রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১০ অপরাহ্ন

তীব্র দাবদাহের সময় মুমিনের ৭ আমল

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৩ মে, ২০২৩

দাবদাহের প্রচণ্ড গরমে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। গরমের তীব্রতায় ঘর থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো পরিবারে শিশুরা ঠাণ্ডা ও সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রবীণরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক যে ইবাদত-বন্দেগি করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তবে এই কঠিন সময়কে অফুরন্ত সওয়াব লাভের মাধ্যম বানানোর জন্য কিছু আমল করা যেতে পারে, পাশাপাশি মহান আল্লাহর দয়ায় পরিস্থিতি অনুকূলে আসতে পারে। নিম্নে এমন কয়েকটি আমল তুলে ধরা হলো
১. পানি পান করানো : গরমে বেশির ভাগ মানুষ অস্থির হয়ে পড়ে। তাই অফিস, দোকান কিংবা বাসা যেখানেই হোক, বাইরে থেকে কেউ এলেই তাকে এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করানোর মাধ্যমে অফুরন্ত সওয়াব লাভ করা যেতে পারে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, সাদ ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, (এক দিন) আমি (নবীজিকে) বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন সদকা উত্তম? তিনি বলেন, পানি পান করানো। (নাসায়ি, হাদিস : ৩৬৬৫) নবীজির এই সুন্নতটা আরবদের মধ্যে বেশি প্রচলিত, সেখানে কোনো দোকানপাট অথবা অফিস-আদালতে গেলেই এক বোতল ঠাণ্ডা পানি হাতে তুলে দেয়। অনেককে আবার তীব্র গরমের সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে পথচারীদের মধ্যে ঠাণ্ডা পানি বিতরণ করতে দেখা যায়।
আর কেউ পানি চাইলে তা দেওয়ার সামর্থ্য থাকলে কোনোভাবেই নিষেধ না করা। নবীজি (সা.) কেউ পানি চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে বারণ করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আয়েশা (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এমন কী জিনিস আছে, যা সংগ্রহে বাধা দেওয়া হালাল নয়? তিনি বলেন, পানি, লবণ ও আগুন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই পানি সম্পর্কে তো আমরা জানি, কিন্তু লবণ ও আগুনের ব্যাপারে কেন বাধা দেওয়া যাবে না? তিনি বলেন, হে হুমায়রা! যে ব্যক্তি আগুন দান করল, সে যেন ওই আগুন দিয়ে রান্না করা যাবতীয় খাদ্যই দান করল। যে ব্যক্তি লবণ দান করল, ওই লবণে খাদ্য যতটা সুস্বাদু হলো তা সবই যেন সে দান করল। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা সহজলভ্য, সে যেন একটি গোলামকে দাসত্বমুক্ত করল এবং যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করল। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৭৪)
২. অন্যকে সাহায্য করা : তীব্র গরমে অনেক সময় অনেক মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময় অনেক বয়োবৃদ্ধরা তাঁদের জরুরি কাজ সেরে নেওয়ার জন্য বাইরে যেতে পারেন না, তখন তাঁদের সাহায্য করার মাধ্যমেও সদকার সওয়াব পাওয়া যেতে পারে। আবু জার (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎকাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথ থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)
৩. কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবা করা : অনেক সময় দেখা যায়, অতিরিক্ত গরমে অনেক মানুষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন তাদের সেবা করে, তাদের নিরাপদে বাসা বা হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যেতে পারে। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমান তার কোনো (অসুস্থ) মুসলিম ভাইকে দেখতে গেলে সে (যতক্ষণ সেখানে থাকে ততক্ষণ) যেন জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৭) আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কেউ উত্তমরূপে অজু করে নেকির আশায় তার কোনো (অসুস্থ) মুসলিম ভাইকে দেখতে গেলে তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর খরিফ (সত্তর বছরের) পথ দূরে রাখা হবে। আমি (সাবিত আল-বানানী) আবু হামজাহকে জিজ্ঞেস করি, খরিফ শব্দের তাৎপর্য কী? তিনি বলেন, বছর। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩০৯৭)
৪. ইবাদতে অবহেলা না করা : গরমের কারণে ইবাদতে অবহেলা না করা। কারণ জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার গরমের চেয়ে বহুগুণে উত্তপ্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, “পেছনে থাকা লোকগুলো আল্লাহর রাসুলের বিপক্ষে বসে থাকতে পেরে খুশি হলো, আর তারা অপছন্দ করল তাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে এবং তারা বলল, ‘তোমরা গরমের মধ্যে বের হয়ো না’। বলো, জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, যদি তারা বুঝত।” (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৮১)
৫. জোহরের নামাজ দেরিতে পড়া : নবীজি (সা.) প্রচণ্ড গরমের দিনে জোহরের নামাজ কিছুটা বিলম্বে পড়ার অনুমতি দিয়েছেন, যাতে গরমের তীব্রতা কমলে মুসল্লিরা সহজে মসজিদে আসতে পারে। আবু হুরায়রা (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন গরমের প্রচ-তা বৃদ্ধি পায়, তখন গরম কমলে সালাত আদায় করবে। কেননা, গরমের প্রচ-তা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের অংশ। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৩) অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, গরমের তীব্রতা বেড়ে গেলে তোমরা জোহরের সালাত ঠা-া করে (গরম কমলে) পড়ো। কেননা গরমের তীব্রতা জাহান্নামের উত্তাপবিশেষ। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৬৭৮)
৬. আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া : মানুষের পাপাচারই মানুষের ওপর বিপদাপদ ডেকে আনে, তাই প্রতিকূল পরিস্থিতিকে অনুকূল বানাতে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা।’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ১০-১২)

৭. পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া : গরমে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও অস্থির হয়ে পড়ে। মানুষের উচিত আশপাশে থাকা পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, পানির পিপাসা এটাকে মুমূর্ষ করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ হতে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করালো), এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। (বুখারি, হাদিস : ৩৩২১)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com