রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:২১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী নগরকান্দায় দু’গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, ওসি, সাংবাদিকসহ আহত- ৩০ কালীগঞ্জে নানা সংকটে গ্রাম আদালত সুফল পেতে প্রয়োজন কার্যকরী উদ্যোগ কটিয়াদীতে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ মুন্সীগঞ্জে লুন্ঠিত মালামালসহ ৭ ডাকাত গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে বর্ণিল পিঠা উৎসব ছয় মাসেও উদ্ধার হয়নি নিখোঁজ অন্তঃস্বত্তা গৃহবধূ স্বপ্না হিলির রেললাইনের ধারে খেজুর রস নামাতে ব্যস্ত গাছিরা মোহাম্মদিয়া ইসলামী যুব সংঘের উদ্যোগে তাফসীরুল কোরআন মাহফিল সম্পন্ন গাইবান্ধায় ছোটবোন ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে নির্যাতিত গৃহবধূর সংবাদ সম্মেলন

ধৈর্য ও সফলতা

মুহাম্মদ শোয়াইব বিন আছাদ
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কবল থেকে মুক্ত থাকতে মহান আল্লাহ সূরা আছরে যে চারটি গুণে গুণান্বিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে সবর বা ধৈর্য অন্যতম। যা আজ আমাদের অনেকের মধ্যেই অনুপস্থিত। যে কারণে আমরা দুনিয়াবি জীবনেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি পরকালীন জীবনকেও ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছি। একজন মানুষ জীবনে কখনোই সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছতে পারবে না যতক্ষণ না তিনি সবর তথা ধৈর্যের কাছে মাথানত না করবেন। যুগের আবর্তনে যত মানুষ সফলতার মুখ দেখেছে তার পেছনে রয়েছে কঠিন ধৈর্যের পরীক্ষা। তাই সফলতার মূলমন্ত্র হচ্ছে কঠিন পরীক্ষায় পতিত হয়ে সেই পরীক্ষায় ধৈর্যের সাথে উত্তীর্ণ হওয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবই : মাঝে মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, পণ্য-ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে, তাদেরকে সুখবর দাও’ (সূরা আল বাকারাহ-১৫৫)। মহান আল্লাহ বলেন- ‘ধৈর্যশীলদেরকে তো অপরিমিত পুরস্কার দেয়া হবে’ (সূরা জুমার-১০)। রাসূল সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন’ (বুখারি-৫৬৪৫, আহমাদ-৭১৯৪, মুওয়াত্তা মালেক-১৭৫২)।
হজরত মূসা আ: যখন ভূমিষ্ঠ হলেন চতুর্দিকে ফেরাউন বাহিনীর অবস্থান। পুত্রসন্তানের সন্ধান পেলেই তাকে হত্যা করা হবে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে নবী মূসা আ:-এর মায়ের কাছে আর কি-ই বা করার থাকতে পারে ধৈর্য ছাড়া। তখন কঠিন ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করে পানিতে ভাসিয়ে দিলেন নবী মূসা আ:-কে। কিন্তু ফলাফল দেখুন সেই সন্তানকে শুধু মহান আল্লাহ রক্ষাই করলেন না ফিরাউনের মাধ্যমে তার মায়ের কাছেই রাজকীয়ভাবে লালিত পালিত হওয়ার সৌভাগ্য দান করলেন। ইয়াকুব আ: যখন তার অন্য সন্তানদের হিংসার বশবর্তী হয়ে ইউসুফ আ:-কে হারিয়ে ফেললেন তখন তার অবস্থা কেমন ছিল আমরা কি তা ভুলে গেছি? মহান আল্লাহ বলেন- ‘সে (ইয়াকুব আ:) বলল, না, তোমাদের মন তোমাদের জন্য একটি কাহিনী সাজিয়ে দিয়েছে। সুতরাং পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়। হয়তো আল্লাহ তাদের এক সাথে আমার কাছে এনে দেবেন। তিনি সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’ (সূরা ইউসুফ-৮৩ )।
