বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

শিল্পায়নের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে নীলফামারীর মানুষের জীবনমান

সোহাগ ইসলাম নীলফামারী :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ মে, ২০২৩

গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফাইন্যান্সের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, একটা সময় নীলফামারীতে দিনে তিন বেলা ভাত খেতে পারত না ২৩ শতাংশ মানুষ । সেসময় এই অঞ্চলের একটি পরিবারের আয় ছিল গড়ে ৩৫ হাজার ৪০০ টাকা। এই অঞ্চল ছিল কৃষি নির্ভর। বছরের বেশির ভাগ সময় কৃষি কাজ না থাকায় বেকার থাকত অধিকাংশ মানুষ আর মৌসুমি এই বেকারত্বের ফলে দেখা দিত খাদ্য অভাব? মঙ্গা কবলিত এলাকা বলেই পরিচিত ছিল নীলফামারী। তবে মঙ্গার কবলিত এই এলাকায় শিল্পের হাতছানিতে বদলে গেছে মানুষের জীবন মান। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে উত্তরের এজেলায় গড়ে উঠেছে একের পর এক শিল্পকারখানা বেড়েছে মানুষের কর্মসংস্থান, দিন দিন মুছে যাচ্ছে অভাব শব্দটি। জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা দূর করতে ২০০১ সালে উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ২১৩.৬৬ একর এলাকায় গড়ে তোলা হয় এই ইপিজেড। আর এই ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জেলা জুড়ে গড়ে উঠছে বিভিন্ন ছোট-বড় শিল্পকারখানা। যেসব কারখানায় কাজ করছেন এই অঞ্চলের কয়েক লাখ শ্রমজীবী নারী-পুরুষ। এতেই বদলে গেছে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা। কর্মসংস্থান হওয়ায় মিলেছে অর্থনৈতিক মুক্তি, ফলে মঙ্গাকবলিত থেকে সমৃদ্ধির পথে যাচ্ছে অবহেলিত এই অঞ্চল। বর্তমানে উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের ১৯০টি প্লটের মধ্যে ১৫৪টি প্লটে ২৪টি দেশি-বিদেশি কোম্পানির কারখানা আছে। এর মধ্যে ১১টিই বিদেশি কোম্পানি। এছাড়াও জুতা তৈরি, পিভিসি পাইপ, কুটিরশিল্প, পরচুলার কারখানা সহ প্রায় ছোট ছোট ৬০টি কারখানা গড়ে উঠেছে এজেলায়। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো মানুষের। এসব কারখানায় বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে নারীদের। উত্তরা ইপিজেডসহ বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা বলছেন, এসব কারখানায় বেতন, উৎসব-ভাতা ও মাতৃত্বকালীন সুবিধাসহ শ্রমিকদের পাওনা সঠিক সময়ে পরিশোধ করা হয়। এতে কারখানা গুলোতে চাহিদা বাড়ছে মানুষের। সন্তোষ শ্রমিকরা। ব্যবসায়ীর বলছেন, কারখানা গুলোতে রয়েছে দক্ষ জনশক্তি, আছে সুন্দর কর্মপরিবেশ। নেই রাজনৈতিক বা সামাজিক কোন প্রভাব, ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন বেশি। এতে বাড়ছে কলকারখানা, বাড়ছে শ্রমিকের চাহিদাও। উত্তরা ইপিজেডে এভারগ্রীন কোম্পানিতে কাজ করেন রেজাউল ইসলাম। কয়েক বছর আগেই যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো তার। এখন একটি ব্যাংকে সঞ্চয় করেন তিনি। রেজাউল ইসলাম বলেন, আমি পরিবারের বড় ছেলে আমি। দাদী বাবা মা ও বোন সহ ৫ জনের পরিবার? বাবার একার আয়ে খুব অভাবে দিন কাটত আমাদের। কয়েক বছর হয় কাজ করছি? আমাদের অভাব এখন নাই। মাসের খরচ শেষে কিছু টাকা ব্যাংকে রাখি। ভালোই যাচ্ছে দিন। নাসরিন আক্তার নামের আরেক শ্রমিক বলেন, প্রতি মাসের বেতন প্রতি মাসে পাই। এতে ঝামেলা হয়না? সুন্দর মত সংসার চলে। ধার দেনা করতে হয়না। আগে খুব কষ্ট ছিল আমাদের। ইকো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক বলেন, ইকো গ্রুপ প্রতি বছর কোটি টাকার পাটজাত পণ্য রপ্তানি করছেন। এছাড়া তাদের কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে ১২ হাজারের বেশি শ্রমিকের। ময়নুল ইসলাম নামে এক জুতা কারখানার জেনারেল ম্যানেজার বলেন, দিন দিন আমাদের সব কিছুই সহজ লভ্য হচ্ছে। কোন ভাবে যদি চিলাহাটি স্থলবন্দর চালু হয় হয়ত আমাদের আমদানি রপ্তানি বাড়বে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আরও কলকারখানা স্থাপন হবে। নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি প্রকৌশলী এস,এম শফিকুল আলম ডাবলু বলেন, শিল্প উন্নয়নে একের পর এক সম্ভাবনার পথ তৈরি করে দিচ্ছে সরকার। আর এই শিল্পকারখানা গুলোর জন্য পরিবর্তন এসেছে এ জেলায়। মানুষ এখন সাবলম্বী। আসা করি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নীলফামারীতে শিল্পে বিপ্লব ঘটবে। নীলফামারী উত্তরা ইপিজেড এর নির্বাহী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, উত্তরা ইপিজেড উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা দূর করছে। এখানে রাজনৈতিক, সামাজিক কোন ঝামেলা নেই এ কারণে মানুষ বিনিয়োগ করে যাচ্ছে?তিনি আরও বলেন, শিল্পায়নের ধারাবাহিকতায় উত্তরা ইপিজেড একটি জুয়েলারি কারখানা স্থাপন করতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স স্মাইল আর্টস কোম্পানি লিমিটেড। যেখানে ৩০০ বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, উত্তরা ইপিজেড সহ জেলার বিভিন্ন কারখানার ফলে নীলফামারীর সহ আশে পাশের জেলা সমুহের হাজারও মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। পাইপলাইনে গ্যাস আসলে এবং চিলাহাটি স্থলবন্দর চালু হয়ে এ অঞ্চলের শিল্পের ব্যাপক উন্নতি হবে আরও মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ইতিমধ্যেই নীলফামারীর চিলাহাটি দিয়ে ভারতে চলাচল করছে আন্তঃদেশীয় ট্রেন মিতালি এক্সপ্রেস। একই পথে চলছে পন্যবাহী ট্রেন। জোর আলোচনা চলছে চিলাহাটি স্থলবন্দর চালুর প্রসঙ্গ। আগামী জুনে পাইপলাইনে গ্যাসও আসার কথা আছে এই অঞ্চলে। ধারণা করা হচ্ছে, সব কিছু চালু হলে এই অঞ্চল হবে সমৃদ্ধ শিল্প এলাকা। যেখানে কর্মসংস্থানের কোন অভাব থাকবেনা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com