মুমিনের জীবনে প্রাণাধিক মহান প্রিয় নবী সা:-এর প্রতি মহব্বতের গুরুত্ব অপরিসীম। মহব্বতে রাসূল তো ঈমানের রূহ, মুমিনের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। পার্থিব সব কিছুর ওপর এ ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে হবে। হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত- প্র্রিয় নবী সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সব মানুষ থেকে অধিক প্রিয় হবো’ (সহিহ বুখারি-১৫)। এই রহমতের নবীর প্রতি উম্মতের সবচেয়ে বড় হক হলো তাকে মন ও মনন দিয়ে ভালোবাসা। তাঁর প্রতি ভালোবাসা যেন আর সব ভালোবাসার ঊর্ধ্বে হয়। এমনকি জান ও প্রাণের চেয়ে যেন তিনি প্রিয় হন। পবিত্র কুরআনে তাই আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- ‘নবীর ওপর মুমিনদের জানের চেয়ে বেশি হক আছে’ (সূরা আহজাব-৬)। অর্থাৎ যেই ব্যক্তি নিজের জান-মাল ও প্রবৃত্তির ওপর তার প্রতি ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিতে না পারবে, বোঝা যাবে তার ঈমানে ঘাটতি আছে।
আল্লাহ তায়ালা বান্দার জন্য তাঁর ভালোবাসা লাভে প্রিয় নবীর প্রতি গভীর প্রেম ও অনুসরণকে পূর্বশর্ত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন- ‘হে রাসূল! আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ করো, যাতে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু’ (সূরা ইমরান-৩১)। শুধু তাই নয়, আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রতি এ মর্মে নির্দেশনা জারি করেছেন যে, প্রিয়নবী সা:-এর অনুসরণ করাকে তাঁর অনুসরণ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল, সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করল; আর যে মুখ ফিরিয়ে নিলো আমি তাদের জন্য আপনাকে প্রহরীরূপে প্রেরণ করিনি’ (সূরা নিসা-৮০)।
প্রাণাধিক মহান প্র্রিয় নবী সা:-এর সাথে সম্পর্ক রাখেন এমন মানুষদের ভালোবাসাও তাকে ভালোবাসার আলামত। সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইত, বিশেষ করে চার খলিফা, হজরত হাসান ও হুসাইন এবং মহান আউলিয়ায়ে কেরাম রা:-এর প্রতি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রাখাও ঈমানি দায়িত্ব। প্র্রিয় নবী সা: নিজেই সাহাবিদের প্রতি ভালোবাসা রাখা ঈমানের আলামত ও শত্রুতা বা ঘৃণা রাখাকে মোনাফেকি বলেছেন। হজরত হাসান ও হুসাইন রা: সম্পর্কে তিনি বলেন, ইয়া আল্লাহ, আমার এই দু’জনের প্রতি ভালোবাসা আছে, আপনিও তাদেরকে ভালোবাসুন।
মোদ্দা কথা, মুমিনের জন্য ভালোবাসার মূল কেন্দ্র প্রাণাধিক মহান প্র্রিয় নবী সা:। আর বাকি দুনিয়ার যত প্রেমময় মানুষ আছে, যত রকমের ভালো লাগার জিনিস আছে- সব কিছুর অবস্থান দ্বিতীয়তে। এ থেকে বোঝা যায়, প্র্রিয় নবীকে ভালোবাসা আমাদের প্রত্যেকের জন্য ওয়াজিব। দুনিয়াতে ভালোবাসার যত কিছু আছে তার সবই তাঁর কারণে প্রেমময়। তাই প্রাণাধিক মহান প্র্রিয় নবী সা:-কে জানের চেয়ে বেশি ভালোবাসা ঈমান। এই ভালোবাসা হৃদয়ের গহিন থেকে উৎসারিত, কেবল লোক দেখানো ভালোবাসা নয়। যারা প্র্রিয় নবীকে ভালোবাসে, আল্লাহ তাদের সম্পর্কে কুরআনে ঘোষণা দেন- ‘তারা আল্লাহর দল, মনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহর দলের লোকেরাই সফল’ (সূরা মুজাদালাহ-২২)। আমরা যদি প্রকৃতপক্ষেই ঈমানদার হতে চাই, ইহকাল ও পরকালে কামিয়াব হতে চাই, তাহলে আমাদের উচিত মহান প্র্রিয় নবী সা:-কে জানা এবং সব ভালোবাসার ঊর্ধ্বে তাঁর ভালোবাসা প্রাধান্য দেয়া। হাদিসে পাকে খোদ প্র্রিয় নবী সা: যেভাবে নির্দেশ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি আমল করার তাওফিক দান করুন এবং আখিরাতে মহান প্র্রিয় নবী সা:-এর সঙ্গ দান করুন এবং কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা যথাযথভাবে আদায় করার মাধ্যমে নবীপ্রেমের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। আমীন। লেখক : ফেনী থেকে