বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত মাইলস্টোন কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

বাজেটের মূলনীতি হোক মূল্যস্ফীতি কমিয়ে মানুষের জীবন সহজ করা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০২৩

অর্থনীতিবিদদের অভিমত 
মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা আগামী বাজেটের সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথার কারণ হবে। তাই সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি জোরদার করে সাধারণ মানুষের নির্বিঘেœ জীবনচলার বিষয়টি অবশ্য অগ্রাধিকারের দাবি রাখবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কোভিড পরবর্তী এই সময়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের মূলনীতি হিসেবে দেখা উচিত।
দেশের শীর্ষস্থানীয় তিন অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-র ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বাসসের কাছে এমন অভিমত তুলে ধরেছেন।
ড. আতিউর রহমান বলেন, আগের দু’টি জাতীয় বাজেট প্রস্তাবনার সময়ই আমরা বড় সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। ২০২১-২২-এর বাজেট যখন মহান জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়েছিল তখন মনোযোগের কেন্দ্রে ছিল করোনাজনিত সঙ্কট থেকে পুনরুদ্ধারের নীতিকৌশল। তারপরের বছরের বাজেটে ভাবতে হয়েছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে। এবার অর্থাৎ আসছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের সময়ও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক অভাবনীয় মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কথা মাথায় রাখতে হচ্ছে বাজেট প্রণেতাদের।
তিনি মনে করেন, মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা আগামী বাজেটের সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথার কারণ হবে। তাই সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি জোরদার করে সাধারণ মানুষের নির্বিঘেœ জীবনচলার বিষয়টি অবশ্য অগ্রাধিকারের দাবি রাখবে। আসন্ন বাজেটকে তাই একাধারে খুবই সতর্কতার সাথে প্রণয়ন করতে হবে, অন্যদিকে নয়া পথের সন্ধান দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে শেষ বাজেট হতে যাচ্ছে এবারেরটি। তাছাড়া আইএমএফের কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট বেশকিছু শর্তপূরণের বাড়তি চাপও রয়েছে। সার্বিক বিচারে নিছক আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, বরং এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একটি জাতীয় মনস্তাত্ত্বিক দলিল হিসাবে এবারের বাজেটটি আলাদা তাৎপর্যের দাবিদার। বিশেষ করে ঊর্ধ্বমুখী দ্রব্য ও সেবা মূল্য পরিস্থিতির মাঝে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব কী করে সমাবেশ করা যাবে নীতি-নির্ধারকদের সেই দুশ্চিন্তার কথাটি নিশ্চয় উপেক্ষা করার মতো নয়। এজন্য বাড়তি করক্ষেত্র সন্ধান এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে করছাড়ের সুযোগ সংকুচিত করতেই হবে।
তিনি মনে করেন, আগামী বাজেটে প্রথমত করকাঠামোতে ব্যাপক সংস্কার করার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে সম্পদ করের আধুনিকায়ন দরকার। ধনিক শ্রেণির সম্পদের দাম বাজার মূল্যে নির্ধারণ করে তাতে কর বসানো জরুরি। এখন যে ব্যবস্থা আসছে তাতে প্রচুর ছাড় দেয়ার সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে আয় করের হার ধনীদের জন্য বাড়ানো উচিত। অন্যদিকে ন্যুনতম করসীমা বাড়ানো উচিত।
দ্বিতীয়ত-কম আয়ের মানুষগুলোর আয় রোজগারের সুযোগ বাড়ানোর দরকার রয়েছে। তারা যাতে সহজেই দেশে এবং বিদেশের শ্রম বাজারে ঢুকতে পারে সেজন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা দরকার। কৃষি ঋণ ও এমএসএমই ঋণের পরিধি বাড়ানো উচিত। এসব ক্ষেত্রে নারী উদ্যেক্তাদের প্রাধান্য দিতে হবে।
তৃতীয়ত-সবুজ উন্নয়নের জন্য কার্বন কর আরোপ এবং সোলার সেচ ব্যবসা গড়ে তুললে সমাজে দীর্ঘমেয়াদি সুসম উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি হবে। চতুর্থত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাড়তি বিনিয়োগ করলে দারিদ্র্য নিরসনের হার আরো বাড়বে। ফলে সমাজে আয় বৈষম্য কিছুটা কমবে।
