সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১৭ পূর্বাহ্ন

শ্রীমঙ্গলের মুসলিমবাগ সড়কটি খানাখন্দকে ভরে গেছে জনদুর্ভোগ চরমে, দ্রুত সংস্কার দাবি এলাকাবাসির

এহসান বিন মুজাহির (শ্রীমঙ্গল) মৌলভীবাজার :
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরতলীর মুসলিমবাগ আবাসিক এলাকার (সুনগইড়) রাস্তাটি সংস্কারের অভাবে খানাখন্দকে ভরে গেছে। কালিঘাট রোডের বাইতুল আমান জামে মসজিদের সামনে থেকে দক্ষিণ মুসলিমবাগ টমটমস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশের পিচঢালাই উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দের। বৃষ্টি হলেই সেখানে জমে থাকে বৃষ্টির পানি। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দুই গ্রামের দশ সহস্রাধিক মানুষের। সোমবার (২৮ মে) সরেজমিনে দেখা গেছে, কালিঘাট রোডস্থ বাইতুল আমান জামে মসজিদের সামনে থেকে মুসলিমবাগ আবাসিক এলাকার (গাংপার) টমটম স্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কটির প্রায় অধিকাংশের পিচঢালাই ও ইট-খোয়া উঠে খানাখন্দে ভরে গেছে। দুই পাশ ভেঙে সংকুচিত হয়ে গেছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ মুসলিমবাগ ও গাজিপুর এলাকার প্রধান সড়কের এমন বেহাল দশায় অসুস্থ ব্যক্তি, গর্ভবর্তী নারী, স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ এবং পথচারীদের দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে এ রাস্তাটির সংস্কার না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের প্রতি এলাকাবাসির চরম ক্ষোভ এবং অসন্তুষ দেখা দিয়েছে। গাজিপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ আফসার মিয়া বলেন, পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গল শহরতলীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা মুসলিমবাগ। জনপ্রতিনিধিদের জন্য এই এলাকাটি বিশাল ভোট ব্যাংক। কিন্তু মুসলিমবাগ এবং গাজীপুর এলাকাবাসির যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল দশা। যার ফলে স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ সর্বস্তরের লোকজনের যাতায়াতে নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও রিক্সা এবং অটো ড্রাইভার গাজিপুর টু কালিঘাট রোড আসতে রাজি হয় না। তখন কোনো উপায় না পেয়ে পায়ে হেটেই শহরে আসতে হয় বা শহর থেকে এলাকায় যেতে হয়। কোনো গুরুতর রোগী নিয়ে সময়মতো শ্রীমঙ্গল সরকারি হাসপাতাল পর্যন্ত পৌছানোটাও ভাগ্যের ব্যাপার। জনপ্রতিনিধিদের কাছে একটাই চাওয়া অন্ততপক্ষে এলাকার অসুস্থ মানুষ, শিক্ষার্থী এবং বয়োবৃদ্ধদের কথা চিস্তা করে প্রায় ১১ বছর আগে পাকা করা এই পিচঢালা রাস্তাটি অতি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সংস্কার করুন। খানাখন্দে ভরে গেছে কালিঘাট রোড টু মুসলিমবাগ (গাংপার) এলাকার রাস্তা। সংস্কার কবে নাগাদ হবে কেউ বলতে পারছেন না। মুসলিমবাগের রাস্তাটি যেনো হয়ে আছে অভিভাবকহীন। আর কতদিন ধরে ভাঙ্গাচোরা রাস্তা দিয়ে জনসাধারণ চলাচল করবেন এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সকলের কাছে। অনেকটা ক্ষোভে কথাগুলো বলছিলেন শ্রীমঙ্গল শহরতলীর মুসলিমবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মোঃ শামীম মিয়া। একমাত্র স্থানীয় এমপি মহোদয়ই আমাদের ভরসা। নতুবা মনে হয় না কেউ এ রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নিবেন। এ কথাগুলোও যোগ করেন তিনি। পথচারি রঞ্জন দেবনাথ বলেন, রাস্তাটি পাকা হয়েছে প্রায় ১২বছর হবে। কিন্তু এরপর আর কেউ সংস্কার করেছেন কিনা স্মরণ হচ্ছে না। সংস্কার না হওয়ার কারণে এই ভাঙা রাস্তায় পথচারীরা প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। সোহরাব ইসলাম বিপ্লব নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, এই রাস্তাটি সংস্কার করার যেনো কেউ নাই। বহু কষ্ট হয় এই ভাঙ্গা সড়ক দিয়ে চলাফেরা করা। একই কথা বলেন সাইফ আল সাব্বির নামের এক তরুণ। গাজিপুর, মুসলিমবাগ এলাকার এরকম অসংখ্য বাসিন্দা এবং পথচারী প্রত্যেক দিন এই পথ দিয়ে চলাচলের সময় ক্ষোভে নানা মন্তব্য করে থাকেন বলে জানান স্থানীয়রা। জনদুর্ভোগ দূরীকরণে রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন