সুন্নাহর আমলে সাজাবেন জীবন। আর তারাই হবেন সফল।
রমজানের শেষ ১০ দিনের যেকোনো বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করা যায়, অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ রমজান দিবাগত রাতগুলো। তবে অনেক আলেমের গবেষণা ও ব্যাখ্যায় এবং বুজুর্গানে দ্বীনের মতে ২৬ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭ তারিখে পবিত্র শবেকদরের অন্যতম সম্ভাব্য রাত।
মর্যাদার এ রাত পেলে মু’মিন বান্দা আল্লাহর কাছে কী প্রার্থনা করবেন? কী চাইবেন? এ সম্পর্কে হাদিসের একটি বর্ণনা এভাবে এসেছে- হজরত আয়েশা রা: বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ সা:-কে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলে দিন, আমি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়ব?
রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘তুমি বলবে- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়ুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফা’ফু আন্নি।’ হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা : লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এত বেশি যে, রাসূলুল্লাহ সা: এ রাতটি পাওয়ার জন্য শেষ দশকে আজীবন ইতিকাফ করেছেন। রাসূল সা: বলেছেন, ‘আমি কদরের রাতের সন্ধানে (রমজানের) প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। তারপর আমার প্রতি ওহি নাজিল করে জানানো হলো, তা শেষ ১০ দিনে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে।’ তারপর মানুষ (সাহাবায়ে কেরাম) তাঁর সাথে ইতিকাফে শরিক হন।’ (মুসলিম)
কদর রাতের ফজিলত : মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নাজিল হওয়ার কারণে অন্য সব মাসের চেয়ে রমজান মাস বেশি ফজিলত ও বরকতময় হয়েছে। আর রমজানের রাতগুলোর মধ্যে কুরআন নাজিলের রাত লাইলাতুল কদর সবচেয়ে তাৎপর্যম-িত একটি রাত। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আমি একে নাজিল করেছি কদরের রাতে। তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সূরা কদর : ১-৩)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, ‘এ রাতের ইবাদত অন্য হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। (তানবিরুল মিকবাস মিন তাফসিরে ইবনে আব্বাস : ৬৫৪ পৃষ্ঠা)
তাবেয়ি মুজাহিদ রহ: বলেন, এর ভাবার্থ হলো- ‘এ রাতের ইবাদত, তিলাওয়াত, দরূদ কিয়াম ও অন্যান্য আমল হাজার মাস ইবাদতের চেয়েও উত্তম।’
শবেকদরের আমল : সুতরাং লাইলাতুল কদর পেলে এ আমল ও দোয়ায় রাত অতিবাহিত করা জরুরি। তা হলো- ১. নফল সালাত পড়া; ২. মসজিদে ঢুকেই দুই রাকাত (দুখুলিল মাসজিদ) সালাত পড়া; ৩. দুই দুই রাকাত করে (মাগরিবের পর ছয় রাকাত) আউওয়াবিনের সালাত পড়া;
৪. রাতে তারাবির নামাজ পড়া; ৫. শেষ রাতে সাহরির আগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া; ৬. সম্ভব হলে সালাতুত তাসবিহ পড়া; ৭. সম্ভব হলে তাওবার নামাজ পড়া; ৮. সম্ভব হলে সালাতুল হাজাত পড়া; ৯. সম্ভব হলে সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল সালাত বেশি বেশি পড়া; ১০. কুরআন তিলাওয়াত করা। সূরা কদর, সূরা দুখান, সূরা মুজাম্মিল, সূরা মুদ্দাসির, সূরা ইয়াসিন, সূরা ত্বহা, সূরা আর-রাহমান, সূরা ওয়াকিয়া, সূরা মুলক, সূরা কুরাইশ এবং চার কুল পড়া।
১১. দরূদ শরিফ পড়া; ১২. তাওবাহ-ইস্তিগফার পড়া। সাইয়েদুল ইস্তিগফার পড়া; ১৩. জিকির-আজকার করা; ১৪. কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত দোয়া পড়া; ১৫. পরিবার-পরিজন, বাবা-মা ও মৃতদের জন্য দোয়া করা, কবর জিয়ারত করা; ১৬. বেশি বেশি দান-সদকা করা; মহান রব্বে কারিম আমাদেরকে লাইলাতুল কদর নসিব করুন। আমিন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com