গত ১৫ এপ্রিল ২০২৩ থেকে সুদানে দু’টি সরকারি বাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। কারা ক্ষমতাসীন হবে এই দ্বন্দ্বে সুদানি সেনাবাহিনী এবং আধাসামারিক বাহিনীর মধ্যে হচ্ছে এই যুদ্ধ। দ্বন্দ্বটি মূলত দুই বাহিনীর দুই প্রধানের মধ্যে। কে থাকবে ক্ষমতার শীর্ষে। প্রায় মাস খানেক ধরে চলা এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৫০ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে চার হাজার ৯২৬ জন। ১৮ লাখ ৬১ হাজার ৪৮৬ বর্গকিলোমিটার ভূমির সুদানকে আরবিতে বলা হয় ‘বিলাদ আল সুদান’ অর্থাৎ Land of the blacks বা কালো মানুষদের ভূমি। ৬৩ লাখ ৯২ হাজার জনসংখ্যার দেশটিতে বেশ কয়েকটি বড় বড় জাতিগোষ্ঠী এবং শতাধিক বিভিন্ন উপগোত্র রয়েছে। তাদের ভাষার সংখ্যাও অসংখ্য। জনসংখ্যার অধিকাংশই সুন্নি মুসলমান। বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর একটি হলো সুদান। জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ কৃষি এবং পশুপালনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুদানের অবস্থান। মোট সাতটি দেশের সাথে যৌথ সীমান্ত রয়েছে এই দেশটির। উত্তরে মিসর, পূর্বে লোহিত সাগর, ইরিত্রিয়া এবং ইথিওপিয়া, দক্ষিণে দক্ষিণ সুদান, পশ্চিমে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক এবং চাদ আর উত্তর পশ্চিমে লিবিয়া অবস্থিত। সুদানে তেলের খনি আবিষ্কার হয় প্রথম ১৯৭৭ সালে। কিন্তু দক্ষিণ সুদানে গৃহযুদ্ধের কারণে বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এই তেল আহরণ শুরু করতে পেরেছিল। ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে ৫০০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল মজুদের কথা জানা গেলেও ২০১০ সাল নাগাদ বোঝা যায় যে, খনিসমূহে তেল মজুদের পরিমাণ প্রায় পাঁচ থেকে সাত বিলিয়ন ব্যারেল হবে। কিন্তু ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ অবসানের পর দক্ষিণ সুদান স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং অধিকাংশ তেলের কূপ দক্ষিণ সুদানের সীমানায় পড়ে যায়। দেশটিতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও তারা খুব অল্পই কাজে লাগাতে পেরেছে। এসব ছাড়াও সুদানের খনিজ সম্পদের মজুদের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণ, ইউরেনিয়াম, ক্রোমাইট, জিপসাম, মাইকা, মারবেল এবং আয়রন ওর বা শংকর।
সুদানের ইতিহাস অত্যন্ত হৃদয়বিদারক! এটি উসমানীয় সম্রাজ্যের অধীনে ছিল ১৮২১ সাল থেকে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত। এরপর ১৮৯৬ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশভুক্ত হয় এবং ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ কলোনি হিসেবেই ছিল। তখন সুদানকে শাসন করা হতো পাশ্ববর্তী দেশ মিসর থেকে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ক’বছর পর ১৯৫৬ সালে সুদান স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর থেকে সুদানের ইতিহাস রক্তে রঞ্জিত হয়ে আছে। এ সময় সুদানে ঘটেছে ক্ষমতালোভী যুদ্ধবাজ নেতাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। সেই সাথে ছিল দক্ষিণ সুদানের বিচ্ছিন্নতাবাদী গৃহযুদ্ধ। প্রথমে ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধ হয়। ‘আদ্দিস আবাবা’ চুক্তির মাধ্যমে প্রথমবারের এই গৃহযুদ্ধ সাময়িকভাবে থামে। কিন্তু ১৯৮৩ সালে পুনরায় যুদ্ধ শুরু হয়ে ২০০৫ সাল পর্যন্ত রক্ত ঝরতে থাকে। পরবর্তীতে বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতার মাধ্যমে ২০১১ সালের গণভোটে দক্ষিণ সুদান স্বাধীনতা লাভ করে। দক্ষিণ সুদান বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বে সুদান ছিল আফ্রিকা মহাদেশের সর্ববৃহৎ দেশ।
