দিনাজপুরের হিলি রেলস্টেশনের কোনো স্টেশন মাষ্টার নেই। তাই ট্রেন দাঁড়াচ্ছে ২ নাম্বার লাইনে। এতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন বৃদ্ধ, নারী ও শিশু যাত্রীরা। তবে যাত্রীদের দূর্ভোগের কথা স্বীকার করে কর্তৃপক্ষ বলছেন, গত ৩০ এপ্রিল এখানকার কর্তৃব্যরত স্টেশন মাষ্টার চলে যাওয়ায় ট্রেন আর এক নাম্বার লাইনে দাঁড়াচ্ছে না। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ হিলিতে স্টেশন মাস্টার নিয়োগে সচেষ্টায় আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে। শনিবার (৬ মে) সকালে হিলি রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাগামী কোন ট্রেনের স্টপেজ নেই। রাজশাহী-খুলনাগামী ট্রেনগুলো দাঁড়াচ্ছে ২নং লাইনে। ২ নাম্বার লাইনে কোনো প্লার্ট ফরম না থাকায় অনেক কষ্ট করে ট্রেনের হাতল ধরে সিঁড়িতে পা দিয়ে বগিতে উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের। হিলি বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্থলবন্দর এবং ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। এখানে আছে একটি রেলস্টেশন। এই স্টেশন থেকে আমদানি-রপ্তাানীকারক, রাজশাহীগামী শিক্ষার্থীরাসহ সাধারণ যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করে থাকেন। একেতো নেই যাত্রী ছাউনি, পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থাসহ নানাবিধ সমস্যা। তার সাথে যোগ হয়েছে ২ নাম্বার লাইনে ট্রেন দাঁড়ানো। এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হিলিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে একজন স্টেশন মাস্টার কর্মরত ছিল। তখন এখানে যেকয়েকটি ট্রেনের স্টপেজ ছিল ১ নাম্বার লাইনে দাঁড়াতো। যাত্রী অনায়াসে ট্রেনে উঠানামা করতে পারতো। গেলো ৩০ এপ্রিল কর্মরত অস্থায়ী মাস্টার চলে যাওয়ায় মাস্টার শুন্য হয়ে পড়েছে স্টেশনটি। শুধুমাত্র একজন বুকিং সহকারী আর ৩ জন স্টাফ দিয়েই চালনো হচ্ছে স্টেশনটি। মাস্টার না থাকায় উত্তরে বিরামপুর ও দক্ষিনে পাঁচবিবি রেলস্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে হিলি রেল স্টেশনটি। ট্রেন ইচ্ছেমতো ২ নাম্বার লাইনে দাঁড়াচ্ছে আবার ছেড়ে যাচ্ছে। তাই টিকেট কাটার পর ট্রেনে ঝুলন্ত অবস্থায় উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের। অনেকে তাড়াহুড়োর কারণে ট্রেনে উঠতে পারছেন না। শুধু আশা নয়। যাত্রীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করা কর্তৃপক্ষ অতিদ্রুত হিলি রেলস্টেশনে মাস্টার নিয়োগ দিয়ে যাত্রী সাধারণের দূর্ভোগ লাঘব করবেন এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীসহ যাত্রী সাধারণের। মৌসুম বেগম ও সালেহা বিবিসহ কয়েক জন মহিলা যাত্রীরা বলেন, আমাদের হিলি রেলস্টেশনের কোন ব্যবস্থাপনা ভাল নেই। গত সপ্তাহেও ১নং লাইনে ট্রেন দাঁড়িয়েছিল। আজ দেখছি ২নং লাইনে ট্রেন দাঁড়াচ্ছে। আমরা নারীরা কিভাবে ২নং লাইনে ওতো উঁচুতে উঠবো? তাই আমাদের সরকারের নিকট আবেদন এই স্টেশনের সকল সমস্যা দ্রুত সমাধান করবেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন বলেন, প্রতিনিয়ত আমি রাজশাহীবিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া-আসা করি। রাজশাহীগামী ট্রেনগুলো ১নং লাইনে দাঁড়াতো এতে খুবি সুবিধা হতো। কিন্তু আজ ২নং লাইনে ট্রেন দাঁড়িয়েছে। এতে ওঠা-নামার খুবি কষ্ট হলো। আজাহার আলী নামের এক যাত্রী বলেন, হিলি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখানে স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট রয়েছে। বছরে কয়েকশো কোটি টাকা সরকার রাজস্ব এখান থেকে পেয়ে থাকে। অথচ রেলস্টেশনের বেহা অবস্থা। ঢাকাগামী কোন ট্রেনের স্টপেজ নেই। নেই কোন যাত্রীদের জন্য স্টেশনে সুব্যবস্থা। রাজশাহী এবং খুলনাগামী যে কয়েকটি ট্রেন ১নং লাইনে দাঁড়াতো। বর্তমান তা ২নং লাইনে দাঁড়াচ্ছে। শুনছি স্টেশন মাস্টার নেই, যার কারণে এমন অবস্থা। আমরা চাই সরকার দ্রুত আমাদের স্টেশনের সমস্যা সমাধান করবেন। হিলি রেলস্টেশনের সহকারী বুকিং মাস্টার মোঃ নয়ন বাবু বলেন, হিলি রেলস্টেশনে বর্তমানে ১ নাম্বার লাইনের পরিবর্তে ২ নাম্বার লাইনে ট্রেন চলছে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে। গত ৩০ এপ্রিল থেকে কর্তৃব্যরত অস্থায়ী মাস্টার রিজাইন দিয়ে চলে গেছেন। আমি শুধু যাত্রীদের জন্য টিকেট বিক্রি করছি। তবে যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে উর্দ্ধতন কর্তপক্ষ অতিসত্তর হিলি রেলস্টেশনে মাস্টার নিয়োগে সচেষ্টায় আছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে।