গত বছর মেহেরপুর জেলায় প্রায় ৩৩ হাজার ৫০০ টন আম উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর ৩ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমির আম বাগান থেকে ৪০ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা কৃষি বিভাগের। কৃষি বিভাগ আশা করছে জেলায় এবার ১৬০০ কোটি টাকার আম বেচা-কেনা হবে। আম চাষিদের মতে অনুকূল পরিবেশের কারণে আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ কারণে এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। মেহেরপুর জেলার বিখ্যাত বনেদিজাতের বোম্বাই, হিমসাগর এবং নেংড়ার সঙ্গে রয়েছে ফজলি, আ¤্রপলি, রুপালিসহ সুস্বাদু বিভিন্ন জাতের আম চাষ আছে। ইতোমধ্যে বাগান মালিকরা আম ভাঙার কাজ শুরু করে দিয়েছে। আঁটি আম ভাঙার কাজ চলছে পুরোদমে।
সুস্বাদু আম হিসেবে মেহেরপুরের আমের সুনাম জগৎজুড়ে। কয়েকবছর ধরে ইউরোপ মহাদেশে মেহেরপুরের আম তার মাহত্ম ছড়িয়েছে। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমের বাগানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেহেরপুরের মুজিবনগরে ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি মুজিবনগর আ¤্রকাননে ১২০০ আমগাছ আছে। ওই এক বাগানে ১২০০ আমগাছ ১২০০ জাতের। জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সব জাতের আমেরই চাষ হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছর কৃষিজমিতে তৈরি করা হচ্ছে আমের বাগান। ১৮ শতক থেকে ১৯ শতকের প্রথম পর্যায়ে মুজিবনগর আ¤্রকানন, মেহেরপুরের বড়বাগান, নায়েববাগান, মহাজনপুর আমবাগান, মল্লিক বাগান, হাঁদুবাবুর বাগান, রামবাবুর বাগান, গোপি সুন্দরী ও বিশ^াস বাগান (বিলুপ্ত); চিৎলা ও আমঝুপি কুঠি বাগান, বারাদি ফার্মের বাগান সবচেয়ে বড় আমের বাগান। এসব বাগানে হিমসাগর, লেংড়া, গোপালভোগ, খিরসাপাতি, খিরসাভোগ, জামাইভোগ, ফজলি, কাঁচামিঠা, কুমড়াজালি, খেজুরছড়ি, পেয়ারাফুলি, নারকেল পাখি, গুলগুলি, আষাড়ে, আশি^না, বারোমাসি, মোহনভোগ, বোম্বাই, তিলি বোম্বাই, ভুতো, বিশ^নাথ, সুন্দরী, বেগম পছন্দ, শাহী ভোগ, রানী, বেকু, মালসা, পাহাড়ি, কলাপাহাড়িসহ অসংখ্য নাম, রং, স্বাদ ও গন্ধের আমচাষ আছে। বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাগান তৈরির হিড়িক পড়েছে।
আমচাষি আনোয়ারুল হক কালু এ বছর চারটি আমবাগান কিনেছেন প্রায় ১২ লাখ টাকায়। তিনি জানান এ পর্যন্ত পরিচর্যা খরচ হয়েছে আরও ৪ লাখ টাকা। তিনি আশা করছেন বড়ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার বেচা কেনা হবে।
আমচাষি বজলুর রহমান জানান, কীটনাশকসহ আম বাগান শ্রমিকের মুজুরি চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই তুলনায় আমের দাম বাড়েনি। তাছাড়া আম বাগান ব্যবসা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়াতে তিনি বাগান কেনা ছেড়ে দিয়েছেন। তবে ভরা মৌসুমে বাগান থেকে আম কিনে বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করেন। তাতে ঝুঁকি কম বলে জানান।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শঙ্কর কুমার মজুমদার জানান- জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এখানকার মাটির গুণেই হিমসাগর, লেংড়া, বোম্বাই, তিলি বোম্বাই ইত্যাদি জাতের আম খুবই সুস্বাদু। বিশেষ করে নিয়মিত জাত ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাতি, আশ্বিনা জাতের বাগান বেশি থাকলেও গবেষণাকৃত বারি-৩, বারি-৪ জাতের বাগান তৈরির ক্ষেত্রেও মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।