বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

ঢাকার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল দোহারে : অশনি সঙ্কেত

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৬ মে, ২০২৩

গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস-এর হিসেব অনুযায়ী এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪.৩। আমেরিকান সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে বিক্রমপুরের দোহার থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। এই ভূমিকম্পের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, উৎপত্তিস্থল ঢাকা শহরের খুব কাছে এবং ভূপৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি। ভূতত্ববিদরা বলছেন, ভূমিকম্পটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে হওয়ায় এ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলছিলেন, ‘এর আগে যেসব ভূমিকম্প আমরা লক্ষ্য করেছি, সেগুলো ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৩৫-৪০ কিলোমিটার গভীরে উৎপত্তি হয়েছে। এই ভূমিকম্পটি সেগুলোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত অনেকটাই অগভীর।’এই ভূমিকম্পের তথ্য নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে এটির সম্পর্কে আরো তথ্য জানানো যাবে বলে জানান তিনি।
ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার খবর জানিয়ে শুক্রবার ভোরেই ঢাকার অনেক বাসিন্দা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়েছেন। ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে ভূমিকম্প হয়। কম্পনের তীব্রতায় অনেকের ঘুম ভেঙেছে।

ভূমিকম্পের পরপরই নাদিয়া ইসলাম তার ফেসবুকে লেখেন, ‘ভূমিকম্প হয়েছে। সময় ভোর ৫:৫৭। মোটামুটি ১০-১৫ সেকেন্ড ধরে ছিল। আস্তে শুরু হয়ে একটা জোরে ঝাঁকুনি দিলো। আল্লাহ রক্ষা কর আমাদের।’ সকাল সোয়া ৬টার দিকে রুশা চৌধুরী স্ট্যাটাস দেন, ‘হঠাৎ মনে হলো, কে যেন আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে। চমকে উঠতেই দেখি সবকিছু নড়ছে। মা-মেয়ে দৌঁড়ে নিচে নামলাম।’ তিনি আরো বলেন, ‘কাল থেকে কী কী সতর্কতা মেনে চলব, সেটাও আলোচনা করছি দু’জনে।’ তবে এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ঢাকা শহর ও এর আশেপাশের এলাকা বড় ধরণের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে ভূতত্ববিদরা আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে আট মাত্রা বা তার চেয়ে বড় ধরণের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেরকম ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরের অন্তত ছয় হাজার ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রাণহানি হবে অন্তত তিন লাখ মানুষের- এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
ঢাকার কাছে যেসব ভূমিকম্প:ভূতত্ববিদদরা বলছেন, বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ধরণের ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকায় গত কয়েক বছরের মধ্যে যেসব ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের উৎপত্তিস্থলই ছিল বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সিলেট বা চট্টগ্রাম অঞ্চলে। অনেকগুলো ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভারতের মিজোরাম বা ত্রিপুরা রাজ্যে। তবে শুক্রবারের ভূমিকম্পের মতো ঢাকার আশেপাশে উৎপত্তিস্থল রয়েছে, এমন ভূমিকম্পও মাঝেমধ্যেই হতে দেখা গেছে।ভূতত্ববিদ হুমায়ুন আখতারও বলেন, ‘২০০৮ থেকে ২০১২-১৩ পর্যন্ত ঢাকার কাছাকাছি নারায়নগঞ্জ, কুমিল্লা অঞ্চলে গ্রীষ্মের সময় অনেকগুলো ছোট ছোট ভূমিকম্প হতে দেখেছি আমরা।’
ভূমিকম্প শনাক্তকারী সংস্থা আর্থকোয়েকট্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালের ১৮ই মার্চ এই অবস্থানেই- দোহার থেকে ১৪.২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে- ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছিল। ঢাকার কাছে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল অঞ্চলেও গত ২০ বছরের মধ্যে একাধিক ছোট ছোট ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে। তিন বছর আগে, ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের ১২ কিলোমিটার পূর্বে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এছাড়া ২০০৮ এ টাঙ্গাইলের কাছে নাগরপুরে এবং ২০১৯ সালে মির্জাপুরে চার মাত্রার নিচে ভূমিকম্প হয়েছে বলে বলছে আর্থকোয়েকট্র্যাক। পাশাপাশি গত ১৫ বছরে নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে অন্তত চারবার ভূমিকম্প হয়েছে বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি। আর ঢাকার কাছে ফরিদপুরেও গত ১৫ বছরের মধ্যে দু’বার চার মাত্রার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে বলে নথিবদ্ধ করেছে সংস্থাটি।
তবে গত ১৫-২০ বছরের মধ্যে ঢাকার কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে নথিবদ্ধ করা হচ্ছে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জে ৫.১ মাত্রার একটি ভূমিকম্পকে। বাংলাদেশে সর্বশেষ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৮৮৫ সালে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে ৭.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের ইতিহাস রয়েছে। সূত্র : বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com