শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
চিতলমারীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রাণ নাশের হুমকি : থানায় জিডি গজারিয়ায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চমক দেখালেন মীনা খাগড়াছড়িতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান আজিজ উদ্দিন বগুড়া ও জয়পুরহাটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জামালপুর সদর উপজেলা পরিষদে বিজন কুমার চন্দরকে বিজয়ী ঘোষণা ডিমলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন মেলান্দহে দুগ্ধ সমবায় প্রকল্পের সদস্যদের মাঝে ঋণের চেক বিতরণ গলাচিপায় জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণ তারাকান্দায় অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে বিএনপির ত্রাণ নুরে আলম সিদ্দিকী শাহীন নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না মেয়র আরিফ

এম এ মতিন, সিলেট
  • আপডেট সময় শনিবার, ২০ মে, ২০২৩

নির্বাচন না করারা ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের টানা দুই বারের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি নগরবাসীকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানান। গতকাল শনিবার (২০ মে) বিকেলে নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠের জনসভায় এ ঘোষণা দেন তিনি।
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেছি। আমার জীবন থাকতে এ দলের ক্ষতি হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিবো না। অনেকে আমাকে উকিল আব্দুস সাত্তার বানানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমি সেই সুযোগ কাউকে দিতে চাই না। এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করার পরিবেশ নেই। বিশেষ করে ইভিএম নিয়ে নগরের মানুষজন জানে না। এটা ভোট কারচুপির মহা আয়োজন। আমি বাংলাদেশের তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, আমার মা ও শ্রদ্ধেয় আলেম-উলামাদের পরামর্শে নির্বাচন বর্জন করলাম।
আরিফ বলেন, অতীতে আপনারা আমার পাশে ছিলেন। আমি কারাগারে থাকা অবস্থায় আপনারা আমর পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি সেসব কথা ভুলতে পারি না। এর আগে তিনি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিজ বাসা কুমারপাড়া থেকে পায়ে হেঁটে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে পৌঁছান। মাজার জেয়ারত শেষে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে বক্তব্য দেন আরিফ। এসময় রেজিস্ট্রারি মাঠে কানায় কানায় পূর্ণ হয় হয়ে যায়।
গত ১৬ এপ্রিল যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিষয়ে সংকেত রয়েছে এবং তা দু-চার দিনের মধ্যে জানাবেন বলে জানিয়েছিলেন আরিফুল হক। যুক্তরাজ্যে সফরকালে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে ওই সংকেত পান। সংকেতটি লাল, না সবুজ; অর্থাৎ নির্বাচন করবেন কিনা, তার ব্যাখ্যা দিতে এক মাস সময় চেয়ে নেন। ফলে গতকাল শনিবার দুপুরে রেজিস্ট্রারি মাঠের নাগরিক সমাবেশে আরিফুল কী ঘোষণা দেন, তারই প্রতীক্ষায় ছিলেন প্রার্থী, ভোটার ও সাধারণ মানুষ। আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে বিএনপি নেতা আরিফুল হক নাগরিক সমাজের ব্যানারে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হতে পারেন বলে শুরু থেকেই গুঞ্জন রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আরিফুল হকের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকা-ে এ গুঞ্জন ও নগরবাসীর কৌতূহল আরও বাড়িয়েছে। ভোট নিয়ে মানুষের আস্থা তলানিতে পৌঁছেছে: বর্তমানে সিলেট কিংবা সারা দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ভোট নিয়ে মানুষের আস্থা এমন তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে যে কোনো নির্বাচন হলেই মানুষ প্রথমেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলে, ভোট দিনে দিতে পারবে নাকি আগের রাতেই শেষ হয়ে যাবে।’
গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে তিনটায় নগরের রেজিস্টারি মাঠে অনুষ্ঠিত নাগরিক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী না হওয়ারও ঘোষণা দেন। গত দুটি সিটি নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনয়নে সিলেটে মেয়র নির্বাচিত হন।
সিলেটের রেজিস্টারি মাঠে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর পূর্বঘোষিত নাগরিক সভার মঞ্চ তৈরিতে পুলিশ বাধা দেয়। এর প্রতিবাদে মাঠে এসে ফটকের সামনে অবস্থান নেন তিনি। সভা করার অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত ফটকের সামনেই অবস্থান করবেন বলে ঘোষণা দেন। পরে পুলিশ সভা করার মৌখিক অনুমতি দেয়। গতকাল বিকেল পৌনে পাঁচটায়
এর আগে নগরের কুমারপাড়া এলাকার নিজ বাসভবন থেকে পদযাত্রা করে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে যান তিনি। মেয়রের সঙ্গে পদযাত্রায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষও অংশ নেন। মাজার জিয়ারত শেষে পদযাত্রা করে বেলা ৩টা ২২ মিনিটে তিনি রেজিস্টারি মাঠে পৌঁছান।
