দু’দিনের সফরে আগামীকাল শুক্রবার ঢাকা আসছেন চীনের ভাইস মিনিস্টার সান ওয়েইডং। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় নিয়েই আলোচনা করবেন তিনি। শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ফরেন অফিস কনসালটেশন-এফওসিতে চীনা প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন ওয়েইডং। ওই বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এফওসি ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক এবং সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ওয়েইডং। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রস্তাবিত অনেক বৈঠকের সময়ক্ষণ (অ্যাপয়েনমেন্ট) চূড়ান্ত হয়নি বলে দাবি করেছে সেগুনবাগিচা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীনের নতুন পররাষ্ট্র মন্ত্রী সিন গ্যাংয়ের ঢাকায় নজিরবিহীন যাত্রাবিরতি এবং গত মাসে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ দূতের নিঃশব্দে বাংলাদেশ সফরের পর দেশটির উচ্চ পর্যায়ের কোনো প্রতিনিধির এটাই প্রথম ঢাকা সফর। তাছাড়া সান ওয়েইডং ভাইস মিনিস্টারে দায়িত্ব নেয়ার পর এবারই প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ভাইস মিনিস্টারের গুরুদায়িত্ব নেয়ার আগে তিনি ভারত ও পাকিস্তানে চীনের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন।
বিশেষ করে ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনার পারদ যখন তুঙ্গে তখন সান ওয়েইডং ছিলেন দিল্লিতে চীনের রাষ্ট্রদূত। সেই সময় ঠা-া মাথায় তিনি দিল্লির সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কের অবনতি ঠেকিয়েছেন।
ওয়াকিবহাল সূত্র বলছে, সাউথ এশিয়া এক্সপার্ট খ্যাত সান ওয়েইডং এমন এক সময় ঢাকা আসছেন যখন মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চাপে রেখেছে। রাজনীতিবিদসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আরও নিষেধাজ্ঞা আসার খবর চাউর হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ঢাকায় থাকা প্রভাবশালী রাষ্ট্রদূতদের পুলিশ এসকর্ট সুবিধা আচমকা প্রত্যাহার নিয়েও এক ধরনের অস্বস্তি রয়েছে।
বিশেষত ওই ঘটনার পর থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস পতাকা নামিয়ে সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন! তাছাড়া দেশে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দূতরা জোটবদ্ধভাবে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত চীনের ভাইস মিনিস্টারের ঢাকা সফরের সঙ্গে উপরোল্লিখিত বিষয়গুলোর কোনো সম্পর্ক বা যোগসূত্র আছে কি-না? তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়া ক্রমেই দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভরকেন্দ্রে পরিণত হওয়া ঢাকাকে কাছে পেতে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও চীনের সাম্প্রতিক তৎপরতার অংশ কি-না? সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে কূটনীতিক মহলে। অবশ্য সেগুনবাগিচা বলছেন, রাজনীতির টালমাটাল ওই অবস্থা বিবেচনায় সফরটি নিয়ে বিশ্লেষণ হতে পারে।
তবে এখন পর্যন্ত ভাইস মিনিস্টারের সফরে এফওসি-ই মুখ্য। বৃহৎ ওই আমব্রেলার আওতায় ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রাজনীতি, রোহিঙ্গা সংকটসহ সম্পর্কে সব বিষয় নিয়েই কথা হবে। এজেন্ডায় সামরিক সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকছে বলে নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে বেইজিং প্রস্তাবিত গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই)-এ বাংলাদেশের যোগদান নিয়ে আলোচনা চলছে। এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের সর্বশেষ সংশোধিত খসড়া এখন ঢাকার বিবেচনায়। শনিবারের এফওসিতে এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা এবং সমঝোতাটি চূড়ান্ত হতে পারে বলে আভাস মিলেছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)’র পর জিডিআইকে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এর ফ্ল্যাগশিপ ডেভেলপমেন্ট রেসিপি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যার অধীনে বাংলাদেশসহ এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের চীনহিতৈষী দেশগুলোকে আরও কাছাকাছি নিতে চায় বেইজিং। সেইসঙ্গে দেশগুলোর কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নেয়ার আকাক্সক্ষা রয়েছে শি চিন পিং সরকারের।