১৯৫৬ সালে স্বাধীনতার পর সুদানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল ইব্রাহীম আবুদ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৫৮ সালে ক্ষমতা দখল করেন। ক্ষমতা দখলের পর তিনি সুদানে বিভিন্ন রিফর্ম করার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে দক্ষিণ সুদানে খ্রিষ্টান মিশনারীদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনেন। সেকুলার শিক্ষার পরিবর্তে ইসলামী ধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবর্তন করেন এবং শিক্ষা ক্ষেত্রের বিদেশী খ্রিষ্টান মিশনারিদেরকে বহিষ্কার করেন। এতে দক্ষিণ সুদানে স্বাধীনতা আন্দোলন আরো বেগবান হয় এবং পুরো সুদানে এর উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ১৯৬৫ সালে জেনারেল আবুদ পদত্যাগে বাধ্য হন এবং একটি অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসে। কিন্তু তারাও সুদানকে আশার আলো দেখাতে ব্যর্থ হলে সেনাবাহিনীর কর্নেল জাফর মোহাম্মদ আল নিমেরির নেতৃত্বে একদল তরুণ সেনা অফিসার ১৯৬৯ সালে আবার অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করে। নিমেরি সরকার ১৯৭২ সালে ‘আদ্দিস আবাবা’ চুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণ সুদানের গৃহযুদ্ধ সাময়িকভাবে বন্ধ করতে সমর্থ হলেও তার কিছু সিদ্ধান্তের কারণে ১৯৮৩ সালে ‘আদ্দিস আবাবা’ চুক্তি ভেঙে গিয়ে পুনরায় গৃহযুদ্ধ আরো ভয়ঙ্করভাবে শুরু হয়। এরই মধ্যে ১৯৮৫ সালে সেনাপ্রধান জেনারেল আবদ আল রহমান সিওয়ার আল দাহাব এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নিমেরিকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজে ক্ষমতা দখল করেন। জেনারেল আল দাহাব ১৯৮৬ সালে নির্বাচন দেন। কিন্তু নবনির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের দুর্বল নেতৃত্বের সুযোগে ১৯৮৯ সালে ফের সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে লে. জেনারেল ওমর হাসান আহমাদ আল বশির ক্ষমতা দখল করেন। জেনারেল বশির সামরিক শাসন থেকে রাজনৈতিক শাসনে পদার্পণের জন্য ১৯৯৬ সালে নির্বাচন দেন এবং তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০০০ সালেও তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে পুনঃর্র্নিবাচিত হন। এর মধ্যে ২০০৩ সালে সুদানের পশ্চিমাঞ্চল দারফুরে বিদ্রোহ হয়। দারফুরের অনারব জনগোষ্ঠী অবহেলার শিকার হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এই বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রেসিডেন্ট বশির ‘আরব’ মিলিশিয়াদেরকে হাতে অস্ত্র দিয়ে প্রেরণ করেন। এই আরব মিলিশিয়ারা ‘জানজাবিদ’ নামে পরিচিতি পায়। ‘জানজাবিদ’ দারফুরের বিদ্রোহীদের দমনে নৃশংসভাবে শক্তি প্রয়োগ করে। এমনকি তারা দারফুরে মানবিক খাদ্য ও ওষুধপত্রের সাহায্য নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে প্রবেশে বাধা প্রদান করে। ফলে দারফুরে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। লাখো মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে। এতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ২০০৯ সালের ৪ মার্চ প্রেসিডেন্ট বশিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এরই মধ্যে ২০১০ সালের নির্বাচনে জেনারেল বশির ৬৮ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট পদে পুনঃর্র্নিবাচিত হন। পরে ২০১১ সালে ২০০৫ সালের শান্তিচুক্তির শর্ত মোতাবেক দক্ষিণ সুদানে গণভোটে ৯৯ শতাংশ ভোটের মাধ্যমে দক্ষিণ সুদান স্বাধীনতা পায়। কিন্তু সুদানের রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সরকার তেল ও রুটির দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিলে অস্থিরতা চরমে ওঠে। বশির দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আর এপ্রিলে আরো একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট বশিরকে উৎখাত করা হয়। বশিরকে উৎখাতের পর ‘ফোর্সেস ফর ফ্রিডম অ্যান্ড চেঞ্জ’ (ঋঋঈ) নামের একটি সার্বভৌম পরিষদ গঠন করা হয় সামরিক ও বেসামরিক নেতৃবৃন্দকে (পাঁচজন সামরিক ও ছয়জন বেসামরিক) নিয়ে এবং ২০২২ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয় গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আবার একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সার্বভৌম পরিষদ বাতিল ঘোষণা করা হয়।
