গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের রানীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন রাস্তার ওপর স্থায়ীভাবে বিল্ডিং নির্মাণ করছেন প্রবাসী মোঃ শহীদুল্লাহ। তিনি চড়পাড়া এলাকার মৃত ছিদ্দিকের ছেলে। রানীগঞ্জ বাজার কাপাসিয়া,কালীগঞ্জ গাজীপুর সদর মুখী অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তার প্রবেশমুখ দখল করে দিনের আলোয় এই ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে নজরই দিচ্ছেন না। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গোসাইর গাঁও বাড়ীগাঁও গ্রামের একমাত্র রাস্তার প্রবেশ মুখে পূর্ব পাশে পাঁচতল ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। গ্রামের বাসিন্দা ইমরান মিয়া পুবের জানান, গোসাইরগাঁও বাড়ীগাঁও গ্রামে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। সড়কটি সরকারি অর্থায়নে পাকা করা হয়। সড়কের প্রবেশ মুখে অন্তত ৪/৫ ফুট জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ করছেন প্রবাসী শহীদুল্লাহ। ফলে সড়ক সরু হয়ে যাচ্ছে; এ সড়কে যানবাহন ঢুকতে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে ভূমি কর্মকর্তারা বিষয়টি আমলে নিলেই হয়। এ ভবন নির্মাণ কাজের মালিক প্রবাসী শহীদুল্লাহ জানান,পুরাতন নকশা ও জমির ম্যাপ দেখে জায়গা মাপজোখ করে আমরা এখানে ভবনের কাজ শুরু করি। সড়কের কিছু অংশ নির্মানাধীন ভবনে ঢুকেছে কিনা জানিনা। দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ ওহাব খাঁন খোকা জানান, রাস্তার জায়গা ঠিকই ছিল, এখন দেখা যায় রাস্তার কিছু অংশ সেই ভবনে গিয়ে ঢুকেছে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে দেখি সরেজমিনে মাপজোখ করে বিষয়টি দেখবো। রানীগঞ্জে ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব বহুতল ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট সরকারি বিধিমালা অনুসরণ না করে এলাকাতে গড়ে তোলা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ এসব বহুতল ভবন। রানীগঞ্জে এক শ্রেণির লোক বহুতল ভবন গড়ে তোলার প্রবণতায় মগ্ন। অপরিকল্পিত এসব ভবন নির্মাণের ফলে কৃষিজমি হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাস্তাঘাট এবং পানি নিষ্কাশনের পথগুলো সরু হয়ে আসছে। বিশেষ করে রাস্তাঘাট অপেক্ষাকৃত সরু ও ঘিঞ্জি হওয়ার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়ছে। এসব ভবন নির্মাণের কারণে সরু হয়ে যাচ্ছে পানি নিষ্কাশনের প্রধান খালগুলো। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক লাইনের নিরাপদ দূরত্ব সম্পর্কিত স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক সার্টিফিকেট নিতে হয় এবং ভূমি ব্যবহার সম্পর্কে নীতিমালা অনুসরণের বিধান রয়েছে। কিন্তু এসব নির্মাণের ক্ষেত্রে এ নিয়মের কোন বালাই না মেনে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছে। জানা যায়, ইমারত বিধিমালা ১৯৯৬ অনুযায়ী চারতলা পর্যন্ত ইমারত নির্মাণ করার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ডিপ্লোমা সার্টিফিকেটধারী এবং পাঁচতলা বা তার অধিক তলার ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে স্নাতক ডিগ্রিধারী স্বীকৃত প্রকৌশলী কর্তৃক নকশা নির্ধারণ করতে হয়। ফরম ও ফি জমা দিয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে হয়। এলাকায় ভবন নির্মাণের সর্বাধিক উচ্চতা সম্মুখবর্তী রাস্তার প্রস্থ এবং রাস্তার মধ্যবর্তী খোলা স্থানের যোগফলের অধিক হবে না বলে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬ এ পরিষ্কার ও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া বাড়িঘর নির্মাণের পূর্বে ওই এলাকায় গাড়িসহ অন্যান্য যানবাহন যাতায়াতের জন্য এবং গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা রেখে ফায়ার সার্ভিস বা অগ্নিনির্বাপক থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিতে হয়। বহুতল ভবন নির্মাণের অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয সয়েল টেস্টও করা হয় না। এতে করে ভূমিকম্পের আশঙ্কায় বহুতল ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মাঈন উদ্দিন জানান,আমার জানামতে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী এ ভবন নির্মাণে কোন অনুমতি পত্র দেওয়া হয়নি। নিজ ইচ্ছাতে এসব বিল্ডিং গড়ে উঠেছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। স্থানীয় গোলাম রাব্বানি, জুয়েল মোল্লা, মিনা ইয়াছিন,ইব্রাহিম খানসহ আরও কয়েকজন বলেন, এই রাস্তাটি জন গুরুত্বপূর্ণ একটা রাস্তা। যত দ্রুত সম্ভব সড়কের উপর থাকা ভবনের অংশ বিশেষ অপসারণের দাবি জানান এলাকাবাসী।