চট্টগ্রাম সাতকানিয়া উপজেলা কমপ্লেক্সের সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেইট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। ইউএনও অফিসের দক্ষিণ পাশে কয়েক গজের মধ্যে সরকারি জায়গা দখল করে গেইট নির্মাণের প্রায় এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও ইউএনওর নীরবতা উদাসিনতা নাকি উদারতা, বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজালের। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের নব নির্মিত ভবনের প্রবেশ পথের মূল গেইটের সীমানা প্রাচীরের বাইরে এলাকার প্রভাবশালীমহলের পাঁচটির অধিক প্লট রয়েছে। ২০০০ সাল থেকে ওই মহল উপজেলা কমপ্লেক্সের সীমানা প্রাচীর ভেঙে তাদের প্লটে চলাচলের জন্য গেইট নির্মাণ করতে সাবেক ইউএনওদের বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। সম্প্রতি ওই মহল উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেইট নির্মাণ করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১৯৭০ সালে (পাকিস্তান আমল) প্রণীত বিদ্যমান প্রস্তাবিত খসড়া আইনের সাত দফায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ভূমি বা স্থাপন অবৈধভাবে দখল করলে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে পারবেন। অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাও ও সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। মামলার বিচার কাজ ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী পরিচালিত হবে এবং মামলা মোবাইল কোর্টে পরিচালনা ও নিষ্পত্তি করা যাবে। আইনে আরও বলা আছে, অবৈধ দখলের কারণে ভূমি বা স্থাপনার কোনো ক্ষতি হলে জেলা প্রশাসক বিধি মোতাবেক ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করতে পারবেন বলেও প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে। যা ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। অথচ দেখা গেছে, ইউএনও উল্লিখিত আইনের কোন প্রয়োগ না করে রহস্যজনক নীরব রয়েছেন। ফলে সরকারি জায়গা দখলের পরও সরকারি সম্পত্তি রক্ষার দাযিত্বে নিয়োজিতরা কোন ব্যবস্থা না নিয়ে চুপ থাকায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজালের। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, উপজেলা কমপ্লেক্সের সীমানা প্রাচীরটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণ হয়েছে ১০Í১২ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি লোহার গেইট। গেইটে ঝুলে আছে একটি নতুন তালা। গেইটের পরে দেখা যায় খালি পড়ে আছে পাঁচটির অধিক প্লট বিশিষ্ট জায়গা। সেখানে কথা হয় একাধিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তির সাথে। তারা বলেন, প্লটগুলোতে প্রায় ৮০ শতকের মত জায়গা রয়েছে। যে জায়গার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত ও পরিবার নিয়ে অবস্থানরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, গেইটটি নির্মিত হওয়ার ফলে উপজেলা কমপ্লেক্সের মধ্যে থাকা দাপ্তরিক নথিপত্র ও আবাসিকভাবে বসবাসরতদের নিরাপত্তায় বিঘœ ঘটবে। এব্যাপারে সাতকানিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদ্য সাবেক কমান্ডার আবু তাহের এলএমজি বলেন, উপজেলা কমপ্লেক্সের সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেইট নির্মাণ করার অনেক দিন অতিবাহিত হলেও এখনও আইনী বা কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে ইউএনও এতদিন নীরব কেন? তা নিয়ে সাধারণ জনগনের মতো আমার মনেও সৃষ্টি হচ্ছে অনেক প্রশ্নের। আশা করি ইউএনও জনগনের দ্বিধা কেটে সরকারি জায়গা উদ্ধারে পদক্ষেপ নিবেন। সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমাÍতুজÍ জোহরা বলেন, বিষয়টি আমি দেখলাম। উপজেলা পরিষদের সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেইট নির্মাণের আইনগত কোন ভিত্তি নেই। খোঁজ নিয়ে দেখি কে বা কারা গেইটটি নির্মাণ করেছেন। তবে যাতায়াত বা মুখ বের করার জন্য গেইট নির্মাণ করতে পারে। তবুও বিষয়টি আমি এনালাইসিস করে দেখছি। সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপি বলেন, যারা গেইটটি করেছে জায়গাটি তাদের। এ রকম গেইট উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের পূর্ব দিকে আরও রয়েছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান বলেন, এ বিষয়টি যেহেতু উপজেলা পরিষদের সেটি উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও বসে সিদ্ধান্ত নিবেন কি করা যায়।