ইতোমধ্যে দুই জেনারেলের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে দুই বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। সুদান আর্মড ফোর্সেস (‘এসএএফ’) প্রধান বা সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (‘আরএসএফ’) প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো ওরফে হেমেদতির মধ্যে কে ক্ষমতায় থাকবেন তার ফয়সালা করতেই এই যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এই দু’জনই সাবেক ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর বশিরের খুব কাছের লোক ছিলেন। বিশেষ করে ‘আরএসএফ’ প্রধান হেমেদতির উত্থান খুবই রঙিন। প্রেসিডেন্ট বশির ২০০৩ সালে দারফুরে ‘অনারব’ জনগণের বিদ্রোহ দমনে বিভিন্ন যুদ্ধবাজ আরব মিলিশিয়া গোত্রসমূহকে অস্ত্র ও লজিস্টিক দিয়ে ঐক্যবদ্ধ করেন।
‘জানজাবিদ’ নামের এই মিলিশিয়া বাহিনী অত্যন্ত নৃশংসভাবে দারফুরে বিদ্রোহ দমন করে বশিরের নজর কাড়ে। বশির এই বাহিনীকে আধাসামরিক বাহিনীতে রূপান্তরিত করে নাম দেন ‘বর্ডার ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’। ২০০৭ সালে এর সৈনিকেরা দেশের গোয়েন্দা সংস্থার অংশ হয়ে যায় এবং ২০১৩ সালে বশির এটিকে ‘আরএসএফ’ নাম দিয়ে নিজের সরাসরি তত্ত্বাবধানে রেখে দাগালো বা হেমেদতিকে প্রধান করেন। দাগালো এ সময় বশিরকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরাসরি সহযোগিতা করতে থাকেন এবং দেশব্যাপী তার ‘আরএসএফ’ বাহিনীকে বিস্তৃত করতে থাকেন। জেলায় জেলায় ঘাঁটি স্থাপন, বিমান শাখা প্রতিষ্ঠা এবং ‘আরএসএফ’ সদস্যদেরকে বিদেশে প্রশিক্ষণে প্রেরণ করে দক্ষ বাহিনী করে গড়ে তোলেন। অন্য দিকে সেনা প্রধান জেনারেল বুরহানের সাথে দাগালোর বন্ধুত্ব দারফুর বিদ্রোহ দমনের সময় থেকেই শুরু হয়। তারা দু’জনেই আবার সৌদি নেতৃত্বে ইয়েমেনের যুদ্ধে দু’টি আলাদা সুদানি ব্যাটেলিয়ান কমান্ড করেছিলেন। তবে হেমেদতির ‘আরএসএফ’কে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়াকে সুদান সেনাবাহিনী সন্দেহের চোখেই দেখছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের অভ্যুত্থানে বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন এই দুই জেনারেল মিলেই এবং দু’জনই ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তবে সমস্যা সৃষ্টি হয় ‘আরএসএফ’কে সামরিক বাহিনীতে আত্তীকরণ করা নিয়ে। মূল প্রশ্ন ছিল কোন বাহিনী কার অধীনস্থ থাকবে। অথচ ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাসীন পর্ষদের প্রধান ছিলেন জেনারেল বুরহান এবং উপপ্রধান ছিলেন হেমেদতি। কিন্তু একীভূত বাহিনীর নেতৃত্বের প্রশ্ন থেকে দু’জনের মধ্যে সৃষ্টি হয় অবিশ্বাস, যা দুই বাহিনীর মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ দিকে অত্যন্ত নৃশংস প্রকৃতির এবং উচ্চাভিলাষী হেমেদতি এপ্রিলের শুরুর দিকে রাজধানী খার্তুম এবং অন্যান্য কয়েকটি অঞ্চলের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সামারিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মেরোবি শহরে ‘আরএসএফ’ সেনা মোতায়েন করেন। সেনাবাহিনী তাদের অনুমোদন ছাড়া ‘আরএসএফে’র এই সেনা মোতায়েনকে মেনে নিতে পারেনি। ফলে দুই বাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে এবং শুরু হয় যুদ্ধ।