মেয়র আরিফুল হক বলেন, ‘ভোটাধিকার নিয়ে সাধারণ জনগণের মন থেকে আস্থা তো উঠেই গেছে, এমনকি আওয়ামী লীগসহ তাদের জোটের অনেক নেতাও এখন ভোটের অবস্থা দেখে আড়ালে-আবডালে নিজেরাই লজ্জা পান।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সিলেট সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে ব্লুপ্রিন্ট রেডি হয়ে গেছে। কীভাবে ভোট ডাকাতি করা যায়, তার নীলনকশার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল সম্পন্ন হয়েছে।’
আরিফুল হক বলেন, ‘আমি মনোনয়নপত্র কিনিনি, নির্বাচন করব নাকি করব না, সে সিদ্ধান্ত জানাইনি। কিন্তু তার আগেই আমার নেতা-কর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষীদের একের পর এক মিথ্যা ও সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বাসাবাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে, হুমকির পাশাপাশি ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এটাই কি তাদের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশের নমুনা?’ তিনি বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে হয়রানি বন্ধের দাবি জানান। ইভিএমের প্রতি মানুষের ন্যূনতম আস্থা নেই দাবি করে আরিফুল হক বলেন, ‘দেশে কোনো নির্বাচনের পরিবেশ নাই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যখন ইভিএমকে “না” বলে দিয়েছে, বাংলাদেশের আপামর জনগণ যেখানে ইভিএমকে না করেছে, সেই জায়গায় সিলেটে তারা নিয়ে এসেছে ইভিএম। এটা কিসের ইঙ্গিত? এটা আরেকটা ভোট ডাকাতির ইঙ্গিত।’ তিনি নির্বাচন কমিশনকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, ‘আপনারা নিরপেক্ষভাবে সিলেটের যেকোনো স্থানে ইভিএম নিয়ে মানুষের মধ্যে জরিপ করে দেখুন। দেখবেন, ৯৯ ভাগ মানুষই বলবে তারা ইভিএম চায় না। ইভিএমের প্রতি তাদের আস্থা নেই।’ আরিফুল হক চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘নগরবাসীর উন্নয়নে রাতদিন কাজ করার চেষ্টা করেছি। কতটুকু সফল হতে পেরেছি, জানি না। কিন্তু গত কয়েক দিন আসন্ন সিটি নির্বাচনে আমার অংশগ্রহণ নিয়ে প্রতিদিন অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষীর ফোন, বার্তা আমার এ ছোট জীবনের বড় প্রাপ্তি।’
তিনি বলেন, ‘এই কয়েক দিনে যেদিকেই গিয়েছি, সেদিকেই সব বয়সী মানুষ আমার সামনে এসে তাঁদের মনের আকুতি তুলে ধরেছেন। হয়তো অনেককে আমি ভালো করে চিনি না, জানি না। তাঁদের অনেকে আমাকে আপনজনের মতো জড়িয়ে ধরেছেন। কথা দিচ্ছি, মেয়র না থাকলেও নগরবাসীর ঋণ শোধ করার তাগিদে সিলেটের সব কল্যাণমূলক কাজে আপনাদের সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থাকব।’
নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপির সিদ্ধান্তই সঠিক বলে মনে করেন আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিএনপি আমার রক্তে-রন্ধ্রে, অস্থিমজ্জায়। আমি আপনাদের আরিফ, বিএনপির আরিফ হয়ে দেশবাসীকে অন্ধকারের গহিনে ফেলতে পারি না। স্পষ্টত এ নির্বাচন হবে প্রহসনের নির্বাচন। সুতরাং এ প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তাই আমার দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত।’
সিলেটসহ সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বর্তমান সরকারের অধীন কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আরিফুল হক বলেন, ‘সিলেটের অলিতে–গলিতে নানা প্রান্তে লাখো জনতা যাঁরা আমি নির্বাচন করব বলে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বারবার অনুরোধ জানিয়ে আসছেন, সেই সব জনতার সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান জানাচ্ছি। কিন্তু এবার আপনারা সবাই আমাকে দয়া করে ক্ষমা করবেন।’
সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অপরিকল্পিত উন্নয়ন করেছেন বলে অভিযোগ তুলছেন। কারও নাম উল্লেখ না করে আরিফুল তাঁর বক্তৃতায় এ সমালোচনার জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘ইদানীং নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকেই বলছেন, আমি যা করেছি তা অপরিকল্পিত উন্নয়ন, যা নিতান্তই হাস্যকর। কারণ, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেখানে আমার কাজের প্রশংসা করেছেন, সেখানে তাঁদের এ রকম বক্তব্য একেবারেই মূল্যহীন ও স্ববিরোধী।’
সিলেটের মেয়র আরও বলেন, ‘কর্মসম্পাদন চুক্তিতে টানা কয়েকবার সিলেট সিটি করপোরেশন কাজের মাধ্যমে প্রথম হওয়ার বিরল সম্মান অর্জন করেছে। আমি কতটুকু কী করেছি, তা এ শহরের প্রতিটি অলিগলির মানুষ ভালোই জানে।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন প্রার্থীরা। ২৫ মে মনোনয়ন ফরম বাছাই, ১ জুন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। ২ জুন প্রতীক বরাদ্দ শেষে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ জুন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com