এই কঠিন ধৈর্যের পরীক্ষা কতই না কঠিন ছিল। জীবনের শেষ পর্যায়ে তার চোখ অন্ধ হয়ে গেল কিন্তু তিনি বিন্দুমাত্র ধৈর্যচ্যুত হলেন না। বিনিময়ে তিনি শুধু তার সন্তানকেই পেলেন না; বরং তার সন্তানকে তিনি পেলেন নবী এবং মিসরের শাসনকর্তা হিসেবে। আল্লাহু আকবার, ধৈর্যের ফল কতই না সুমধুর। জীবনের পড়ন্ত বিকেলে হজরত আইয়ুব আ: রোগাক্রান্ত হয়ে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন যেখানে তিনি সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, দাস-দাসী, বিশাল সম্পত্তিসহ সব কিছু হারান। এক পর্যায়ে জীবন ধারণের জন্য শহরের বাইরে এক ছোট্ট কুটিরে আশ্রয় নেন। এই পরীক্ষাকালে স্ত্রী রাহিমাই ছিলেন তাঁর একমাত্র সঙ্গী। কুরআনের ভাষায়- ‘এবং স্মরণ করো, আইয়ুবের কথা, যখন সে তার প্রতিপালককে আহ্বান করে বলেছিল, আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম। তার দুঃখ-কষ্ট দূরীভূত করে দিলাম, তাকে তার পরিবার-পরিজন ফিরিয়ে দিলাম এবং তাদের সাথে তাদের মতো আরো দিয়েছিলাম, আমার বিশেষ রহমতরূপে এবং ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ’ (সূরা আম্বিয়া : ৮৩-৮৪)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘নিঃসন্দেহে আমি তাকে (আইয়ুবকে) ধৈর্যশীল পেয়েছি; কত উত্তম বান্দা ছিল সে; নিশ্চয় সে ছিল প্রত্যাবর্তনশীল’ (সূরা সোয়াদ-৪৪)।
মহান আল্লাহ কি নবী আইয়ুব আ:-কে তার ধৈর্যের প্রতিদান দেননি? ‘আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং তার দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিয়েছিলাম’ (সূরা আম্বিয়া-৮৪)। কীভাবে দূর করা হয়েছিল, সে বিষয়ে আল্লাহ বলেন যে- তিনি তাকে ভূমিতে পদাঘাত করতে বলেন। অতঃপর সেখান থেকে স্বচ্ছ পানির ঝর্ণাধারা বেরিয়ে আসে। যাতে গোসল করায় তার দেহের উপরের কষ্ট দূর হয় এবং ওই পানি পান করায় তার ভেতরের কষ্ট দূর হয়ে যায় (সূরা ছোয়াদ-৪২)। হজরত মারইয়াম আ: যখন সন্তান হাতে তাঁর কওমের কাছে বেরিয়ে এলেন তখন তাঁকে কত মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হলো। তখন ধৈর্য ধারণ করায় মহান আল্লাহ মারইয়াম আ:-কে সম্মানিত করেছেন।
মুনাফিক সরদার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সুলুলের মুনাফিকের শিকার হয়েছিলেন নবীপতী নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারিণী মা আয়েশা রা:। যে কারণে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা: এক বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। তিনি ধৈর্য ধারণ করেন। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা ওহির মাধ্যমে আয়েশা রা:-এর পবিত্রতার কথা ঘোষণা করেন।
তাই আসুন! যেকোনো কঠিন বিপদে বিচলিত না হয়ে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণ করে তাকেই সব কিছু জানাই, তবেই দুনিয়াবি জীবনে শান্তি পরকালীন জীবনে মুক্তির পথ সুগমের মধ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কবল থেকে মুক্তি নিয়ে সাফ্যল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছতে পারব। লেখক : শিক্ষার্থী, আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com