জাতিসঙ্ঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে যে, সুদানের দুই বাহিনীর এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করতে পারে। সুদানের সীমান্তবর্তী দেশগুলো এতে জড়িয়ে পড়তে পারে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর ইতোমধ্যেই সুদানের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। আমিরাত সম্প্রতি লোহিত সাগরে তার কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের অংশ হিসেবে সুদানের সামরিক কর্তৃপক্ষের সাথে আবু আমামা বন্দর নির্মাণের জন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে। তারা হেমেদতিকেও সমর্থন দিচ্ছে। আবার মিসর সমর্থন করছে সেনাপ্রধান বুরহানকে এবং কঠোরভাবে বিরোধিতা করছে হেমেদতিকে। যুদ্ধে কোনোক্রমে হেমেদতি জেনারেল বুরহানের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সমর্থ হলে আমিরাত তাকে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে। অন্য দিকে মিসর হেমেদতিকে ‘ভাড়াটে’ সৈনিক হিসেবে দেখছে। আর লিবিয়ার বিদ্রোহী জেনারেল খলিফা হাফতার জেনারেল বুরহানকে সমর্থন দিচ্ছে। ফলে যেকোনো সময় এই যুদ্ধ আঞ্চলিক দ্বন্দ্বে রূপ নিতে পারে। এদিকে রাশিয়ার ‘মারসেনারি’ গোষ্ঠী ‘ওয়াগনার’ আরএসএফকে মিসাইল সরবরাহ করে ইতোমধ্যেই এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। আবার রাশিয়া একই সাথে ‘আরএসএফ’ এবং সুদান সেনাবাহিনীকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ সহযোগিতা দিয়েছে বলে জানা যায়। আর সুদানের মাধ্যমে রাশিয়া পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার সোনার খনিতে ঢোকার সুযোগ পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। সুদানের এই সাম্প্রতিক যুদ্ধ বেশ কিছু শিক্ষার কথা মনে করিয়ে দেয়। দরিদ্রতম ও দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত সুদানের মূল সমস্যা হলো ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। ক্ষমতার মোহে ক্ষমতাসীন জেনারেল বশির ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সেনাবাহিনীর সমান্তরাল আর একটি বাহিনী সৃষ্টি করেছেন। সেই বাহিনীই পরে প্রেসিডেন্ট ওমর বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। কাজেই যাদের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতাসীনরা অনৈতিকভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে তারাই এক সময় ক্ষমতাসীনদেরকে উৎখাত করতে পারে। জেনারেল ওমর আল বশির দীর্ঘ ত্রিশ বছর ক্ষমতায় থেকে সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি। আরো বেশি দিন ক্ষমতায় থাকার নেশায় বিভোর হয়ে হঠাৎ এক দিন অপমানজনকভাবে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পড়েন। কাজেই সম্মান থাকতে থাকতেই ক্ষমতা থেকে অবসর নেয়াটাই বুদ্ধিমানের লক্ষণ। সুদানে হেমেদতি ওমর বশিরকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সহযোগিতা করছেন কিন্তু নিজে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সুদানে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছেন। কাজেই ক্ষমতায় অন্যায়ভাবে টিকে থাকার জন্য কোনো শক্তিকে অপব্যবহার করলে সেই শক্তিও অপরিসীম ক্ষমতাধর এবং উচ্চাভিলাষী হয়ে ওঠে; যার মাশুল পরবর্তীতে পুরো জাতিকে গুনতে হয়। ক্ষমতার রাজনীতিতে কেউ কারো বন্ধু হয় না; স্বার্থসিদ্ধির উপকরণ হয় মাত্র।
সুদানের ক্ষমতালোভী দুই যুদ্ধবাজ নেতার শক্তি পরীক্ষায় কেউ জয়ী হতে পারবে না। কিন্তু পরাজিত হবে সুদানের জনগণ। নিহত হবে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ এবং বাস্তুচ্যুত হবে লাখো নারী-শিশু-বৃদ্ধ। অর্থাৎ ফলাফল হবে মানবতার চরম অবমাননা। লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক Email: maksud2648@yahoo.com