আতিউর রহমানের বলেন, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী এবং বিশেষজ্ঞরা বারবার এ সঙ্কটকালে জাতীয় বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাড়তি বরাদ্দের মাধ্যমে নি¤œআয়ের মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন। তবে, মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ কিংবা ভর্তুকি দেয়ার মতো পথে না হাঁটার পরামর্শই বেশি বেশি আসছে। কারণ, এ ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে সুবিধা দেয়ার কারণে যাদের সবচেয়ে বেশি সহায়তা দরকার তাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যয় বেড়ে যায়। তার চেয়ে যথাযথ টার্গেটিংয়ের মাধ্যমে আসলেই যাদের সহায়তা দরকার, তাদের কাছে নগদ টাকা পৌঁছানোটিই বেশি কার্যকর।
তিনি মনে করেন, নি¤œ আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা মসৃন করতে চরা ল, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এলাকা, নগর দরিদ্র এভাবে ‘পোভার্টি পকেটস’গুলোকে আলাদা চিহ্নিত করে সেগুলোর জন্য উপযোগী বিশেষ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া একটি চমৎকার সমাধান হতে পারে।
সিপিডির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আসন্ন বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নিশ্চয়ই বড় চ্যালেঞ্জ। আর একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো কোভিড পরবর্তী এই সময়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা।
তিনি মনে করেন, বর্তমানে উচ্চ মুল্যস্ফীতি ও সম্পদ সংকুলান যেমন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে একইসাথে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ রয়েছে। রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আমদানি বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে অসমাঞ্জস্যতা দেখা যাচ্ছে। আইএমএফ এর কিছু শর্ত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, কোভিড মহামারীর কারণে অনেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। সামাজিক বৈষম্য বেড়েছে। তাই, এসব জায়গায় বিনিয়োগ ও প্রাপ্তি বাড়াতে হবে। নি¤œ আয়ের মানুষকে কিভাবে সুরক্ষা দেয়া যায়-সেসব কর্মসূচির প্রতি বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন।
সিপিডির এই ফেলো বলেন, খাদ্য সহায়তা প্রদানে সরকার ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ করছে এবং এর সংখ্যা বৃদ্ধি করে দেড় কোটি করার ঘোষণা দিয়েছে। সেটার বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, নগর দরিদ্ররা সামাজিক সুরক্ষার আওতায় নেই। তাদের জন্য ওএমএস এর পাশাপাশি রেশন পদ্ধতি চালু করা যায় কিনা সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বাজেটের আকার খুব বড় হয় বলে মনে করি না। এবার বাজেটের আকারের কথা যেটা শুনছি, তা জিডিপির ১৫ থেকে ১৬ শতাংশের মধ্যে থাকবে। এর মধ্যে সম্পদ আহরণ থাকবে নয় থেকে সাড়ে নয় শতাংশ। ঘাটতি বাজেট হিসেবে সাথে ছয় শতাংশ যোগ করলে বাজেট জিডিপির ১৫ থেকে সাড়ে ১৫ শতাংশের বেশি হবে না।
মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, সম্পদ আহরণের দিক থেকে প্রত্যক্ষ কর কিভাবে বাড়ানো যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। যারা কর দিচ্ছেন তাদের ওপর অহেতুক চাপ সৃষ্টি না করে করের ভিত্তি আরো বাড়াতে হবে। দেখতে হবে ডিজিটাইলাইজেশনের মাধ্যমে নতুন করদাতা কিভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আরো শক্তিশালী করার পরামর্শ তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রযুক্তিগত শক্তি, জনবল বৃদ্ধি এবং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। এসব উদ্যোগ সরকারকে রাজস্ব আহরণে সহায়তা করবে।
তিনি মনে করেন, বাজেটে কর ফাঁকি রোধের উদ্যোগ থাকাটা জরুরি। এছাড়া আয়কর আইন ও কাস্টমস এক্টসহ বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিশেষ মনোযোগ থাকতে হবে।
