আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনও অবস্থাতেই আক্রমণকারী না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আমরা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমরা বাংলাদেশে প্রথম ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের জন্য আইন করে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করেছি। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের ক্ষেত্র আমরা প্রস্তুত করছি এবং প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। গতকাল রবিবার (২৮ মে) বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকম-লীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এক যৌথসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, মার্কিন ভিসা নীতিতে বলা হচ্ছে যে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন করার অন্তরায়, কেউ যেন বাধা না দিতে পারে এই কারণে মার্কিন ভিসা নীতি। এই কারণে আমাদের মাথাব্যথার কোনও কারণ নেই।
তিনি বলেন, যারা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনে বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নীতি প্রয়োগ করবে। অথচ তারা ঘোষণা করে বাধা দিচ্ছে। কেরানীগঞ্জে যে নাটক সাজালো, আওয়ামী লীগের অফিস আক্রমণ করে ভাঙচুর করলো, নাটক সাজিয়ে ইচ্ছা করে ওখানে গোলমালের সৃষ্টি করলো। খাগড়াছড়িতেও তাই, আমাদের অনেক কর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে। তাদের এটা লক্ষ্য, অথচ তারা বোঝাতে চায় যে আওয়ামী লীগ বাধা দিচ্ছে। সেজন্য আপনাদের বলি আমাদের শান্তি সমাবেশ নির্বাচন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ থাকুক।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নেত্রীর নির্দেশ সব জেলা, মহানগর, ইউনিয়ন, প্রয়োজনে ওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখবো। আপনাদের আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, যেহেতু আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, সেজন্য এই শান্তি সমাবেশ। কারও সঙ্গে পাল্টাপাল্টি মিটিং, সমাবেশ করা আমাদের রাজনীতি নয়।
আক্রমণ করবো না, কিন্তু আক্রমণ করলে আমরা ছেড়ে দেবো না: নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, কোনও অবস্থাতেই আক্রমণকারী হবেন না। কারণ বিএনপি এখন যে কোনোভাবে দেখাতে চায় যে আমরা আক্রমণকারী। কেরানীগঞ্জের ঘটনায় আক্রমণকারী তারা। অথচ তারা বিদেশিদের কাছে প্রচার করেছে যে আক্রমণকারী হচ্ছে আওয়ামী লীগ। কাজেই কোনও অবস্থাতেই মাথা গরম করবেন না। বাংলাদেশের জনগণ আমাদের সঙ্গেই আছে। গাজীপুরে আমরা কিছু ভোটে হেরে গেছি। কিন্তু নির্বাচন গনতান্ত্রিক, অবাধ হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে দেশে বিদেশে কেউ কিছু বলতে পারেনি। আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে জয়ী করেছি সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচন করে। সামনেও বরিশাল, খুলনা এবং রাজশাহীতে ইলেকশন আছে। এই নির্বাচনগুলোও অবাধ এবং সুষ্ঠু হবে। শেখ হাসিনা সরকারের নীতি হচ্ছে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন করতে হবে। জনগণ ভোট দিলে আছি, ভোট না দিলে নেই। আমরা আমাদের এই নীতিতে অটল থাকবো।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শনিবার বাড্ডায় বিশাল সমাবেশ হচ্ছে, তার আগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে হয়েছে। সারাদেশে আমরা এখন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য শান্তি সমাবেশ করবো।
সহযোগী সংগঠনগুলোকে আওয়ামী লীগের সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখন সবার ইউনাইটেডলি মুভ করতে হবে, কোনও ছাড় নেই। আমরা আক্রমণ করবো না, কিন্তু আক্রমণ করলে আমরা ছেড়ে দেবো না।
বিএনপি আমলের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা অনেক সহ্য করেছি, অনেক মারামারি করেছি। এই অফিসের সামনে ২১ ফেব্রুয়ারির আলোচনা আমাদের করতে দেয়নি। এই অফিসের সামনে মতিয়া চৌধুরীকে, মোহাম্মদ নাছিমকে পেটানো হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের বারবার নির্যাতন-অত্যাচার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অনেককে অ্যরেস্ট করা হয়েছে, সাবের হোসেন চৌধুরীকে প্লেট চুরির অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই নোংরা রাজনীতি তারাই করে যাদের রাজনীতিই নোংরা। নষ্ট কথা তারাই বলে, যাদের রাজনীতিই নষ্ট। এরা নষ্ট-অসুস্থ রাজনীতি করে। এদের হাতে স্বাধীন-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। এই অপশক্তির হাতে এত রক্তের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে আমরা তুলে দিতে পারি না। এরা আসা মানে গণতন্ত্র শেষ, আবার ভোট চুরি, হাওয়া ভবন, অর্থ পাচার, বাংলাদেশ দুর্নীতিতে আবার চ্যাম্পিয়ন। এই অপশক্তির হাতে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশকে তুলে দিতে পারি না।
আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নিজেরা নিজেদের সঙ্গে লড়াই করলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চায়ের দোকানে বসে নিজের দলের লোকের নামে গীবত করবেন, এটা আওয়ামী লীগ নয়। আওয়ামী লীগের কোনও কর্মী-নেতা তা করতে পারে না। যারা প্রার্থী আছেন, একসঙ্গে জনসংযোগ করে নৌকার পক্ষে ভোট চাইবেন। আমাদের নেত্রী, মনোনয়ন বোর্ড যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষে কাজ করবেন। আমরা শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী রাখবো, নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে শেখ হাসিনা শক্তিশালী হবে। বিএনপির সরকার তাড়ানোর হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারকে তাড়াতে হবে, দেখি কে কারে তাড়ায়। সরকারকে তাড়াবেন বাংলাদেশের মানুষ বুঝিয়ে দেবে। ভোটে বাধা দিতে আসেন, ভালো করে বুঝিয়ে দেবে।
আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের চীন সফর এবং সম্ভাব্য ভারত সফর নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এগুলো পার্টি টু পার্টি কন্টাক্ট। এসব বৈঠকে অনেক কিছু আলোচনা হতে পারে। রাজনীতি নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্নভাবে মতবিনিময় হতে পারে। বৈশ্বিক রাজনীতি এটা পার্টি টু পার্টি কন্টাক্ট, পিপল টু পিপল কন্টাক্টকে সুদৃঢ় করার জন্য। যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুরসহ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা।
৩