মুসলিমবাগ ও গাজিপুর এলাকাবাসি। স্থানীয়রা বলেন, মুসলিমবাগ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারাভাবে খানাখন্দকে জনসাধারনের চলাচলে প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তা সংস্কারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) শ্রীমঙ্গল অফিস সুত্রে জানা যায়, পৌর শহরের কালিঘাট রোডস্থ কবরস্থান এর সামনে থেকে মুসলিমবাগ-গাজিপুর অভিমুখী এ রাস্তাটি এলজিইডি বিভাগ থেকে পাকা করা হয়। ২০১১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পাকা রাস্তার নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন সাবেক চিপ হুইপ ও অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব উপাধ্যক্ষ ড. মোঃ আব্দুস শহীদ এমপি। বাস্তবায়নে ছিলো এলজিইডি শ্রীমঙ্গল। নির্মাণের পর আজ পর্যন্ত সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ ওঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, রাস্তাটি মূলত নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার কারণেই আজ রাস্তার এই বেহাল অবস্থা। রাস্তা নষ্ট হওয়ার আরও বড় একটি কারণ হলো ধারণ ক্ষমতার অধিক লোডেট যানবাহন চলাচল। ৬নং আশিদ্রোন ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো: আব্দুল আলী বলেন, এ রাস্তাটি এলজিইডির অধিনে। আমি এ ওয়ার্ডের সদস্য হলেও এ রাস্তাটি করার সুযোগ ও বরাদ্দ আমার নেই। তবে আমি এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-কে আবগত করেছি। তিনি আরও বলেন, আমি গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরই মুসলিমবাগসহ আমার ওয়ার্ডের সকল কাচা রাস্তা ইটসলিং করার জন্য আমার পরিষদে আবেদন করে রাখি এবং বিভিন্ন রাস্তার কাজও শুরু করেছি। শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৬ নং আশিদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নরেন্দ্র প্রসাদ বর্ধন (জহর) বলেন, পাকা রাস্তাটি নির্মাণের পর দুইবার রিপিয়ারিং করেছি। এলজিইডির উদ্যোগে এ রাস্তা মোরামত করা হয়েছে। আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রাস্তাটি পুনরায় সংস্কারের জন্য এলজিইডির কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। অনুমোদন হওয়ার পরই রাস্তা সংস্কার কাজ শুরু হবে। এব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইউসুফ হোসেন খান এর সাথে ২৯ মে (সোমবার )বেলা ১২টায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করে মুসলিমবাগ সড়কের সংস্কার কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একটি মিটিং-এ আছি, মিটিং শেষ হলে আপনাকে কল করবো। পরবর্তীতে বিকেল সাড়ে ৪টায় পুনরায় মুঠোফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। মুসলিমবাগ রাস্তা বেহাল দশা, সংস্কারের কোনো উদ্যোগ আছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় বলেন, মুসলিমবাগ টু গাজিপুর রাস্তাটি গত দুই বছর আগে এলজিইডি থেকে মেরামত করা হয়েছে। সাধারণত সড়ক নির্মাণের পাঁচ বছরের মধ্যে রাস্তা আর সংস্কার করা হয় না। প্রতি ৫ বছর পর পর এলজিইডি থেকে রাস্তা মেইনটেন্স এর জন্য বরাদ্দ দেয়। আর সংস্কার উপযোগী সড়কের তুলনায় বরাদ্দ কম। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৫ বছর পর পর রাস্তা মেরামতের জন্য এলজিইডি থেকে ৭৫টির অনুমোদন দেয়, অথচ মেরামতের তালিকায় যুক্ত হয় ১০০টি, তখন বাদ পড়ে যায় ২৫টি। আমরা মোরামতযোগ্য সকল রাস্তার তালিকা করেছি। তুলনামূলক যে রাস্তাটি বেশি অনুপযোগি সে রাস্তাটি আগে সংস্কার করা হবে। আশা করছি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সব বেহাল সড়কই সংস্কার করা হবে। তিনি আরও বলেন, মুসলিমবাগ রাস্তাটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন চলাচল। ইউনিয়ন সড়কে ৮ দশমিক ২ টন এবং গ্রামীণ সড়কে ৫ টনের বেশি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে এর চেয়ে অধিক ওজনের যানবাহন চলাচল করে। বিশেষ করে বালুর গাড়ি, ইটের গাড়িসহ ভারি যানবাহন চলাচল করায় রাস্তাটি নষ্ট হয়ে গেছে। কারণ এ রাস্তাটি এতো শক্তিশালী নয় যে এসব ভারি যানবাহন চলচল করবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com