জ্যেষ্ঠ এই অর্থনীতিবিদ নতুন প্রকল্প গ্রহণের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতকর্তা অবলম্বনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এবার অবকাঠামোতে ব্যয় না বাড়িয়ে শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষাখাতে অগ্রাধিকার থাকা ভালো। সেখানে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে সুষ্ঠভাবে বিতরণ করা জরুরি।
তিনি বলেন, ব্যয়ের দক্ষতা বাড়ানোর আব্যশকতা রয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে দেখা যায় অবকাঠামো হচ্ছে কিন্তু সেখানে প্রশিক্ষিত জনবল নেই। তিনি মনে করেন, শিক্ষাখাতে কোভিডের সময় অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষাখাতে কার্যকর ব্যয় কিভাবে করা যায়-সেদিকে নজর রাখার প্রয়োজন।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘাটতি অর্থায়নের ক্ষেত্রে দেখতে হবে ঘাটতি অর্থায়নের কারণে বেসরকারিখাতের বিনিয়োগ যেন বাাঁধাগ্রস্ত না হয়। ব্যাংকিং খাত থেকে বেশি ঋণ না নিয়ে বরং বিদেশী ঋণের প্রতি বেশি নজর দিতে হবে।
তিনি এবারের বাজেটে ভর্তুকি পুনবিন্যাসের ওপর গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন। তিনি মনে করেন, ভর্তুকি কমানোর ব্যাপারে আইএমএফ এর পরামর্শ থাকবে। কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রাধিকার দেয়াটা অতি জরুরি। দেখতে হবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যেন না কমে। বরং সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অদক্ষতার কারণে ভর্তুকি বেশি যাচ্ছে, সেখানে কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে নীতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
এই অর্থনীতিবিদের মতে, বর্তমান সময়ে রিজার্ভের ওপর যেহেতু চাপ রয়েছে। তাই বিদেশী ঋণ ও বাজেটারী সহায়তা দক্ষতার সাথে ব্যয় করতে পারলে রিজার্ভের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির চেয়ে আমাদের নজর রাখতে হবে কিভাবে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে মানুষকে স্বস্তি দেয়াটা হতে হবে আসন্ন বাজেটের মূলনীতি। এর জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো, প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে সরাসরি নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার বিশেষ উদ্যোগ যেন বাজেটে থাকে।
তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে শুল্ক-কর ছাড় দিতে হবে। এছাড়া ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি আরো জোরদারের পরামর্শ তার।
আইনুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। তাই গতানুগতিক ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার উপযোগী বাজেট প্রনয়ণের পরামর্শ দেন তিনি।

সম্পদ কর আহরণে আফ্রিকা থেকেও পিছিয়ে: সিপিডি
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করেন, দেশের জিডিপি যদি ১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, তাহলে সম্পদ কর ০.৪ শতাংশ বাড়ার কথা। আর যদি জিডিপি ৬ শতাংশ ও মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশ হিসাবে যোগ করে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি বিবেচনা করি, তাহলে সম্পদ কর ৬ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। সেটা আমরা পাইনি। উন্নয়নশীল দেশ বিবেচনায় আফ্রিকার সম্পদ কর ০.৩ শতাংশ, আমরা সেখান থেকেও পিছিয়ে আছি। অথচ আমাদের দেশের আয় অফ্রিকার দেশেগুলোর চেয়ে বেশি। ফলস্বরূপ, সামাজিক বৈষম্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে সিপিডি আয়োজিত ‘স্টেট অ্যান্ড স্কোপ অব প্রপার্টি ট্যাক্সেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সংলাপে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে দেবপ্রিয় এ তথ্য জানান। অনুষ্ঠানটি স ালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
সিপিডি’র গবেষণায় বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির মতো সম্পদ কর বাড়েনি। এর ফলে বাংলাদেশ বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ কর হারাচ্ছে। এ ছাড়া বাজেট ঘাটতি কমাতে কর-জিডিপির অনুপাত আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সিপিডি। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ কর আদায়ের জন্য নতুন নতুন খাত সন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন গবেষকরা।
আলোচনায় বক্তারা জমিটি পতিত না রেখে উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। যদি তা না হয়, তবে তারা এই ধরনের জমিতে প্রযোজ্য করের হার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বক্তারা বলেন, গত এক দশক ধরে কর-জিডিপির অনুপাত ৭-৮ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে। বাজেট ঘাটতি কমাতে এই অনুপাত আরও বাড়ানো প্রয়োজন। কর ফাঁকি, করের আওতা বৃদ্ধি করতে না পারা এবং প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতার কারণে রাজস্ব আদায় বাড়ছে না।
সিপিডির গবেষণা বলছে, দেশের রাজস্ব আয়ের ৫৫ শতাংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে। গত ৫ বছর প্রত্যক্ষ কর ৩৩ শতাংশের ঘরে আটকে আছে। সম্পদ থেকে রাজস্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এটাকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। তাই প্রত্যক্ষ কর আদায়ের জন্য নতুন নতুন খাত সন্ধান করতে হবে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আইএমএফের শর্ত পূরণ করতেও রাজস্ব খাতে সংস্কার প্রয়োজন। এলডিসি গ্রাজুয়েশন এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্যে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, দেশে প্রকৃতপক্ষে প্রত্যক্ষ কর মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ। এর বড় অংশ ভূমি উন্নয়ন কর। প্রত্যক্ষ কর না বাড়ার কারণে আয় বৈষম্য বাড়ছে। বাংলাদেশে আয় বৈষম্যের চেয়ে সম্পদের বৈষম্য দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। একটি প্রজন্ম সম্পদ আয় করে ও পরবর্তী প্রজন্ম তা ভোগ করে। তাই সেখানে সম্পদের বৈষম্য হ্রাস করে ন্যায্যতা নিয়ে আসতে হবে। ওই বৈষম্য হ্রাস ও রাজস্ব আদায়ে বাংলাদেশে উত্তরাধিকার কর প্রচলন অত্যন্ত প্রয়োজন।
তিনি বলেন, তিন ধরনের সম্পদ কর নিয়ে কাজ করেছি। একটি হলো প্রত্যক্ষ সম্পদ কর, হোল্ডিং কর ও উত্তরাধিকার কর। বাংলাদেশে আয় বেড়েছে দ্বিগুণ, একইসঙ্গে বৈষম্যও বেড়েছে। কিন্তু দেখার বিষয় আয় বৈষম্যের চেয়ে সম্পদের বৈষম্য বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। আয় বৈষম্য ১.৪ শতাংশ বেড়ে থাকলে সম্পদের বৈষম্য বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ সম্পদের বৈষম্য ক্রমান্বয়ে ঘনীভূত হচ্ছে ও বৈষম্য কয়েকগুণ হারে বাড়ছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তার প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশ ৫ ধরনের ট্যাক্স চলমান রয়েছে- ভূমি উন্নয়ন কর, ওয়েলথ সারচার্জ, হোল্ডিং ট্যাক্স, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ও গিফট ট্যাক্স। এর মধ্যে স্থাবর সম্পত্তি যখন নিজেদের মধ্যে দান বা হেবা হয়, সেখানে কোনো ট্যাক্স নেই। আমরা এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বলেছি। শুধুমাত্র উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই ট্যাক্স অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, অন্যদিকে সরকার যখন নিজে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করেন, যেমন- ইকোনমিক জোন কিংবা বড় কোনো প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ করে। তখন তারা ট্যাক্স দেয় না। এখানে সরকার ব্যক্তি খাতের সঙ্গে এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করছে। আবার সম্পদ সারচার্জ ৩৫ শতাংশ রয়েছে। এটাকেও আমরা উচ্চ মনে করছি। ট্যাক্স সিস্টেমের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যেও বৈষম্য রয়েছে। দেশের ভেতরে সম্পদ যেভাবে কেন্দ্রীভূত হয়েছে, যেভাবে আয়ের বৈষম্য বেড়েছে। ন্যায্যতা ও বৈষম্য হ্রাসে সম্পদ করের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সম্পদ করের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। জমি ও বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে কর আরোপ হচ্ছে না। এখানে বৈষম্য রয়েছে। জমির ওপর বিনিয়োগ বাড়ছে, কারণ জমির দাম অস্বাভাবিকহারে দাম বাড়ছে। এটার বড় কারণ এই বিনিয়োগে বড় ধরনের কর দিতে হয় না।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com